ক্রেতাশূন্য বেনারসি পল্লী, মজুরি দিতে ঋণ করছেন ব্যবসায়ীরা
উৎসব-আনন্দে শাড়ির সঙ্গে নারীর সম্পর্ক আদিকাল থেকেই। ঈদে শাড়ির আবেদন বরাবরই থাকে বেশি। চলতি বছর করোনার সংক্রমণ বাড়ায় সারাদেশে চলছে বিধিনিষেধ। করোনাভীতি ও গণপরিবহনের অভাবে চলতি বছর ঈদ মৌসুমে জমজমাট হয়ে ওঠেনি মিরপুরের বেনারসি পল্লী। ক্রেতা না থাকায় দোকানগুলোতে অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ মৌসুমে ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ থাকায় এবার দেশীয় বেনারসি বিক্রি বাড়ার আশা করছিলেন তারা। কিন্তু করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতি সব এলোমেলো করে দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা ছাড়তে বাধ্য হবেন তারা।
মঙ্গলবার (৪ মে) মিরপুর-১০ নম্বরের একাধিক দোকান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। দুপুর ১টায় বেনারসি রূপশ্রীনগর শাড়ির দোকানে একজন ক্রেতাকে শাড়ি বাছাই করতে দেখা যায়।
দোকানটির কর্ণধার মোহাম্মাদ শাফিকুল ইসলাম জসিম জাগো নিউজকে বলেন, ঈদকেন্দ্রিক ৫০ লাখ টাকা ব্যবসার টার্গেট থাকে। তবে এবার ঈদ বাজার বলতে কিছুই নেই। গত ঈদে তো কিছুই হয়নি। এবার দিনে ৫-৭টি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। কোনো দিন একটা শাড়িও বিক্রি হচ্ছে না। অথচ আগে ঈদের সময় দিনে ৪০-৫০টি শাড়ি বিক্রি হয়েছে। অন্যবারের ঈদের সময় যেমন বিক্রি হয়, তার ১০ শতাংশও এবার হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ঈদের পর সামাজিক অনুষ্ঠান হবে না। বেড়াতে যাওয়া হবে না। নতুন শাড়ি কেনার আগ্রহ নেই। আমি ঋণ করে এবার কর্মচারীদের বেতন দিয়েছি। ১৪ জন কর্মচারীর বেতন দিতে দেড় লাখ টাকা ঋণ করতে হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই বিদ্যুৎ বিল ও দোকান ভাড়াসহ ৮-১০ হাজার টাকা লোকসান গুনছি।
বেনারসি পল্লীর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ছোট-বড় প্রায় ৪০০ দোকানে ঈদ মৌসুমে ২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়ের টার্গেট থাকে। গত বছরের অভিজ্ঞতায় এবার মুনাফা না করতে পারলেও দোকান ভাড়া তোলার চ্যালেঞ্জ তাদের।
পাবনা বেনারসি মিউজিয়ামের স্বত্ত্বাধিকারী শামীম আকরাম জাগো নিউজকে বলেন, দোকানে বেচাকেনা নেই। আগে থেকে অবস্থা বুঝেছি। এজন্য কর্মচারী কমিয়ে দিয়েছি। কারণ তাদের তো বেতন দিতে পারব না। দেড় বছর ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ব্যবসা। লোকসানের পর লোকসান গুনছি।
তিনি বলেন, এই দোকান এখন গলার কাঁটা হয়ে গেছে। দোকানের মালিক অ্যাডভান্সের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। আমরা সরতে পারছি না।
গণপরিবহন বাড়লে পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন আশপাশের লোকজন শাড়ি কিনতে আসছে। দূর থেকে কেউ আসতে পারছে না। গাড়ি চলাচল করলে ক্রেতা বাড়বে। ঈদের আগে বেচাকেনা বাড়বে সেই আশায় আছি।
ঢাকাই জামদানি হাউজের কর্ণধার মেহেদী হাসান তুষার জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের সময় দোকানে সারাদিন বসে মাছি তাড়াচ্ছি। এই ছোট দোকানেও প্রতি মাসে ৭০-৮০ হাজার টাকা লোকসান গুনছি।
তিনি বলেন, ভারতে যাতায়াত বন্ধ। ভেবেছিলাম এবার আমাদের অনেক বেচাকেনা হবে। কিন্তু গণপরিবহন না থাকায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে। কোনো দিন দু-একটা শাড়ি বিক্রি হচ্ছে এই ঈদ মৌসুমে।
ক্রেতা শিলু আনন্দ জাগো নিউজকে বলেন, দোকান ফাঁকা। স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে কেনাকাটা করলাম। আমাদের যেহেতু ঘরোয়া অনুষ্ঠান (বিয়ে) তাই অল্পের ভেতরেই শাড়ি, ওড়না আর হলুদের শাড়ি নিলাম।
এসএম/এএএইচ/এএসএম