ক্লাস করতে শিক্ষার্থীদের ডিভাইস-ডাটা দেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
সারাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স, মাস্টার্স, স্নাতকসহ (পাস) বিভিন্ন কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৯ লাখ। চলমান করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিতে সরাসরি পাঠদান পরিচালিত না হলেও ভার্চুয়াল মাধ্যমে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় এ বিশ্ববিদ্যালয়। তবে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকায় প্রান্তিক পর্যায়ের সব শিক্ষার্থীকে ভার্চুয়াল সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা যাচ্ছে না।
এজন্য শিক্ষার্থীদের ডিভাইস ও ফ্রি ইন্টারনেট ডাটা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের সেশনজট থেকে মুক্তি দিতে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন।
করোনাকালে পাঠদান, পরীক্ষাসহ সার্বিক বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক মুরাদ হুসাইন।
জাগো নিউজ: করোনা পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষার্থীদের দেড় থেকে দুই বছরের সেশনজট কাটিয়ে তুলতে অটোপাস বা বিকল্প কোনো চিন্তা-ভাবনা আছে কি-না?
ড. মশিউর রহমান: প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের পুরোপুরি অটোপাস দেয়া হয়নি। দেড় বছরের বেশি সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়েছে। এতে তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। আমরা দেখলাম অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে রয়েছে। অনলাইনে তারা বেশ কিছু ক্লাস করেছে। এই মুহূর্তে নতুন করে ক্লাস করার কিছু নেই বলে আমরা কলেজ অধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেই। তবে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই তার চার বছরের অনার্স কোর্স চলাকালীন সুবিধামতো সময়ে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে হবে।
আমরা একটি কঠিন অবস্থার মধ্যে রয়েছি। এ পরিস্থিতিতে আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে সেশনজটে পড়তে চাই না। এজন্য অনলাইনে ক্লাস নেয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে পরীক্ষা নেয়া হবে। আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, অনার্স থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত যত কোর্স আছে তাতে ১০ থেকে ১২টা করে লেকচার দিলেই ১২ হাজারের মতো ক্লাসের প্রয়োজন। এগুলো আপলোড করতে পারলে একজন শিক্ষার্থী সেগুলো দেখে পরীক্ষার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারবে। ইতোমধ্যে আমরা ইউটিউবে সাড়ে সাত হাজার ক্লাস আপলোড দিয়েছি। আরও কিছু হাতে রয়েছে, সেগুলো এডিট করে আপলোড করা হবে। এজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কলেজ শিক্ষকদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের লেকচারও যুক্ত করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
একদিকে অনলাইনে ক্লাস নেয়া হবে অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে কেন্দ্র বাড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষাগুলো নিতে পারলে আমাদের শিক্ষার্থীদের সেশনজটের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এ পদ্ধতিতে এগিয়ে যেতে পারলে দ্রুত সময়ের মধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে পিছিয়ে পড়াকে লাঘব করা যাবে বলে আমি আশা করি।
জাগো নিউজ: অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে অনেক শিক্ষার্থীকে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। অনেকের আবার ইন্টারনেট ব্যবহারের ডিভাইসও নেই। তাদের এ সুবিধার আওতায় আনতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কী ভাবনা?
ড. মশিউর রহমান: এ বিষয়ে আমরা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। অনেক এলাকায় ইন্টারনেট সমস্যা রয়েছে, অনেকের ডাটা কেনার সক্ষমতা নেই। অনেকে বাসায় বসে অনলাইনে ক্লাস পাচ্ছে। কলেজে যেতে যাতায়াত ভাড়া ও খাবার ব্যয় বেঁচে যাচ্ছে। তা দিয়ে ডাটা কিনতে পারছে। প্রান্তিক কিছু শিক্ষার্থী আছে যাদের ডাটা কেনা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। নিতান্তই যারা ডাটা কিনে পড়ালেখা করতে পারছে না সেসব শিক্ষার্থীদের কলেজের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন পাঠাতে অধ্যক্ষদের বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আমরা কিছু ডিভাইস কিনে কলেজে দেব। অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া হলে যাদের ডিভাইস থাকবে না তারা কলেজ থেকে নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আবার ফেরত দেবে। এমসিকিউ (মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন) পদ্ধতি আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের সেশনজট থেকে মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
জাগো নিউজ: শতভাগ শিক্ষার্থীকে অনলাইনে ক্লাস নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা আছে কি-না?
ড. মশিউর রহমান: আমরা জানি অনেক শিক্ষকের নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বাসায় বসে অনলাইন ক্লাসের জন্য ভালো স্থান ও সুযোগ থাকে না, ইন্টারনেট সমস্যা রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ১৫টি কলেজে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করে দিয়েছি। সেখানে এসে শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করে অনলাইন ক্লাস নিতে পারেন তারা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। স্বাভাবিক সময়েও শতভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি থাকে না। যেসব শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন না তাদের তালিকা তৈরি করতে আমাদের কলেজ মনিটরিং কমিটি কাজ করছে। তালিকা পেলে তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটি নিয়মিত মনিটরিং করা হবে।
এমএইচএম/এসএস/এইচএ/জেআইএম