৯ মাসে রাজস্ব ঘাটতি সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:২৪ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০২৪
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবন

চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রাজস্ব আদায়ে বেশ বড় অঙ্কের ঘাটতিতে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আলোচিত ৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এনবিআর আদায়ে পিছিয়ে আছে ২১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। এ সময়ে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে এনবিআর। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি থাকলেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। রাজস্ব বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা চার লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে বাকি তিন মাসে এনবিআরকে এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, গত ৯ মাসে শুল্ক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৩ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭৪ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ৭০২ কোটি টাকা। এছাড়া আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৮৪ হাজার ৯০১ কোটি টাকা।

লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শুল্কে ৯ হাজার ৭৯ কোটি টাকা, মূসকে ৪ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা ও আয়করে ৮ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা আদায় করতে পারেনি রাজস্ব বোর্ড। যদিও আলোচ্য সময়ে শুল্কে ১০ দশমিক ২১ শতাংশ, মূসকে ১৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ ও আয়করে ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। যার মধ্যে শুল্কে ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ, মূসকে ১৫ দশমিক ৪১ শতাংশ ও আয়করে ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়।

আরও পড়ুন

এনবিআর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় আছে। প্রবৃদ্ধিও ভালো।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর জাগো নিউজকে বলেন, চলতি বছরে যে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা উচ্চাভিলাষী। এরপর অর্থনীতিতে নানান সংকট দেখা দিয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ প্রত্যাশার তুলনায় কম হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করছে ব্যাংকগুলো। এর ফলে সুদের হার বেড়ে গেছে। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ব্যাংকগুলো অনেক বন্ড কিনেছে, এর ফলে ব্যাংকের হাতে ঋণ দেওয়ার মতো টাকা নেই। শেয়ারবাজারেও উন্নতির দেখা নেই। আমদানিও কমে গেছে অনেকটা।

তিনি আরও বলেন, আমদানি ও রপ্তানি প্রায় সমান সমান। এ কারণে শুল্কে আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি নেই, মূসকেও ঘাটতি। যেহেতু পরোক্ষ করের ওপর আমরা বেশি নির্ভরশীল। এসব জায়গা থেকে যেহেতু রাজস্ব আয় কমে গেছে, ফলে আগামী ৩ মাসে নতুন করে রাজস্ব আদায় বাড়ার সম্ভাবনা কম। এ কারণে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। অনেকটাই ঘাটতি থাকবে।

লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আইএমএফের চাপ রয়েছে জানিয়ে ড. মাহফুজ কবীর বলেন, আইএমএফ বেশি কর জিডিপি চায়। এখানে এনবিআরের কিছুটা সমস্যা হয়। মূসক ও শুল্ক থেকে রাজস্ব বেশি আসে। ব্যবসা-বাণিজ্য যেহেতু কমছে, এ কারণে সম্পূরক শুল্ক থেকে রাজস্ব আয় কম হচ্ছে। পরোক্ষ করের ওপর চাপ কমিয়ে প্রত্যক্ষ করের দিকেও যাওয়া প্রয়োজন।

এসএম/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।