মেট্রোরেলের হাওয়া
প্রাণ ফিরেছে বেনারসিপল্লিতে
টানা দুই বছর ছিল করোনার প্রকোপ। অন্যদিকে মেট্রোরেল নির্মাণকাজের জন্য মিরপুর-আগারগাঁও সড়ক ও ফুটপাতের অবস্থা ছিল শোচনীয়। ডিসেম্বরের শেষে চালু হয় মেট্রোরেল। মেট্রোরেল না থামলেও এর কল্যাণে সংস্কার হয়েছে মিরপুর এলাকার প্রধান সড়ক, প্রশস্ত হয়েছে ফুটপাত। আর তাতেই ব্যবসা বেড়েছে মিরপুরের বেনারসিপল্লির। বিয়ের মৌসুমেও বিক্রি ভালো হওয়ায় বিক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটেছে। আর যানজটমুক্ত কেনাকাটায় খুশি ক্রেতারাও।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন অনেকটাই বদলে গেছে দৃশ্যপট। মিরপুর এলাকার স্টেশনগুলো খুলে দেওয়া হলে উত্তরা ও আগারগাঁও থেকে আরও বেশি ক্রেতা আসবেন।
জানা গেছে, আগারগাঁও, উত্তরা, পল্লবী স্টেশনের পর আরও দুটি স্টেশন খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ১৮ ফেব্রুয়ারি উত্তরা সেন্টার স্টেশন ও ১ মার্চ মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন খুলে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: চালু হচ্ছে উত্তরা সেন্টার ও মিরপুর ১০ নম্বর স্টেশন
সম্প্রতি মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার বেনারসিপল্লি ঘুরে দেখা যায়, নানা রং ও নকশার শাড়ি সাজাতে ব্যস্ত দোকানিরা। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে আকর্ষণীয় সব ডিজাইনের শাড়ি, লেহেঙ্গা ডিসপ্লে ডলে পরাচ্ছেন তারা।
ইব্রাহিমপুর থেকে শাড়ি কিনতে আসা তাহিয়া নাসরিন বলেন, এতদিন রাস্তার অবস্থা খারাপ থাকায় অনেকেই বেইলি রোড বা গুলশান চলে যেতো। এখন রাস্তা ভালো হয়েছে, এছাড়া বিয়ের সিজন চলছে এ কারণে বেনারসিপল্লিতে প্রাণ ফিরেছে।
তিনি বলেন, শুধু বিয়ের শাড়ি নয়। ঘরে পরা ও পার্টির শাড়ির ভালো সংগ্রহ আছে এখানে। আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে কিছু শাড়ি কিনতে এসেছি। কিন্তু বরাবরের মতোই বিক্রেতারা দাম বেশি চাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ক্রেতাশূন্য বেনারসি পল্লি, মজুরি দিতে ঋণ করছেন ব্যবসায়ীরা
বেনারসিপল্লির কয়েকজন দোকানি জানান, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিয়ের সিজন থাকে। ক্রেতাদের সাধ ও সাধ্য বিবেচনায় করে এবার দেশি ও ভারতীয় ঐতিহ্যের বাহারের শাড়ি নিয়ে এসেছেন। বিয়ের জন্য এখন স্টোন ও জরি বসানো বিভিন্ন শাড়ি, কাতান, কাঞ্চিপুরাম, জামেবার, স্বর্ণকাতান, চান্দেরি, অগণ্য কাতান, পাটোলা ও সিল্কের শাড়ির চাহিদা বেশি। দুই হাজার থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকার শাড়িও পছন্দ করছেন ক্রেতারা।
মিরপুর বেনারসি কুটিরের বিক্রয়কর্মী শাহিন জানান, ক্রেতারা আসছেন। বিক্রিও হচ্ছে আগের তুলনায় ভালো। করোনার পর আগের অবস্থায় ব্যবসা ফিরছে। আমরা মেট্রোরেল হওয়ার সুবিধা পাচ্ছি।
জামদানি কালেকশনের স্বত্বাধিকারী সুমন ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গত বছরের শেষের দিকে রাস্তা ও ফুটপাতের কাজ হয়। রাস্তা ও ফুটপাতে বালু-কাদা ও পানি থাকতো। এমনও হতো সপ্তাহে পঁচি-ছয়দিন বেচাকেনা নেই। এখন আর সেই অবস্থা নেই, প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন বিয়ের সিজন শেষের দিকে। এবার বিক্রি বাড়ায় করোনার ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।
আরও পড়ুন: করোনা পরিস্থিতির উন্নতিতে বিক্রি বেড়েছে বেনারসির
মাইশা বেনারসি হাউজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শাওন বিপুল বলেন, মেট্রোরেল হওয়ায় রাস্তা ভালো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই মিরপুর-১০ নম্বরে যে স্টেশন আছে সেটা খুলে দেওয়া হবে। তাহলে উত্তরা, মোহাম্মদপুরসহ আরও অনেক এলাকার ক্রেতারা এখানে আসতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।
তিনি বলেন, করোনার কারণে বিয়ের অনুষ্ঠান কমেছিল। কিংবা ছোট পরিসরে বিয়ের অনুষ্ঠান হতো, এ কারণে বিক্রি কম হতো। এখন সেই প্রবণতা কমছে, একাধিক শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। তিন বছর পর এবার ব্যবসা ভালো হয়েছে।
এসএম/আরএডি/এসএইচএস/জেআইএম