২৫ বছর পর দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করলেন ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ ফিঙে লিটন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ১২:২৬ পিএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মানুষ চেনে ‘ফিঙে লিটন’ পরিচয়ে। নাম আনিসুর রহমান লিটন। ১৯৯৯ সালে অস্ত্র মামলায় দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। টানা আড়াই দশক দেশের বাইরে থাকলেও যশোরের মানুষের কাছে এখনো আতংকের নাম ‘ফিঙে লিটন’। দেশের বাইরে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতেন যশোরের নানা সিন্ডিকেট। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও একাধিক খুনের ঘটনায় ফিঙে লিটনের নাম জড়িয়েছে তার অনুসারীরা। কিন্তু পর্দার আড়ালে থাকায় আইনের জালে তাকে আটকানো যায়নি।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বদলে গেছে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট। এই সুযোগে দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরেছেন আনিসুর রহমান লিটন ওরফে ফিঙে লিটন। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গোপনীয়তার মধ্যদিয়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফারজানা ইয়াসমিনের আদালতে অস্ত্র মামলায় আত্মসমর্পণ করেন তিনি। আদালতের বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আনিসুর রহমান লিটন ওরফে ফিঙে লিটন যশোর শহরের বারান্দি মোল্লাপাড়া এলাকার বদর উদ্দিনের ছেলে।

এ বিষয়ে যশোর কোর্টের ইন্সপেক্টর রোকসানা খাতুন জানান, ১৯৯৯ সালে অস্ত্র আইনের একটি মামলায় আনিসুর রহমান লিটনের ১০ বছর সাজা হয়। এরপর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। ওই মামলায় বুধবার তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন সাংবাদিকদের জানান, বিচারকের আদেশ প্রাপ্তির পর আনিসুর রহমান ওরফে ফিঙে লিটনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের সিডিআর মতে, তার বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। অন্যান্য যেসব মামলার কথা শোনা যায়, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

জানা যায়, যশোরের সব শ্রেণিপেশার মানুষ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আলোচিত নাম ‘ফিঙে লিটন’। ১৯৯৯ সালে অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। এরপর ভারত, নেপাল, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও কাতারে অবস্থান করেছেন। জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হলেও গ্রহণ করেছেন নেপালি পাসপোর্ট। তিনি আড়াই দশক ধরে দেশের বাইরে থাকলেও তার নামে ত্রাসের রাজত্ব ছিল যশোরে। তার দাপট কাজে লাগিয়ে অনুসারীদের চাঁদাবাজি, দখল, চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ছিল ওপেন সিক্রেট। তবে পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ানোয় সরাসরি কোনো অপরাধে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ করতে পারেনি আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। তার নামে একটি অস্ত্র মামলা ছাড়া আর কোনো মামলা আছে কিনা সেই তথ্যও দিতে পারেনি পুলিশ।

দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকলেও আনিসুর রহমান লিটন আধিপত্য বজায় রেখেছেন তার এলাকা শহরের মোল্লাপাড়া, বারান্দিপাড়া ও মণিহার এলাকায়। নিজে এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও ২০০৯ সালের পর শেখ হাসিনার সরকারের আমলে পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় করেছিলেন। ২০২১ সালে যশোর পৌরসভা নির্বাচনে ১ ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ফিঙে লিটনের ভাই সাইদুর রহমান রিপন ওরফে ডিম রিপন। তার বিজয়ের নেপথ্যে ফিঙে লিটনের প্রভাব ছিল বলেও জনশ্রুতি আছে।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন ফিঙে লিটনের স্ত্রী সদর উপজেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক ফাতেমা আনোয়ার। তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে সাবেক এমপি নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে নির্বাচনের আগে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তাকে যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ফিঙে লিটন দেশের বাইরে থাকলেও দেশে পরিবহন ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন স্ত্রী ফাতেমা আনোয়ারের নামে। লিটন ট্রাভেলস নামে তাদের পরিবহন ব্যবসা রয়েছে।

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে ফেরেন ফিঙে লিটন। বুধবার খুবই গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে ১৯৯৯ সালের অস্ত্র মামলায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফারজানা ইয়াসমিনের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মিলন রহমান/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।