৩৭ দেশে জুতা রপ্তানি করছে আরএফএল

সাইফুল হক মিঠু
সাইফুল হক মিঠু সাইফুল হক মিঠু
প্রকাশিত: ০৪:৪৭ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • এইচঅ্যান্ডএম-আমব্রোর মতো ব্র্যান্ডের জুতা তৈরি করছে আরএফএল
  • নন-লেদার জুতা রপ্তানি বাড়াতে বিনিয়োগ বড় হচ্ছে
  • আগামী ৫ বছরে বার্ষিক ৫০ মিলিয়ন ডলারের নন-লেদার ফুটওয়্যার রপ্তানির লক্ষ্য

এইচঅ্যান্ডএম, কাপ্পা, আমব্রোসহ একাধিক বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডের স্লিপার, ফ্লিপফ্লপ, কেডসসহ নানান ধরনের নন-লেদার জুতা এখন তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ আরএফএল ২০১৭ সাল থেকে প্রস্তুত করছে এ ধরনের জুতা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারের জুতা রপ্তানিও করেছে গ্রুপটি। এর পরের অর্থবছর রপ্তানি হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আরএফএল জুতা রপ্তানি করেছে ৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলারের।

বর্তমানে শিল্পগ্রুপটি ৩৭টি দেশে জুতা রপ্তানি করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বার্ষিক ৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার সমমূল্যের নন-লেদার ফুটওয়্যার রপ্তানি করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

ডলার ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকার যখন রপ্তানি বহুমুখী করার কথা বলছে, তখন নন-লেদার জুতা রপ্তানি বাড়াতে বড় বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে বিশ্বে জুতার বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। ২০২৭ সাল নাগাদ এ বাজারের আকার হবে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে বড় অংশজুড়ে আছে নন-লেদার জুতা। বিষয়টি মাথায় রেখে ২০১৭ সাল থেকে নন-লেদার জুতা উৎপাদন শুরু করে আরএফএল।

 

আমাদের সবচেয়ে ভালো দিক হলো আমরা শক্তিশালী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ তৈরি করেছি। ছয়টি ক্যাটাগরিতে ১০টি লাইন আমরা অপারেট করছি। আরএফএল ফুটওয়্যার এরই মধ্যে জিআরএস এবং আরসিএস সনদ অর্জন করেছে, যা নন-লেদার ফুটওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।- আরএফএল ফুটওয়্যারের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রাহাত হোসেন রনি

 

নরসিংদীতে তৈরি হচ্ছে কাপ্পা, রেডটেপ, আমব্রোর জুতা

২০২১ সালে নন-লেদার ফুটওয়্যার পণ্য রপ্তানি শুরু করে আরএফএল। পাদুকা পণ্য উৎপাদন হচ্ছে নরসিংদীর ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কারখানায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ফুটওয়্যার খাতে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মানুষের। কারখানাটি মাসে ২ লাখ সিমেন্টিং জুতা, ১ লাখ আইএমইভিএ জুতা, ৫ লাখ ফ্লিপফ্লপ ও ১ লাখ ইনজেকশন স্নিকার উৎপাদনে সক্ষম।

আরও পড়ুন>> বাজারে এলো প্রথম দেশি ই-বাইক আরএফএলের ‘দুরন্ত’ 

আরএফএল ফুটওয়্যারের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রাহাত হোসেন রনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘৩৭টি দেশে আরএফএল ফুটওয়্যারের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এর মধ্যে ইউরোপের দেশের সংখ্যা বেশি। আরএফএলের রপ্তানি ইউনিটে মাসিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ছয় লাখ জোড়া। দুটি ইউনিটে চারটি ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়ায় মোট ১০টি উৎপাদন লাইন রয়েছে।’

jagonews24

কারখানায় ব্যস্ত শ্রমিকরা, ছবি: জাগো নিউজ

তিনি বলেন, ‘নতুন ক্রেতা বাড়ানোর কাজ আমরা করছি। আগামী অর্থবছর রপ্তানি থেকে আয় আরও বাড়বে। গত অর্থবছরের চেয়ে দ্বিগুণ হবে। আমাদের সবচেয়ে ভালো দিক হলো আমরা শক্তিশালী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ তৈরি করেছি। ছয়টি ক্যাটাগরিতে ১০টি লাইন আমরা অপারেট করছি। আরএফএল ফুটওয়্যার এরই মধ্যে জিআরএস ও আরসিএস সনদ অর্জন করেছে, যা নন-লেদার ফুটওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’

ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ঘুরে দেখা যায় জুতা বানানোর মহাযজ্ঞ। যন্ত্র ও শ্রমিক উভয়ই জুতার বিভিন্ন অংশ তৈরি করছে। কোয়ালিটি কন্ট্রোল, সাসটেইনেবিলিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের জুতা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরএফএলের নন-লেদার ফুটওয়্যারে যেসব কাঁচামাল ব্যবহার হচ্ছে তার বেশির ভাগই আমদানি করা হয়। তবে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ নিয়ে এখন আরএফএল ব্যাপকভাবে কাজ করছে, যাতে কাঁচামাল নিজেরাই উৎপাদন করতে পারে। শিগগির নন-লেদার ফুটওয়্যারে ব্যবহৃত সোল, মোল্ড এবং সিনথেটিক নিজেরাই উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

আরও পড়ুন>> রেইনবো পেইন্টসের আরও নতুন ১১ পণ্য বাজারে 

উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নন-লেদার ফুটওয়্যারের জন্য বর্তমানে যেসব কাঁচামাল আমদানি করা হচ্ছে, এগুলো যদি দেশে উৎপাদন করা সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে লিড টাইম অনেক কমে আসবে। সরকার যদি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ প্রতিষ্ঠায় গার্মেন্টস শিল্পের মতো সুবিধা দেয়, তাহলে এ খাতে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসবেন। তখন এক্সেসরিজসহ নন-লেদার ফুটওয়্যারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ গড়ে উঠবে।

 

এ শিল্পের জন্য দেশে সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। পাদুকা শিল্প এগিয়ে নীতি যে ধরনের নীতি সহায়তা দরকার, সব দিচ্ছে সরকার। আমাদের বন্ড লাইসেন্স আছে। শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য আনতে পারছি। আমরা এখন ঢাকার বাইরে এ শিল্প স্থাপন করতে চাই। আগামী এক বছরের মধ্যে উত্তরবঙ্গে আমরা ফুটওয়্যার শিল্প স্থাপন করবো।- প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সিইও ও চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী



দেশে প্রয়োজনীয় ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ গড়ে উঠলে ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি পণ্য কিনতে উৎসাহিত হবেন। কারণ লিড টাইম অনেক কমে যাবে। তাছাড়া যে কোনো সময় ক্রেতারা ক্রয়াদেশের পরিমাণ বাড়ালেও সেটি গ্রহণ করা সম্ভব হবে।

রপ্তানির ক্ষেত্রে আরএফএল ফুটওয়্যার বর্তমানে লেডিস সুজ, লেডিস স্যান্ডেল ও বিভিন্ন ধরনের কিডস আইটেম উৎপাদন করে। শিগগির হাই-অ্যান্ড বা উচ্চ মূল্যের নন-লেদার ফুটওয়্যার উৎপাদনে যাবে আরএফএল।

jagonews24

বিপুল নারীরও কর্মসংস্থান করেছে আরএফএল ফুটওয়্যার

এসব নিয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সিইও ও চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘এ শিল্পের জন্য দেশে সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। পাদুকা শিল্পকে এগিয়ে নীতি যে ধরনের নীতি সহায়তা দরকার, সব দিচ্ছে সরকার। আমাদের বন্ড লাইসেন্স আছে। শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য আনতে পারছি। আমরা এখন ঢাকার বাইরে এ শিল্প স্থাপন করতে চাই। আগামী এক বছরের মধ্যে উত্তরবঙ্গে আমরা ফুটওয়্যার শিল্প স্থাপন করবো। পাদুকা রপ্তানিতে প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রোথ হয়েছে। আমরা এগিয়ে যেতে চাই।’

তবে বন্দর ব্যবস্থাপনায় সংকটের কথা জানিয়ে আহসান খান চৌধুরী বলেন, বন্দর ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে আমদানি করা কাঁচামাল দ্রুত খালাস এবং পণ্য রপ্তানি দ্রুত ও সহজে করা যায়। এ খাতে দক্ষ মানবসম্পদের যথেষ্ট অভাব। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

এসএম/এমএইচআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।