তারাও আছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অপেক্ষায়
দেড় বছর আগেও নিউমার্কেটের টিচার্স ট্রেনিং কলেজ সংলগ্ন ফুটপাতে অস্থায়ীভাবে খাট, চৌকি ও পড়ার টেবিল বিক্রি করতেন অন্তত ২০ জন ব্যবসায়ী। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা সাশ্রয়ী মূল্যে এ ফুটপাত থেকে আসবাব কিনতে পারতেন।
করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিক্রি নেই। তাই নিউমার্কেটের ফুটপাত ছেড়েছেন ১৭ জন ব্যবসায়ী। অনাহার, অর্ধাহারে বাকিরা টিকে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
রোববার (২০ জুন) নিউমার্কেটের ঢাকা ও টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনে সারি সারি চৌকি, পড়ার টেবিল পড়ে থাকতে দেখা যায়। অনেক খুঁজে পাওয়া যায় দুই বিক্রেতাকে।
মোহাম্মদ হৃদয় ২৭ বছর ধরে এই ফুটপাতে ব্যবসা করেছেন। তবে এতটা খারাপ সময় তিনি দেখেননি। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘২৭ বছর ধরে এইখানে ব্যবসা করছি, এবারের মতো খারাপ অবস্থা কোনোবারেই হয়নি। এর মধ্যে কত আন্দোলন গেছে কোনো সমস্যা হয় নাই। ফখরুদ্দিনের আমলেও দোকানদারি করতে পারছি। এই করোনায় আমরা শেষ হয়ে গেলাম।’
করোনার আগে মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা বিক্রি হতো। আর এখন মাসে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা বিক্রি করতেও কষ্ট হচ্ছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যবস-বাণিজ্য একেবারেই নাই। এমনও হইছে সাতদিনেও কোনো বেচা-বিক্রি হয় নাই। স্কুল, কলেজ না খোলা পর্যন্ত আমাদের এই অবস্থাই থাকবে। চালান, পুঁজি সব শেষ। এইখানে আগে ২০ জন ব্যবসা করতো। লস দিয়ে সবাই ব্যবসা গোটাইছে। এখন আমরা তিন জন আছি। দেড় বছর ধরে লকডাউন কারও কোনো সাহায্য আমরা পাই নাই। কোনো কোনো দিন না খেয়েও থাকতে হয়েছে আমাদের।’
এখানে সিঙ্গেল চৌকি ৬০০ টাকা, সেমি ডাবল চৌকি ৭০০ টাকা আর ডাবল চৌকি ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। আর পড়ার টেবিল ১ হাজার টাকা, চেয়ার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়।
দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে রাজধানীর হাজারীবাগ থাকেন হৃদয়। সংসার চালাতে এর মধ্যেই নিয়েছেন লাখ টাকার ঋণ। আর এখন পাওনাদারদের ভয়ে দিন কাটছে তার। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলেছি। সেই টাকার জন্য এখন ডেইলি ফোন দিচ্ছে। ছেলে-মেয়ের স্কুল, কোচিং থেকে ফোন দিয়ে বলছে, টাকা দাও। এই টাকা যে কোথায় থেকে পাবো সেইটা তো জানি না।’
আরেক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান। তিনি ১৯৮৬ সাল থেকে এই ফুটপাতে ব্যবসা করছেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘ব্যবসা খারাপ হলেও এত বছর পরিবার নিয়ে কোনো না কোনো ভাবে চলে আসছি। এখন করোনায় নিজের জান বাঁচানোই কষ্ট হয়ে দাঁড়াইছে। লজ্জায় কোথাও টাকা চাইতে পারছি না। কোনো দিন একবেলা খাইয়া থাকি, কোনো দিন তিন বেলা না খেয়েও থাকি। কী করবো, হাত-পা আছে কেউ ভিক্ষাও দেবে না। আমার কারখানায় এই খাট, চৌকি বানানো হতো। কিন্তু এখন সেটা চালাতে পারছি না। কারিগররাও এখন খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটাচ্ছে।’
করোনার প্রকোপ বাড়ায় গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ আছে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার উদ্যোগ নেয়া হলেও করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা যায়নি। তবে শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মতোই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অপেক্ষায় ব্যবসায়ী মিজানুর।
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই আশায় আছি। স্কুল খুলবে, আজ কিংবা কাল। স্কুল-কলেজ খুললে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য ও ভালো চলে।
এই এক-দেড় বছরে আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ফেলেছি। স্কুল-কলেজ খুলবে। আমাদের ব্যবসা ভালো হবে, সব শোধ করেবা।‘
এসএম/এমআরআর/জেআইএম