স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর

১৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্তে অটল ইউজিসি

মুরাদ হুসাইন
মুরাদ হুসাইন মুরাদ হুসাইন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৪২ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২২

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর বিষয়ে জটিলতা এখনো কাটেনি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সবশেষ আল্টিমেটাম অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হাতে সময় রয়েছে মাত্র দুদিন। এই সময়ে এসেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ফের অপারগতা জানিয়েছে ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়। নানান অজুহাতে তারা বিভিন্ন মেয়াদে সময় বাড়াতে নতুন করে সময় চেয়েছে। সে সময়ের মধ্যে তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হবে বলে জানিয়েছে লিখিতভাবে। তবে আগের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে অপারগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্তে অটল ইউজিসি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, অনুমোদনের পর যাদের ১২ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদের আর নতুন করে সময় দিতে চায় না বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। আল্টিমেটাম অনুযায়ী, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যারা যেতে পারবে না তাদের নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অটল নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানটি। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থামূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইউজিসি সূত্র।

বিজ্ঞাপন

ইউজিসি থেকে জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের ১২ বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। আইনের তোয়াক্কা না করেই সময়সীমার পরও অনেকে ভাড়া বাসা বা অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ইউজিসি থেকে একাধিকবার আল্টিমেটাম দেওয়ার পরেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি। এমন ২২ বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে নির্দেশনা দেয় ইউজিসি। অন্যথায় নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বাতিলের নির্দেশনা জারি করা হয়। সেই হিসাবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে মাত্র দুদিন সময় রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাত্র আটটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পেরেছে। বাকি ১২ বিশ্ববিদ্যালয় তিন মাস থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছে ইউজিসিকে। এর মধ্যে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গাও কেনা হয়নি। আবার জায়গা কিনলেও অনেকে শুরু করেনি নির্মাণকাজ।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ইউজিসির সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ভবনে যেতে চাচ্ছে না। তারা বিভিন্ন অজুহাতে সময় অতিবাহিত করছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সম্প্রতি একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে আবেদনের সময়সীমার যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নমনীয়তা থাকলেও নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে কোনো পদক্ষেপ যারা নেয়নি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ বছর পার হয়েছে তাদের দফায় দফায় আল্টিমেটামের মাধ্যমে সতর্ক ও সময় দেওয়া হয়েছে। সবশেষ তাদের আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে আটটি স্থানান্তর হলেও ১৫টি এখানো যেতে পারেনি। তারা কেন যেতে পারেনি, তাদের উদ্যোগ ও চেষ্টা বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নতুন করে আর বছরজুড়ে সময় বাড়ানো হবে না। যারা আবারও লম্বা সময় চাচ্ছে তারা আসলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা তা মেনে নেবো না।

নতুন করে সময় চেয়ে আবেদনকারী ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সময় বাড়ানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরে নতুন করে আর সময় দেওয়া হবে না। যারা পদক্ষেপ নিয়েছে তাদের জন্য এক ধরনের সিদ্ধান্ত, আর যারা পদক্ষেপ নেয়নি তাদের জন্য নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস রেডি, বিদ্যুৎ সংযোগ, ইন্টেরিয়র ডিজাইন বা অন্যান্য প্রস্তুতির জন্য দুই থেকে ছয় মাস সময় চাচ্ছে তাদের এ সময় দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

‘যারা কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে। এখানো যারা স্থায়ী ক্যাম্পাসের বাইরে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে সেগুলো আগেই অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আউটার ক্যাম্পাসে কেউ শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারবে না।’

স্থানান্তরে আরও সময় চায় ১৫ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির আবেদনে জানানো হয়েছে, নিজস্ব ক্যাম্পাসে ভবন নির্মাণের জন্য রাজউকের অনুমোদনের অপেক্ষায় তারা। অনুমোদন পেলেই নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণ করে সব কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হবে। মিলিনিয়াম ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের জায়গাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে ফাউন্ডেশনের নামে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমি হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এছাড়াও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ সময় চেয়েছে তিন থেকে পাঁচ বছর।

ক্যাম্পাস স্থানান্তরে তিন বছর করে সময় চেয়েছে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

বিজ্ঞাপন

নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে দুই বছর সময় চেয়ে আবেদন করেছে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ছয় মাসের সময় চেয়ে আবেদন করেছে এবং ল্যাব স্থানান্তরে ছয় মাস সময়ের আবেদন করেছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি। রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা চেয়েছে তিন মাস এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি চেয়েছে দুই থেকে তিন মাস।

ঢাকার বাইরে ক্যাম্পাস স্থানান্তর করলে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাবে এবং অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এসব বিষয়ে ইউজিসি পরিচালক ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পাঠদানের গুণগত মান ঠিক রাখতে হবে। তাতে এমন পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। ঢাকার বাইরে এমন অনেক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেখানে কোনো আসন ফাঁকা থাকে না। আবার ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী দেশের বাইরেও যাচ্ছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান নয়, বরং তার মানের ওপর নির্ভর করে শিক্ষার্থী ভর্তির হার।

বিজ্ঞাপন

এমএইচএম/এএসএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।