নির্বাচন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত, সেই কৌঁসুলিকে অপসারণের নির্দেশ
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দেকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জজ কোটের সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) আলমগীর মুন্সীকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বিষয়টি বুধবার (২২মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মুঠোফোনে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন শরীয়তপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল মান্নান। গত মঙ্গলবার (২১ মে) নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপসচিব আতিয়ার রহমানের সই করা একটি চিঠি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
নির্বাচন কমিশন, পালং মডেল থানা ও জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান উজ্জ্বলের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন শরীয়তপুর জজ কোটের সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলমগীর মুন্সী।
মঙ্গলবার (১৪মে) রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে নির্বাচনের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের তালিকা ও ভোট কেন্দ্রের তথ্য সংক্রান্ত গোপনীয় কিছু নথি নিয়ে যান সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দে। তিনি ওই নথিপত্র নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাইফুদ্দিন গিয়াসের সাথে কথা বলছিলেন। তখন সেই কক্ষে প্রবেশ করেন জিপি আলমগীর মুন্সী। ওই নথিগুলো তখন সরিয়ে রাখেন নির্বাচন কর্মকর্তা। এতে ক্ষুব্ধ হন জিপি আলমগীর মুন্সী।
বিষয়টি নিয়ে বুধবার (১৫ মে) বিকেলে নির্বাচন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাওয়ার পথে আলমগীর মুন্সী তার গতিরোধ করে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে নির্বাচন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দে বাদী হয়ে আলমগীর মুন্সির বিরুদ্ধে সদরের পালং মডেল থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় রোববার (১৯ মে) আলমগীর মুন্সি জামিন পান।
এদিকে পুরো ঘটনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনকে জানায়। এরপর নির্বাচন কমিশন জিপির পদ থেকে আলমগীর মুন্সিকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়াও সিদ্ধান্তটি কার্যকর করা জন্য আইন সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৩–এর বিধি ৮০ (ক) অনুযায়ী নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হুমকি, ভীতি প্রদর্শন ও বাধা দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আলমগীর মুন্সি একজন সরকারি কর্মচারী। আচরণে তার আরও সংযত হওয়া উচিত ছিল। তিনি যে আচরণ করেছেন, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি জিপি পদে থাকার অযোগ্য বলে নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এই কার্যক্রমের জন্য শরীয়তপুর জেলার জিপি আলমগীর মুন্সিকে বর্তমান জিপি পদ হতে অপসারণের জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা জানা যায়, ২০০৯ সালে আলমগীর মুন্সি আইন মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত জিপি পদে নিয়োগ পান। ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি ভারপ্রাপ্ত জিপি হন। এরপর ২০১১ সালে তাকে জিপি পদে নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীর মুন্সি বলেন, নির্বাচন কমিশন আমাকে জিপির পদ হতে অপসারণের কোনো সিদ্ধান্ত দিয়েছে কি না তা আমি জানি না। তাছাড়া আমি কোনো নির্বাচন কর্মকর্তার সাথে দুর্ব্যবহার করিনি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
বিধান মজুমদার অনি/এমআরএম