টানা ৪২ বছর ধরে রোজা রাখা দিনমজুর ইনছান আলী এবার যাচ্ছেন হজে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ১২:২৮ এএম, ১৭ মে ২০২৪

কুড়িগ্রামে টানা ৪২ বছর ধরে রোজা রাখা দিনমজুর ইনছান আলী এবার যাচ্ছেন পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব। দিনমজুর ইনছান আলীর হজে যাওয়ার এমন খবরে খুশি স্বজনসহ প্রতিবেশীরা।

ইনছান আলী কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামের মৃত নছরউদ্দিন মুন্সির ছেলে। তার সম্পদ বলতে ১৪ শতক জমি ও বসতভিটা ছাড়া কিছু নেই। তার ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ে। ছেলেরাও দিনমজুর, যা দেয় তা দিয়ে চলে ইনছান আলীর সংসার। তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।

কথা হয় ইনছান আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার বাবা ছিল দরিদ্র। টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারেন নাই। বাবার স্বপ্ন ছিল তিনি আমাকে মাদরাসা পড়াবেন। কিন্তু অভাব অনটনের কারণে পড়াশোনা করা সম্ভব হয় নাই। পরে ৫ বছর তাবলীগে গিয়ে ধর্মশিক্ষা নেই। সেই থেকে টানা ৪২ বছর ধরে নামাজ রোজা পালন করে আসছি। আমার স্বপ্ন ছিল হজে যাওয়ার। নামাজের মোনাজাতে আল্লাহ পাকের কাছে প্রার্থনা করতাম আল্লাহ পাক আমাকে যেন হজ যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। অবশেষে মোনাজাত কবুল করেছেন। এক সহৃদয়বান ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরী আমার হজে পাঠানোর সার্বিক খরচ বহনের দায়িত্ব নেন। আল্লাহ পাক বাঁচিয়ে রাখলে আগামী ১০ জুন হজের উদ্দেশে রওয়ানা হবো।

তিনি আরও বলেন, টানা ৪২ বছরে কখনো রোজা রাখা ছাড়ি নাই। বছরের নির্দিষ্ট ৫ দিন বাদে সারা বছর রোজা রেখে এসেছি। অভাবের সংসারে রোজা রাখাও অনেক সময় কষ্টের হয়। কতদিন যে শুধু পানি খেয়ে রোজা রেখেছি। সেহরিতে খাবার না থাকায় মুড়ি, চিড়া কখনো কচু গাছ সেদ্ধ করে খেয়ে রোজা রেখেছি। যত কষ্টই হোক রোজা কিন্তু ছাড়িনি। ইফতারে কখনো চকলেট কখনো শুধু পানি কখনো আবার গাছের পাতা চিবিয়ে ইফতার করতাম। খোদার কাছে চোখের পানি ছেড়ে বলতাম খোদা আমাকে যতদিন হায়াত দিয়েছেন আমি যেন ততদিন রোজা রাখতে পারি।

টানা ৪২ বছর ধরে রোজা রাখা দিনমজুর ইনছান আলী এবার যাচ্ছেন হজে

ইনছান আলীর প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি ইনছান আলী চাচা প্রতিদিনই রোজা রাখেন। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক মানুষ। এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করেন না। চাচা দেখা হলেই হজে যাওয়ার কথা বলতেন। আল্লাহ ওনার নিয়ত কবুল করেছেন।

স্কুলশিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, অভাব অনটনের সংসারে থেকেও ইনছান আলী কখনও ধর্মবিমুখ হননি। টানা প্রায় ৪২ বছর ধরে রোজা পালন করে আসছেন। তার হজে যাওয়ার জন্য যিনি ব্যবস্থা করেছেন আমরা এলাকাবাসী তার কাছে কৃতজ্ঞ। আল্লাহ যেন তাকেও বেহেশত নসিব করেন সেই কামনা করছি।

ফজলুল করিম ফারাজী/জেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।