তাহেরপুত্র বিপ্লব

‘আমার চেয়ে বড় খারাপ লোক এ জেলাতে হয় নাই, হবে না’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: ০৭:৪৭ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এক প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে এএইচএম আফতাব উদ্দিন বিপ্লবের দেওয়া বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর দাবি, বহিরাগতদের এনে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে ভোটের পরিবেশ অস্থিতিশীল করা হচ্ছে।

বক্তব্যদাতা বিপ্লব লক্ষ্মীপুর পৌরসভার আলোচিত সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহেরের বড় ছেলে। তিনি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতায় প্রাণভিক্ষা পান।

প্রায় ১১ মিনিটের একটি ভিডিও বক্তব্য প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ভিডিওটি বিপ্লব তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতেও পোস্ট করেছেন। বক্তব্যের একপর্যায়ে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘কেউ ভয় পাবেন না। অল্প পানিতে মাছ তিরতিরাই। ধৈর্য ধরেন। আমার চেয়ে বড় খারাপ লোক এ জেলাতে হয় নাই, হবেও না। আমিও মানুষের ভালোবাসার জন্য দুয়ারে দুয়ারে হাঁটি। জনগণই বড় শক্তি। ভোটের মাধ্যমে মানুষ জবাব দেবে। আজকের হামলার ঘটনার জন্য একটা কথা বলি। আমি প্রত্যেকদিন এক ঘণ্টা করে এখানে আসবো। যতক্ষণ পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ না হবে, কথা দিচ্ছি আমি এখান থেকে যাবো না। ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবো। আমি দায়িত্ব নিয়েছি, তেওয়ারীগঞ্জ আমি ছাড়বো না। ভোটেরদিন পর্যন্ত আমি তেওয়ারীগঞ্জে থাকবো। আমি দেখবো কে কত বড় সন্ত্রাস হয়েছেন। এটার জবাব ভোটের ব্যালটে দেবো, ইনশাআল্লাহ। যে আচরণ করেছেন তা ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দেবো’।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের নতুন তেওয়ারীগঞ্জ বাজারে আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ইবনে হুছাইন ভুলুর পক্ষে গণসংযোগকালে দেওয়া বক্তব্যে বিপ্লব এসব কথা বলেন।

এসময় প্রার্থী ভুলুও উপস্থিত ছিলেন। প্রার্থী ভুলু তার (বিপ্লব) ভগ্নিপতি (খালাতো বোনের স্বামী)। বিপ্লব সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর বড় ভাই।

অভিযোগ রয়েছে, গণসংযোগকালে অটোরিকশা প্রতীকের প্রার্থী ও তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন বোরহান চৌধুরীর লোকজন আনারস প্রতীকের প্রার্থীর গণসংযোগে হামলা করেন। ওই হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বিপ্লব রেগে যান। পরে তিনি উপস্থিত জনগণের সামনে মাইকে বক্তব্য দেন।

এ বিষয়ে এএইচএম আফতাব উদ্দিন বিপ্লব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একটি প্রতিযোগিতা, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চান। তিনি চান ভোটে সৎ ও যোগ্য লোক নির্বাচিত হোক। তাহলে জনগণ সেবা পাবে ও সরকারের ভাবমূর্তিও বাড়বে। আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি তেওয়ারীগঞ্জে ভুলু ভাইয়ের নির্বাচনী গণসংযোগে যাই। আমাদের শান্তিপূর্ণ গণসংযোগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন হামলা চালায়। আমার গাড়িতেও হামলা চালিয়েছে। এজন্য রেগে গিয়ে কথাগুলো বলেছি। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার মতো কোনো উদ্দেশ্য নেই।’

আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ইবনে হুছাইন বলেন, ‘অটোরিকশার প্রার্থী বোরহান চৌধুরীর লোকজন আমাদের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে। তখন বিপ্লবের গাড়িতে হামলা করা হয়। এতে বিপ্লব একটু রেগে গিয়ে বক্তব্যে কথাগুলো বলেছে। হামলার ঘটনায় আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেবো।’

তাহেরপুত্র বিপ্লব/ ‘আমার চেয়ে বড় খারাপ লোক এ জেলাতে হয় নাই, হবে না’

আক্তার হোসেন বোরহান চৌধুরী বলেন, ‘বিপ্লব বহিরাগত। তিনি ভুলুর গণসংযোগে এসে উচ্ছৃঙ্খল কথাবার্তা বলে বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্য শুনে স্থানীয় লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। আমার কোনো লোক তাদের ওপর হামলা করেনি। হামলার ঘটনা ঘটেছে বলেও শুনিনি। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এসব বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দেবো।’

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা স্বপন কুমার ভৌমিক বলেন, বিষয়টি জানা নেই। কেউ আমাকে জানাননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ভুলু ও বোরহান ছাড়াও তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নে আরও ছয়জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আল মাহমুদ ইবনে হুছাইন (মোটরসাইকেল), মনির মাহমুদ নোবেল (টেলিফোন), উসমান হোসেন (চশমা), মাহফুজুর রহমান (ঘোড়া), শাহেদা আক্তার (রজনীগন্ধা) ও সবুজের রহমান (ঢোল)। আগামী ২৮ এপ্রিল তেওয়ারীগঞ্জসহ সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ, দালালবাজার, লাহারকান্দি ও দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আইনজীবী (সাবেক পিপি) নুরুল ইসলামকে লক্ষ্মীপুর শহরের বাসা থেকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। বহুল আলোচিত নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় ২০০৩ সালে তাহেরপুত্র বিপ্লবসহ পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

বিপ্লব ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর আবু তাহের তার ছেলে বিপ্লবের প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। ওই বছরের ১৪ জুলাই তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান তার সাজা মওকুফ করেন। পরের বছর আরও দুটি হত্যা মামলায় (কামাল ও মহসিন হত্যা) বিপ্লবের যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১২ সালে ফিরোজ হত্যা মামলা থেকেও বিপ্লবের নাম প্রত্যাহার করা হয়। ২০১৪ সালের ১ আগস্ট কারাগারে থেকে বিয়ে করে দেশব্যাপী ফের আলোচনায় আসেন বিপ্লব। অবশেষে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর তিনি কারামুক্ত হন।

কাজল কায়েস/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।