স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তায় ‘জীবাণুমুক্তকরণ চেম্বার’ তৈরি বুয়েটে
করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) থেকে সুরক্ষা দিতে এগিয়ে এসেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রাক্তন ১১ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক। তারা চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিশেষ এক ‘জীবাণুমুক্তকরণ চেম্বার’ তৈরি করেছেন। রোগীর কাছ থেকে আসার পর এই চেম্বারের ভেতর ৩০ সেকেন্ড অবস্থান করলে ভাইরাসের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে বলে দাবি করেছেন তারা।
ঢাকায় কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে অন্যতম কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে গতকাল শুক্রবার একটি জীবাণুমুক্তকরণ চেম্বার সরবরাহ করা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে ওই চেম্বারের ব্যবহার শুরু হবে। আগামী সপ্তাহে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আরেকটি চেম্বার দেয়ার কথা রয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরও দুটি চেম্বার তৈরির পরিকল্পনা করছেন বুয়েটের এই প্রকৌশলীরা। বিনামূল্যে হাসপাতালগুলোকে এই চেম্বার দেয়া হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে জীবাণুমুক্তকরণ চেম্বার তৈরির কাজটি করছেন বুয়েটের ’৯৭তম ব্যাচের ১১ জন প্রকৌশলী, স্থাপত্যবিদ ও পরিকল্পনাবিদ। এই কাজে নেতৃত্বে আছেন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম তৌফিক হাসান।
শনিবার (৯ মে) অধ্যাপক তৌফিক হাসান বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে তারা এমন একটি মেশিন তৈরির চিন্তা করে আসছিলেন। বর্তমানে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশি পরিমাণে আক্রান্ত হওয়ায় তারা জীবাণুমুক্তকরণ চেম্বার তৈরির পরিকল্পনাটি হাতে নেন। এরপর তারা কাজ শুরু করেন।’
তিনি বলেন, ‘এটি দেখতে কিছুটা লিফট আকৃতির। এই চেম্বার কেবল চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী পরা অবস্থায় ব্যবহার করবেন। হাসপাতালে রোগীদের ওয়ার্ডের কাছাকাছি স্থানে এই চেম্বার বসানো থাকবে। রোগী দেখে আসার পর চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা পিপিই পরেই এই চেম্বারে ঢুকে ৩০ সেকেন্ড অবস্থান করবেন। তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক ধরনের জীবাণুনাশক স্প্রে করা হবে। এর ফলে রোগীদের কাছ থেকে যে ভাইরাস বহন করে আনার ঝুঁকি ছিল, সেটা অনেকটাই কমে যাবে।’
দেশীয় প্রযুক্তিতে বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে গত ১৬ এপ্রিল থেকে এই চেম্বার তৈরির কাজ শুরু করেন প্রকৌশলীরা। একেকটি চেম্বারের ওজন প্রায় ৩০০ কেজি। এর পাশাপাশি স্প্রের জন্য আনুষঙ্গিক বিষয়াদি আছে। একটি চেম্বারে একসঙ্গে তিন মাসের স্প্রে ভরার ব্যবস্থা থাকছে। পরে আবার তা ভরার সুযোগ আছে। একেকটি চেম্বার কমপক্ষে দুই বছর ভালোভাবে ব্যবহার করা যাবে। এই চেম্বার ব্যবহারে শরীরের কোনো ক্ষতি হবে না।
প্রতিটি চেম্বার তৈরি করতে প্রায় ছয় লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। তবে চেম্বার তৈরির সংখ্যা বেড়ে গেলে খরচ কিছুটা কমে আসবে বলে মনে করছেন প্রকৌশলীরা। প্রথম দুটি চেম্বার তৈরির জন্য আর্থিকভাবে সহায়তা করছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।
এ চেম্বারের জন্য হাসপাতালের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হচ্ছে না বলে জানান অধ্যাপক তৌফিক হাসান। তিনি বলেন, তাদের লক্ষ্য করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট এই দুর্যোগে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সেবা দেয়া।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তায় ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহায়তা দিলে দেশের করোনা চিকিৎসারত ঝুকিপূর্ণ হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে এসব মেশিন তৈরি করে দেয়া সম্ভব হবে।
এমএইচএম/এসআর/জেআইএম