৯ মাসে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে গেলো সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০০ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০২৪
ফাইল ছবি

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে বিদেশি ঋণের প্রতি সরকারের ঝোঁক বেড়েছে। পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। একই সঙ্গে ক্রমেই বাড়ছে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ। ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশকে এখন তুলনামূলক বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। ফলে প্রতিবছর সরকার যে বিদেশি ঋণ নিচ্ছে, তার বেশিরভাগই সুদ-আসলসহ ঋণ পরিশোধেই ব্যয় হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে ২৮ হাজার ২৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৬ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে সুদ পরিশোধ।

আলোচ্য অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ঋণের বিপরীতে শুধু সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১১ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। আর ডলারের হিসাবে সুদ পরিশোধ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। মূলত টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আগের বছরগুলোতে নেওয়া ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। সম্প্রতি চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের (জুলাই- মার্চ) বৈদেশিক ঋণ সহায়তার তথ্য প্রকাশ করে ইআরডি। এতে দেখা যায়, প্রথম ৯ মাসে সরকার সুদ ও আসলসহ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে ২৫৭ কোটি ডলার। টাকার অংকে ২৮ হাজার ২৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

বছরের ব্যবধানে টাকার অংকে ঋণ পরিশোধ বাড়ার মূল কারণ ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের হার ছিল এক দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এক লাফে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটে ২৬ দশমিক ১২ শতাংশ। এতে প্রতি ডলারের দর হয় ১০৮ টাকা ৮৪ পয়সা। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে এক দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। বর্তমানে প্রতি ডলারের দাম ১১০ টাকা। অর্থাৎ গত দেড় বছরে ২৭ শতাংশের বেশি টাকার অবমূল্যায়ন ঘটেছে।

ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সরকার যে ঋণ পরিশোধ করেছে তারমধ্যে আসল ঋণ ১৬ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বাকি ১১ হাজার ৬০১ কোটি কোটি ৮৩ লাখ টাকা সুদ বাবদ দিতে হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে সরকারের ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৬ হাজার ৯৬৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে আসল ছিল ১২ হাজার ২০২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের যেখানে ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা সুদ দিতে হয়েছিল, সেখানে চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ।

আরও পড়ুন

এসময়ে ডলারের হিসাবে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ২৫৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। যা আগের বছরে ছিল ১৭৩ কোটি ৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৮৩ কোটি ডলার। এসময় ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। আগের বছর ছিল ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ ডলারের হিসাবে সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৫৭ কোটি ডলার।

অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ৫৬৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৫৩৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে অর্থছাড় বেড়েছে ২৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। ঋণের অর্থছাড় বাড়লেও কমেছে অনুদানের অর্থ। বছরের ব্যবধানে যেখানে ঋণের অর্থছাড় বেড়েছে প্রায় ৩০ কোটি ডলার, সেখানে অনুদান কমেছে প্রায় ২ কোটি ডলার।

অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে এডিবি। এ সংস্থা অর্থছাড় করেছে ১৪০ কোটি ২৭ লাখ ডলার। জাপান ছাড় করেছে ১৩৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এরপর বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ৯৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। এছাড়া রাশিয়া ৮০ কোটি ৭৫ লাখ ডলার এবং চীন ৩৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার ছাড় করেছে। ভারত দিয়েছে ১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। বাকিটা অন্যান্য দাতা সংস্থা থেকে এসেছে।

ঋণ পরিশোধ এবং অর্থছাড়ের মতোই চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ প্রতিশ্রুতিও বেড়েছে। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, উন্নয়ন সহযোগীরা এ সময়ে ৭২৪ কোটি ২১ লাখ ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩০৭ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ৪১৬ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে ৯৯২ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে বলে জানা গেছে।

ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে এডিবির কাছ থেকে। সংস্থাটির কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ২৬২ কোটি ২ লাখ ডলার। এছাড়া জাপানের কাছ থেকে ২০৩ কোটি ৫৯ লাখ ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ১৪১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের। তবে অর্থছাড় করলেও রাশিয়া, চীন এবং ভারতের কাছ থেকে অর্থবছরের ৯ মাসেও কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি।

এমওএস/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।