রিহ্যাব নির্বাচন

ছবি নিয়ে ‘অপপ্রচার’, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বললেন সংশ্লিষ্টতা নেই

ইয়াসির আরাফাত রিপন
ইয়াসির আরাফাত রিপন ইয়াসির আরাফাত রিপন
প্রকাশিত: ০৯:৪২ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
রিহ্যাব নির্বাচন ঘিরে ছবি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি

প্রায় এক যুগ পর আবাসন খাত ব্যবসায়ীদের একমাত্র সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের (রিহ্যাব) অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে আদালতের ঘোষণার পর বাণিজ্য সংগঠনটির নির্বাচন নিয়ে প্রাণ ফিরে পায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। তবে এরই মধ্যে একবার তারিখ পেছানো হয়েছে। নতুন সূচি অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২০২৪-২৬ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা।

তবে এই নির্বাচনকে ঘিরে একটি ছবি নিয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। একাধিক প্রার্থীর অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর একটি ছবিকে প্রচার করছে একটি বিশেষ প্যানেল। রিহ্যাব সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপে এটি আপলোড করা হচ্ছে। এ নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রতিমন্ত্রী এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি জানান, এই ছবির সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বিতর্ক সৃষ্টি করা ওই ছবিটি জাগো নিউজের হাতে এসেছে।

আরও পড়ুন>> এক যুগ পর রিহ্যাব নির্বাচন, রেকর্ড মনোনয়ন ফরম বিক্রি

এদিকে ভোটের ভেন্যু নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের মাঝে নানান কৌতূহল রয়েছে। কারণ বিজিএমইএ ও রিহ্যাবের নির্বাচন সাধারণত পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আসন্ন নির্বাচনও রাজধানীর যেকোনো একটি পাঁচ তারকা হোটেলে করার অনুরোধ করেছিল প্রায় সব প্যানেলই। তবে নির্বাচন কমিশন খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটকে বেছে নিয়েছে। যদিও এখানে ভোটের দিন কোনো চাপ প্রয়োগ হতে পারে- এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন একাধিক প্রার্থী। তবে কমিশন বলছে, ভোট সুষ্ঠু করার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ভোটের পরিবেশ যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য উপস্থিতি থাকবেন। গণমাধ্যমের সামনেই একটু পর পর ব্রিফ করা হবে, স্ক্রিনের মাধ্যমে দেখানো হবে নির্বাচনের পরিবেশ।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ছবিটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বাবার মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তোলা হয়। ব্যবসায়ীরাও মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। রিহ্যাব নির্বাচনে একটি প্যানেলের প্রার্থীরা ছবিটি তুলেছেন। পরে ওই ছবি ভোটের মাঠে ব্যবহার করছে একটি প্রভাবশালী পক্ষ। এতে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার শঙ্কা করছেন অন্যরা। একই সঙ্গে নির্বাচনের ভেন্যু নিয়েও নানান প্রশ্ন তাদের।

এ বিষয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামদ বিপুর বাবার মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের ছবি ছিল সেটা। অনুষ্ঠানে গিয়েছি, ছবিও তোলা হয়েছে। কেউ ছবি তুললে তো না করা যায় না, আমিও ছবি তুলেছি তাদের সঙ্গে। তবে রিহ্যাব নির্বাচনের সঙ্গে ওই ছবির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আবার যারা ছবি তুলতে পারেননি তারাও ছবি তুলতে পারবেন আমার সঙ্গে, এতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।’

আরও পড়ুন>> অর্ধেকে নেমেছে ছোট-মাঝারি ফ্ল্যাট বিক্রি

নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী একাধিক প্রার্থী জাগো নিউজকে বলেন, ‘রিহ্যাব নির্বাচন নিয়ে এখন শঙ্কা নেই, নির্বাচন হবে। তবে শঙ্কা হলো ভোটের পরিবেশ নিয়ে। আবার বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর ছবি নিয়েও বিভ্রান্ত করছেন প্রভাবশালী একটি প্যানেলের প্রার্থীরা। তারা অন্য প্যানেলের প্রার্থীদের নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমরা চাই সুষ্ঠু ভোট। ভোটের মাধ্যমে প্রার্থীরা আসুক, এটা চাই। নির্বাচিত নেতা এলে সংগঠনকে বুঝতে পারবেন নেতারা।’

তবে ভোটার ও প্রার্থীদের সুষ্ঠু ভোটের বিষয়ে আশ্বস্ত করছেন রিহ্যাব নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুব্রত কুমার দে (যুগ্ন সচিব) জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোন ছবি নিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে বা হচ্ছে না সে বিষয়ে জানি না। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, ভোটের পরিবেশ ভালো থাকবে। এছাড়া নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য উপস্থিত থাকবেন। স্ক্রিনের সাহায্যে দেখানো হবে ভোটের চিত্র। ভোটের পরিবেশ নিয়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় গণমাধ্যমকে ব্রিফ করা হবে।

রিহ্যাব সূত্র বলছে, প্রায় এক যুগ পর ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোট হতে যাচ্ছে বাণিজ্য সংগঠনটির। নির্বাচনে ঢাকার ২৯ পরিচালক পদের বিপরীতে লড়ছেন ৮৬ প্রার্থী। আর চট্টগ্রামের তিনটি পরিচালক পদের বিপরীতে প্রার্থী আছেন সাতজন। চারজন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিনে নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চারটি প্যানেলে হয়েছে। প্যানেলগুলোর মধ্যে রয়েছে- রিহ্যাব সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জাপান গার্ডেন সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন ‘আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ’, সেঞ্চুরি রিয়্যালটির চেয়ারম্যান এম জি আর নাসির মজুমদারের নেতৃত্বে ‘ডেভেলপারস ফোরাম’, রিহ্যাবের সাবেক সহ-সভাপতি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ‘নবজাগরণ প্যানেল’ এবং সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশনের এমডি ইন্তেখাবুল হামিদের নেতৃত্ব ‘জয়ের ধারা প্যানেল’।

ভোটের ভেন্যু নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারের প্রশ্ন বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘খামারবাড়ির কেআইবিকে আমরা নির্বাচনের জন্য বেছে নিয়েছি। ভেন্যুতে ১৫টি বুথ থাকবে, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। কোনো প্রার্থীর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চাপ নেই। ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু আছে। এরই মধ্যে একাধিকবার ভেন্যু পরিদর্শন করেছি। কোনো সমস্যা হয়নি, আশা করছি আগামীতেও কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।’

ইএআর/ইএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।