বিনিয়োগ বাড়াতে ঋণপ্রবাহ ইতিবাচক ধারায় রাখতে হবে
![বিনিয়োগ বাড়াতে ঋণপ্রবাহ ইতিবাচক ধারায় রাখতে হবে](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/dr-jahid-20240516143838.jpg)
কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ চাঙা রাখতে সরকারকে ঋণপ্রবাহ ইতিবাচক ধারায় রাখতে হবে। সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য ব্যাংকখাতের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে বিকল্প উৎসের মাধ্যমে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজেট ঘাটতি সীমিতকরণের প্রতি নজর দিতে হবে।
জাগো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের জন্য এসব পরামর্শ দেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিশেষ প্রতিবেদক ইব্রাহীম হুসাইন অভি।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের রূপান্তরের জন্য আগামী বাজেটে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বড় সমস্যা হলো তাদের প্রবৃদ্ধি একটা জায়গায় এসে আটকে যায়। ছোট আকারে শুরু করে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হলে বড় হওয়ার কথা, বহুমুখীকরণের দিকে যাওয়ার কথা। ছোট উদ্যোক্তা থেকে বড় উদ্যোক্তা তৈরি হবে। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবসা যেখানে আছে সেখানেই থেকে যায় এবং উত্তরণের সুযোগ খুবই সীমিত।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্প্রসারণমূলক বাজেট মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। বড় সংকট দেখা দেবে অর্থায়নের ক্ষেত্রে। কারণ ব্যাংকখাত তারল্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বড় হওয়ার প্রধান অন্তরায় অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেরাই বড় হতে চায় না। একটি ক্ষুদ্রশিল্পকে বড় শিল্প হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হলে তাকে অপ্রাতিষ্ঠানিক থেকে প্রাতিষ্ঠানি ভাবে রূপান্তরিত হতে হয়। একটা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের শিল্প যখন বড় হয় তখন তাকে নানা ধরনের জটিল আইন-কানুনের অধীনে আসতে হয়, যা পরিপালন করা কঠিন।
এসব নিয়ম মেনে চলতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির সম্মুখীন হতে হয়। এতে বেড়ে যায় তাদের ব্যবসায়িক খরচ। ফলে তারা বড় না হয়ে যেখানে আছে সেখানেই থেকে যেতে চায়। সুতরাং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে এসব আইন-কানুন সহজ করা প্রয়োজন।
এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী বাজেটে ঘাটতি কম রাখতে হবে। বড় আকারের বাজেট ঘাটতি রেখে প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট চাঙা করা যাবে না।
কর অব্যাহতি ও ভর্তুকি মডেল অনেকদিন ধরে চলে আসছে, কিন্তু ভালো ফলাফল পাওয়া যায়নি। যেহেতু তারা ট্যাক্স নেটের আওতায় নেই সুতরাং, তাদের ওপর এর প্রভাব তেমন একটা পড়ে না। অন্যদিকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম দেখা গেছে। তাই আইনি সংস্কার ও সহজীকরণ প্রয়োজন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে কী উদ্যোগ নেওয়া উচিত?
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্প্রসারণমূলক বাজেট মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। বড় সংকট দেখা দেবে অর্থায়নের ক্ষেত্রে। কারণ ব্যাংকখাত তারল্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেটা যাতে আর না বাড়ে সেদিকে নজর দিতে হবে এবং ঘাটতি কমাতে হবে।
এমনিতেই ব্যাংকখাতে তারল্য সংকট। সেখানে সরকার যদি ঘাটতি মেটানোর জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বড় ধরনের ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করে তাহলে তারল্য সংকট আরও গভীরতর হবে। ব্যক্তিঋণের প্রবাহ কমে যাবে।
আরও পড়ুন
- রপ্তানিমুখী পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার
- ‘পোশাক শিল্পে ৮০-৯০ শতাংশ শ্রমিক তাদের অধিকার ভোগ করছেন’
- ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে শ্রমিকের ইউনিয়ন করার অধিকার
এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী বাজেটে ঘাটতি কম রাখতে হবে। ঘাটতি মেটাতে সরকারকে ব্যাংকখাত থেকে কম ঋণ সংগ্রহ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। বড় আকারের বাজেট ঘাটতি রেখে প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট চাঙা করা যাবে না।
বাজেটে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে বরাদ্দ রাখা উচিত?
বাজেটে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণ করার জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ রাখা হয় ও খরচ করা হয়। কিন্তু এতে তারল্য সংকট কমেনি বরং বেড়েছে। বেড়েছে খেলাপি ঋণ। ফেরেনি শৃঙ্খলা। ব্যাংকখাতে সুশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন।
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রভাব মোকাবিলা করতে আপনার পরামর্শ কী?
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের কথা মাথায় রেখে আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমান সরকার যে ধরনের নগদ সহায়তা দিচ্ছে তার যৌক্তিকীকরণ প্রয়োজন। কারণ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত প্রবেশের যে সুবিধা ভোগ করছে তা হারাতে পারে।
৩৫টিরও অধিক পণ্যে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সেই সহায়তা বাস্তবে সব সেক্টরে সুফল বয়ে আনেনি। যেহেতু গ্র্যাজুয়েশনের পরে নগদ সহায়তা রাখার বিষয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠবে, তাই এখন থেকেই ভিন্ন পন্থায় এবং চলমান সহায়তার যৌক্তিকীকরণ করতে হবে।
আইএইচও/এএসএ/জিকেএস