ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় গাইবান্ধার কৃষক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৩:৪৭ পিএম, ০৭ মে ২০২৪

মাঠে ঢেউ খেলছে কৃষকের সোনালি ধান। পেকে যাওয়ায় এরইমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে পাকা ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকবে কি না সেই চিন্তায় কৃষকের কপালে ভাঁজ পড়েছে।

কেননা এখন প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর আকাশে কালো মেঘ জমছে। গত দুদিন সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে শিলা পড়া শুরু হলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেইসঙ্গে রয়েছে উজানের বৃষ্টিতে নদ-নদীতে পানি বেড়ে বন্যার ভয়। তাই নির্ঘুম রাত কাটছে গাইবান্ধার কৃষকদের।

সরেজমিন দেখা গেছে, ধানক্ষেতে কৃষকের সীমাহীন ব্যস্ততা। কেউ পাকা ধান কাটছেন, কেউবা মাড়াইয়ে ব্যস্ত। চাষি পরিবারের ছোট-বড় সবাই মিলে সেই ধান ঘরে তুলছেন।

কৃষিবিদরা বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষিনির্ভর জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম গাইবান্ধা। এ জেলায় চাষিরা অন্যান্য ফসল আবাদের পাশাপাশি ধানের আবাদ বেশি করেন।। বিশেষ করে ইরি-বোরো ধান এ অঞ্চলের কৃষকদের অর্থ জোগানের পাশাপাশি ভাতের জোগান দিয়ে প্রধান ফসলের জায়গা করে নিয়েছে। সে কারণেই বোরো আবাদে বাড়তি উদ্যোগ ও মনসংযোগ থাকে এ অঞ্চলের চাষিদের।

ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় গাইবান্ধার কৃষক

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবছর জেলায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর, গাইবান্ধা সদরে ২১ হাজার ৩০০ হেক্টর, পলাশবাড়ীতে ১১ হাজার ৮০৫ হেক্টর, সাদুল্লাপুরে ১৪ হাজার ৪০০ হেক্টর, গোবিন্দগঞ্জে ৩১ হাজার ১০৫ হেক্টর, ফুলছড়িতে ৮ হাজার ৩০০ হেক্টর এবং সাঘাটা উপজেলায় ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করা হয়েছে।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া গ্রামের কৃষক আরিফুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। ধান খুব ভালো হয়েছে। ধানে রং চড়েছে (পেকে গেছে)। আর এক সপ্তাহ পর কাটতে হবে। তবে জেলায় শ্রমিক সংকট রয়েছে। অনেক বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে। ধান কাটা নিয়ে খুব চিন্তার মধ্যে পড়ে গেছি।’

সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের গোয়াইলবাড়ী গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গতবছর এক বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ পড়েছিল দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু এবছর এক বিঘা জমির ধান কাটতে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা লাগছে। সবকিছুর দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধান কাটাতে কৃষিশ্রমিকেরও মজুরি বেড়েছে। সবমিলিয়ে ধান উৎপাদনে খরচ বাড়ছে।’

ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় গাইবান্ধার কৃষক

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পুরুনদহ গ্রামের কৃষক আসলাম মিয়া বলেন, ‘মাঠে বিঘায় বিঘায় ধান পাকে আছে। ধান কাটার লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যাও পাওয়া যাচ্ছে দাম দুইগুণ। নামা (নিচু) এলাকা একঘণ্টা টানা বৃষ্টি হলে অনেক জমির ধান তুলে যাবে। মেশিন দিয়ে ধান কাটা সম্ভব নয়। এ বিলের মাটি সব সময় ভিজে থাকে। পাকা ধান ঘরে তোলার জন্য বউ-ছোল নিয়ে রাতদিন কাজ করছি।’

একই এলাকার কৃষক ইসলাম মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাকা ধান জমিত থুয়ে (রেখে) ঘুম ধরে না। এই ধান সারা বছরের খাবার। খুব চিন্তায় আছি ধান ঘরোত তোলা নিয়ে।’

সাঘাটা উপজেলার পদুমশহর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম। এবার প্রায় সাড়ে ১১ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে পাওয়া যাবে কি না এ ভাবনায় তার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বলে জানান।

ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় গাইবান্ধার কৃষক

গাইবন্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, এবছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। প্রাকৃতিক তেমন কোনো দুর্বিপাক হয়নি। এজন্য জেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ধান পাকতে শুরু করেছে। পুরোদমে ধান কাটাও শুরু হয়েছে। তবে তাপপ্রবাহের কারণে ধান কাটার শ্রমিকের কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তির কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার মেশিনে ধান কাটতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।

এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।