উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্জ্য থেকে উৎপাদন হচ্ছে বিদ্যুৎ

সায়ীদ আলমগীর
সায়ীদ আলমগীর সায়ীদ আলমগীর কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৯:২২ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। উৎপাদনে আসার মধ্য দিয়ে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যুগে বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে নাম লেখালো বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে প্রতিদিন সাড়ে ১১ টন বর্জ্য ব্যবহার হচ্ছে। বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ৪০-৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ। পাশাপাশি পরিশোধিত হচ্ছে ১২০০ লিটার ডিস্টিল্ড ওয়াটার ও ১৫০০ কেজি অ্যাশ (ছাই)।

উখিয়া-টেকনাফের ৩৩ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ ধরনের প্রকল্প বাড়লে ক্যাম্পজুড়ে পরিবেশ দূষণ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে দাবি পরিবেশবাদীদের।

এটি একটি পাইলট প্রকল্প উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খা বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো প্রকল্পটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাস্তাবয়ন করা হচ্ছে। যাত্রার পরপরই সুফল পেয়েছি। দাতা সংস্থা এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্তে পরবর্তী সময়ে এ প্রকল্প আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয় প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা। তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে ধ্বংস করা হয় প্রায় আট হাজার হেক্টর বনভূমি। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর পয়ঃজৈব ও ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা করতে জরুরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (অমনি প্রসেসর) বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার।

এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় ২০২১ সালে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্ল্যান্টটি পুরোপুরিভাবে চালু রাখতে হলে প্রতিদিন ৬ টন ফেকাল স্লাজ, ৫ টন জৈব বর্জ্য ও ৫০০ কেজি সিঙ্গেল লেয়ার প্লাস্টিক প্রয়োজন। যেহেতু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে, সেহেতু প্রকল্পটিতে মাত্র ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করা সম্ভব।

বিদ্যুৎ, রোহিঙ্গা, কক্সবাজার, উন্নয়ন-প্রকল্প, পরিবেশ, বাংলাদেশ, মিয়ানমারউখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্জ্য থেকে উৎপাদন হচ্ছে বিদ্যুৎ

তিনি আরও বলেন, ৬০-৭০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও এখন প্রতিদিন ৪০-৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ, ১০০০-১২০০ লিটার পানি এবং ১২০০-১৫০০ কেজি অ্যাস উৎপাদন হচ্ছে। যদি প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু করা যায়, তাহলে এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাইরে সরবরাহ করার পাশাপাশি উৎপাদিত পানি বিক্রি করেই মাসিক ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব। একইসঙ্গে পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বর্তমানে এখানে প্রায় এক লাখ মানুষ সরাসরি সম্পৃৃক্ত থেকে উপকার পাবেন বলেও উল্লেখ করেন এ প্রকৌশলী।

অমনি প্রসেসর প্রকল্পের প্ল্যান্ট ইনচার্জ মোহাম্মদ আলীউল হক বলেন, এটি এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে মানুষের পয়ঃবর্জ্য এবং পচনশীল ও অপচনশীল ময়লা-আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ, ডিস্টিল্ড ওয়াটার এবং অ্যাশ উৎপাদন করা হয়। প্লাস্টিকের ক্ষতিকারক কার্বন ও গ্যাস পরিবেশসহ আমাদের সবার জন্য হুমকি। কিন্তু অমনি প্রসেসরের মাধ্যমে প্লাস্টিক থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তাও সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়ায়।

তিনি বলেন, সেনেগাল ও ভারতের পর তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে স্থাপন করা হয়েছে প্ল্যান্টটি। প্ল্যান্টটি সম্পূর্ণ অটোমেটিক হওয়ায় ম্যান পাওয়ার খুবই কম লাগে। এছাড়া প্ল্যান্টটি চালাতে বাইরের কোনো বিদ্যুৎ লাগে না। উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকেই এটি চালানো হয়। এটিকে বাণিজ্যিকভাবেও ব্যবহার করা গেলে আয় করা সম্ভব বলে দাবি করেন তিনি।

কক্সবাজারের পরিবেশকর্মী ওয়াহিদ রুবেল বলেন, বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত প্লাস্টিক থেকে শুরু করে জৈব, অজৈব, পয়ঃবর্জ্য পরিবেশ ও প্রতিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ প্রকল্পে প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য ব্যবহার হয় তা পরিবেশের ক্ষতি কিছুটা কমিয়ে আনা যাবে। তবে তাও যথেষ্ট নয়। এ ধরনের প্রকল্প আরও বাড়ানো যায় কি না তা ভেবে দেখা দরকার।

প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম মুক্তাদির বলেন, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এডিবির সহযোগিতায় জরুরি সহযোগিতা প্রকল্পের আওতায় ‘অমনি প্রসেসর’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এটি সরাসরি পরিবেশবান্ধব প্রকল্প। এখান থেকে যা নির্গত হবে তার প্রতিটি জিনিসই পরিবেশবান্ধব।

তিনি আরও বলেন, চ্যালেঞ্জ হলো প্রকল্পটি অপারেশনের জন্য দক্ষ লোকবল। তারপরও আমরা এর ফলাফল দেখছি। এর আউটপুট, ইনপুট কী হচ্ছে, কী পরিমাণ পরিবেশে প্রভাব ফেলছে তা টেস্ট করা হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে পরবর্তী প্রকল্পের জন্য প্রস্তাব করা হবে।

সায়ীদ আলমগীর/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।