চট্টগ্রাম কাস্টমস

রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় বাধা পেট্রোবাংলা

ইকবাল হোসেন
ইকবাল হোসেন ইকবাল হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৮:৪৪ পিএম, ০৯ জুন ২০২৩
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ/ছবি: সংগৃহীত

#১১ মাসে রাজস্ব আদায় ৫৬৬৩০ কোটি টাকা
#শুধু পেট্রোবাংলার বকেয়া ৯৬০০ কোটি টাকা
#বকেয়া আদায়ে মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় বৈঠক

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। চলতি অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্যমাত্রা ৭৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। ৩১ মে পর্যন্ত অর্থবছরের ১১ মাসে আদায় হয়েছে ৫৬ হাজার ৬৩০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ হাজার ৫৭৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা পিছিয়ে রয়েছে।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি অর্থবছর চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ পুরোপুরি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম। তবে এ লক্ষ্য অর্জনে প্রধান বাধা পেট্রোবাংলা। এলএনজি আমদানি করে খালাস নিলেও শুল্ক করের ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পরিশোধ করেননি তারা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি চট্টগ্রাম কাস্টমসের। চলতি অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে রয়েছে। তবে গত অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে নেই চট্টগ্রাম কাস্টমস। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৫৬ হাজার ৬৩০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৫৩ হাজার ১৫৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। হিসাব অনুযায়ী- এ সময়ে গত অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমসে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে চার হাজার ৪৮২ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ওই মাসে ২৯৯ কোটি ২১ লাখ টাকা বেশি আদায় হয়েছে। জুলাইয়ে আদায় হয়েছিল চার হাজার ৭৮১ কোটি ২১ লাখ টাকা। ওই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও আগস্ট মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি কাস্টমস। ওই মাসে পাঁচ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আদায় হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৯৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন>> আমদানি কম, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ চট্টগ্রাম কাস্টমস

সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসেও লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২৫ শতাংশ অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে কাস্টমস। সেপ্টেম্বরে ছয় হাজার ৬৫২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আদায় হয়েছে পাঁচ হাজার ১০৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অক্টোবর মাসে ছয় হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও রাজস্ব অর্জিত হয় চার হাজার ৯১৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রার ১৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কম রাজস্ব আদায় হয়। ওই মাসে ছয় হাজার ৬০৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও পাঁচ হাজার ৪৭৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। ডিসেম্বরে চার হাজার ৩৮৮ কোটি পাঁচ লাখ টাকা আদায়ের বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় হাজার ৬০৪ কোটি টাকা।

একইভাবে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রতি মাসেই ২৫ থেকে ৩৪ শতাংশ রাজস্ব আদায় কমেছে। জানুয়ারি মাসে ছয় হাজার ৬৫২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে চার হাজার ৭৪৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকার বিপরীতে চার হাজার ২৮৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, মার্চে ছয় হাজার ৮৪০ কোটি টাকার বিপরীতে পাঁচ হাজার ৫২ কোটি ৫২ লাখ টাকা আদায় হয়। এপ্রিল মাসেও ছয় হাজার ৮৪০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চার হাজার ৫৩৪ কোটি পাঁচ লাখ টাকা আদায় হয়। এ চার মাসে লক্ষ্যমাত্রা ও বিগত বছরের আদায় দুই ক্ষেত্রেই পিছিয়ে ছিল কাস্টমস। তবে মে মাসে কপালের ভাঁজ কাটে। এ মাসে চার হাজার ৭১৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে সাত হাজার ৮৪০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৬ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, রাজস্ব আদায়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস তেমন পিছিয়ে নেই। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি করা মালামালে রেফার্ড সুবিধা নিতে পারে। রেফার্ড সুবিধায় শুল্ককর বকেয়া রেখে তারা পণ্য খালাস নেন। এ ধরনের কিছু বকেয়া রয়েছে। এ বকেয়া আদায়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।

আরও পড়ুন>> ৫ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি রুখে দিলো চট্টগ্রাম কাস্টমস

তিনি বলেন, ‘বড় বকেয়া পড়েছে পেট্রোবাংলার কাছে। তাদের কাছে কাস্টমসের পাওনা প্রায় ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের বকেয়া সাত হাজার কোটি টাকারও বেশি। পেট্রোবাংলা এলএনজি আমদানি করে শুল্ক কর বকেয়া রেখে এলএনজি খালাস নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বার্থে আমরা শুল্ক কর অপরিশোধিত রেখে তাদের এলএনজি খালাসের অনুমতি দিই। এখন বকেয়া আদায়ে মন্ত্রণালয়ে আমরা একাধিক বৈঠক করেছি। পেট্রোবাংলা চলতি অর্থবছরের এ সময়ের (জুন মাস) মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করবে বলে আশা করছি।’

ফাইজুর রহমান আরও বলেন, ‘আমদানিকারকদের বেশ কিছু মামলার কারণেও রাজস্ব আদায় আটকে আছে। সেসব মামলার রায় নিজেদের পক্ষে আনার জন্য আদালতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আমদানি করা পণ্য ছাড় দ্রুত করার মাধ্যমে রাজস্ব আদায় কিছুটা বাড়ানো গেলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব।’

আরও পড়ুন>> পেট্রোবাংলার ৩৭০০ কোটি টাকার বকেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় কাস্টমস

পেট্রোবাংলার অর্থ পরিদপ্তরের মহাব্যবস্থাপক (ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট) মো. গোলাম মোর্তযা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এলএনজি আমদানিতে কাস্টমসের বকেয়া শুল্ক কর পরিশোধের বিষয়ে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বেশি কিছু জানি না। আমাদের এলএনজি সেল এ বিষয়ে জানাতে পারবে।’

মহাব্যবস্থাপক (এলএনজি) মো. তাজুল ইসলাম মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘বকেয়া টাকা পরিশোধ কিংবা আদায়ের বিষয়টি আমাদের এফএমডি (ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট) দেখে। তারাই কাস্টমসের বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য দিতে পারবেন। কাস্টমসের বকেয়া পরিশোধের বিষয়টি বর্তমানে কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা জেনে জানাতে পারবো।’

এএএইচ/এএসএম

বড় বকেয়া পড়েছে পেট্রোবাংলার কাছে। তাদের কাছে পাওনা প্রায় ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের বকেয়া সাত হাজার কোটি টাকারও বেশি। পেট্রোবাংলা শুল্ক কর বকেয়া রেখে এলএনজি খালাস নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বার্থে আমরা শুল্ক কর অপরিশোধিত রেখে তাদের এলএনজি খালাসের অনুমতি দিই। বকেয়া আদায়ে এখন মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠক করেছি

আমদানিকারকদের বেশ কিছু মামলার কারণে রাজস্ব আদায় আটকে আছে। সেসব মামলার রায় নিজেদের পক্ষে আনার জন্য আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আমদানি করা পণ্য ছাড় দ্রুত করার মাধ্যমে রাজস্ব আদায় কিছুটা বাড়ানো গেলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।