বন্ধুর প্রচারণায় এমপি, মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেন প্রার্থী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শেরপুর
প্রকাশিত: ১০:৪২ এএম, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

শেরপুরে আসন্ন ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শেরপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলামের প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা ও তার বন্ধুর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার অভিযোগে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম আমিরুজ্জামান লেবু।

সোমবার (২২ এপ্রিল) জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর তার নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে এসএম আমিরুজ্জামান লেবু বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক করতে দলীয় প্রতীক না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একইসঙ্গে এমপি ও মন্ত্রীদের সকল প্রকার প্রচার প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। কিন্তু শেরপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলাম ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায়কে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু পরিচয় দিয়ে তার পক্ষে সরাসরি প্রচারণা চালাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, নির্বাচন শুরুর আগেই উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ৫২ ওয়ার্ডের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের শেরপুর জেলা শহরের তার নিজ বাসভবনে সামনে খেলার মাঠে বিশাল প্যান্ডেলে ডেকে নিয়ে জনসভা করে প্রার্থীর পক্ষে হাত উঁচিয়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। এ সময় তার পক্ষে নির্বাচন করতে অঙ্গীকার করানোসহ সকলকে যাতায়াতের খরচ ও খাবার প্যাকেট প্রদান করেন। যে দৃশ্যগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের পর ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য তার বন্ধু চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি প্রচারণা চালানোয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এমন আশঙ্কায় আমি আমার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।

তবে এ ব্যাপারে শেরপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলাম সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বাসায় সকল নেতাকর্মী এসেছিলেন। তারা আমার পরিবারের সদস্য। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমি যা বলেছি, সবই আনঅফিসিয়াল।

আগামী মে মাসে ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদের ষষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে চেয়ারম্যান পদে সাতজনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। এবারের নির্বাচনে কোনো দলীয় প্রতীক না থাকায়, সকল প্রার্থীই স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ঝিনাইগাতী উপজেলায় সাত প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকলেও ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়ের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান করে প্রচারণা চালাচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এডিএম শহীদুল ইসলাম। ঈদের আগে বিভিন্ন ইফতার মাহফিল এবং ঈদ পরবর্তী সময়ে পুনর্মিলনী ও মতবিনিময় সভায় তিনি নিজের বন্ধু পরিচয় দিয়ে বিশ্বজিৎ রায়ের পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হাত তুলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করছেন।

স্থানীয় নেতা কর্মীরা বলছেন, নির্বাচন প্রতিযোগিতা পূর্ণ করতে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে নানাবিধ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল দলীয় ও স্বতন্ত্র এমপিদের। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া যাবে না। কিন্তু আমাদের এমপি বিষয়টি মানছেন না। উপজেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখতে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন তিনি। এছাড়া তিনি শুধু মৌন সমর্থনই নয়, প্রকাশ্যে তার বন্ধু পরিচয় দিয়ে শ্রী বিশ্বজিৎ রায়ের পক্ষে জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। এমনকি দুই হাত তুলে সবাইকে জোরপূর্বক ওয়াদাও করাচ্ছেন তিনি।

এদিকে এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল হক বলেন, কোনো সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এবং সরকারের উপকারভোগী কোনো কর্মকর্তা নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নিলে তা নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে, আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ইমরান হাসান রাব্বী/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।