খুঁড়িয়ে চলছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো
অডিও শুনুন
করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) মহামারির মধ্যে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। সামাজিক অনুষ্ঠান কমে যাওয়া ও অনলাইনভিত্তিক ইভেন্ট বেড়ে যাওয়ায় এখনো হালে পানি আসেনি সংশ্লিষ্টদের। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ, অফিস স্পেস কমানোসহ নানান পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তারা।
করোনার ধাক্কায় গত দেড় বছরে বন্ধ হয়েছে অনেক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম, আবার অনেকের পরিধি কমেছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনায় তাদের প্রায় ৮শ কোটি টাকার কাজ হাতছাড়া হয়েছে। চলতি বছরের জুলাইয়ের পর সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করলে ফের কাজ পাওয়া শুরু করেন তারা। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুরোদমে কাজ শুরু না হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ পাচ্ছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান কুল এক্সপোজারের প্রধান নির্বাহী (সিইও) ইরশাদুল হক টিংকু জাগো নিউজকে বলেন, সবাই যোগাযোগ শুরু করেছেন। কাজ শুরু হবে এমন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। সবাই গোছাচ্ছে। অনেকেই কিছু কাজ পেয়েছে। অনেকেই কোটেশন দিয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায় আমরা গোছাচ্ছি। পুরোদমে কাজ শুরু হতে আরও মাস দুয়েক সময় লাগবে।
অনেক প্রতিষ্ঠানের পাওনা টাকা এখনো ফেরত পাওয়া যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, কাজ শুরু হলে তখন আবার টাকা পাওয়া শুরু হবে।
গ্রেটেড মার্কেটিং সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সারোয়ার মোর্শেদ আজম জাগো নিউজকে বলেন, বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ইভেন্টের কাজ হয়। গত বছর ৫শ কোটি টাকার কাজও হয়নি। এবছর দীর্ঘ সময় সবকিছু বন্ধ ছিল। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বড় প্রতিষ্ঠান টিকে থাকলেও তারা কর্মী ছাঁটাই করেছে।
বিয়ে-জন্মদিন থেকে শুরু করে ট্রেড-শো, করপোরেট বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার দায়িত্ব পড়ে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মগুলোর ওপর। দেশি-বিদেশি কোম্পানি, এনজিও, সরকারি পণ্য ও সেবার ব্র্যান্ডিং, প্রদর্শনী, সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করে এসব প্রতিষ্ঠান। বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে শুধু ঢাকাতেই গড়ে উঠেছে এমন প্রায় ৪শ প্রতিষ্ঠান। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ইভেন্টপ্রতি বাজেট কমছে বলে জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
করোনায় ব্যবসা মন্দা থাকায় অনেকেই কর্মচারী ছাঁটাই করেছেন। তবে কাজ ফের শুরু হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান আবারও লোক খুঁজছে বলে জানা যায়।
কুল এক্সপোজারের সিইও ইরশাদুল হক টিংকু বলেন, আমার যে লোকজন ছিল, তারা এখন আর নেই। করোনার মধ্যে তাদের কাজ ছাড়তে হয়েছে। যে জনবল ছিল তার চার ভাগের একভাগও নেই। আগে ১৫ জন লোক ছিল এখন সেটা কমে অর্ধেকে এসেছে। পাশাপাশি আমার অফিস স্পেসও কমেছে। কিন্তু এখন আবারও ইভেন্ট আসছে। লোকজন হায়ার করতে হবে। ফিক্সড লোক এখন কারও পক্ষে রাখা সম্ভব না।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড জব ইনফরমেশন নামে ফেসবুক গ্রুপে ৫৭ হাজার সদস্য রয়েছে। গ্রুপটি ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘ বিরতির পর অনেকেই ব্র্যান্ড প্রমোটার, এক্সিকিউটিভ, টেকনিশিয়ান, সেলস পারসনসহ বিভিন্ন চাকরির পোস্ট দিচ্ছেন। এসব পোস্টের নিচে চাকরিপ্রার্থীরা মন্তব্যও করছেন। ফেসবুক থেকেই এসব কর্মী সোর্সিং বা জোগাড় করছেন বলে জানান ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংশ্লিষ্টরা।
বাণিজ্যিকভাবে দেশে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের যাত্রা ২০০০ সালের শুরুর দিকে। গত দুই দশকে এটা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে করোনার কারণে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা।
এসএম/এআরএ/এএ/জেআইএম