বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম, ভোটে সরবরাহ কমার ‘অজুহাত’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:০১ এএম, ১২ জানুয়ারি ২০২৪

জাতীয় নির্বাচনের পর সপ্তাহ না পেরুতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার। গত এক সপ্তাহের (ভোটের আগে ও পরে) ব্যবধানে বাজারে চালসহ বেশকিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ভরা মৌসুমে আরও চড়া হয়েছে সবজির দাম। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি, আটা, ময়দা, ডাল, ছোলা, আদা ও রসুনসহ আরও বেশ কিছু পণ্যমূল্য। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।

যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোট ঘিরে গত কয়েকদিন প্রায় সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ কিছুটা কম ছিল। সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে সাধারণ ভোক্তারা মনে করছেন, সরকারের ভোটের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির অতিমুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন। ক্রেতাদের অভিযোগ, যে কোনো উছিলায় ব্যবসায়ীরা হুটহাট পণ্যের দাম বাড়ায়। মানুষকে তারা জিম্মি করে ফেলেছে। ক্রেতারা মনে করেন, জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে দ্রুত এই বাজার সিন্ডিকেট ভাঙা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন: আটা ময়দা পেঁয়াজ রসুন আদার দাম বেড়েছে

বাজারে হাসানুল হক নামের একজন ক্রেতা পণ্যের এ বাড়তি দামে দারুন উষ্মা প্রকাশ করেন। সঙ্গে তিনি এ-ও বলেন, এখন তো দেখার কেউ নেই। সরকার ব্যস্ত। তাই যার যেভাবে খুশি সেভাবে দাম বাড়াচ্ছে। ভুগছি শুধু আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরা।

jagonews24

এদিকে, গত কয়েক দিনের ব্যবধানে বাজারে প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এখন সরু (মিনিকেট) চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা দরে। যা ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা ছিল। মাঝারি (বিআর-২৮, পায়জাম) চালের কেজিতে সর্বোচ্চ তিন টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। দুই টাকা বেড়ে মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা।

চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মালিবাগে কুমিল্লা রাইস এজেন্সির ফরিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ভোটের কারণে গাড়ি এসেছে কম। তাই সরবরাহ ঘাটতির কারণে চালের দাম বেড়েছে।

তিনি জানান, বাজারে এখন মানভেদে প্রতি বস্তা চালের দামে দেড়শো থেকে আড়াইশো টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

আরও পড়ুন: সবজিতে ভরপুর বাজার, তবুও দাম চড়া

গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই চড়া সবজির দাম। এরমধ্যে আরও একদফা বেড়েছে এই কাঁচা পণ্যটির দাম। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন সব ধরনের সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। কাঁচা পেঁপে ও মুলা ছাড়া ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি বাজারে নেই। ভরা মৌসুমে শিম প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫০ টাকার নিচে মিলছে না। এক পিস লাউয়ের দাম ঠেকেছে ১০০ টাকায়।

jagonews24

বাজারে বছরজুড়ে পাওয়া যায় এমন গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা ও বরবটির কেজিও ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

অন্যদিকে, হুট করে দুদিনের ব্যবধানে বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২২৫ টাকা। যা দুদিন আগেও ২০০ থেকে ২০৫ টাকা ছিল। সোনালি জাতের মুরগির দামও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায়।

এছাড়া গরুর মাংসের বেঁধে দেওয়া দাম ৬৫০ টাকা হলেও রাজধানীর অধিকাংশ বাজারে ওই দামে গরুর মাংস মিলছে না। প্রতি কেজি গরুর মাংস এখন ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশিরভাগ মাংস বিক্রির দোকানে নেই মূল্যতালিকাও।

আরও পড়ুন: বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না গরুর মাংস

সেগুনবাগিচা বাজারে দুটি মাংসের দোকান। সেখানে ৭০০ টাকায় মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে খোকন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী খোকন জাগো নিউজকে বলেন, আমরাও ভোটের আগে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এখন গরুর দাম বেশি। ওই দামে বিক্রি করে কোনো লাভ হয় না। এখন এক কেজি মাংসের খরচই পড়ে ৬৮০ টাকা।

মাংসের সঙ্গে মাছের বাজারও কিছুটা বাড়তি দেখা গেছে। মালিবাগ বাজারের মাছ বিক্রেতা আবু হোসেন বলেন, বিভিন্ন পদের মাছের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

jagonews24

মুদি বাজারে আগে ছোলার কেজি ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে এখন তা বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। এছাড়া দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। বেড়েছে মসুর ডালের দামও। প্রতি কেজি ভালো মানের মসুর ডাল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা আগের থেকে ১০ টাকা বেশি।

বাজারে আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা বলছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে।

এখন বাজারে প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

আরও পড়ুন: রমজানে ভোগ্যপণ্য সরবরাহে স্বস্তির চেয়ে চাপ বেশি

এছাড়া বাজারে পেঁয়াজের দাম সাড়ে ৫ শতাংশ বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকারমধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। একই সঙ্গে রসুনের দাম ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং আদার দাম ২ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়েছে।

বাজারে এখন প্রতি কেজি আদা এবং রসুন একই দামে ২০০ থেকে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এনএইচ/এমকেআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।