শিক্ষামন্ত্রী
করোনায় শিক্ষার ক্ষতির পাশাপাশি সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে
বৈশ্বিক অতিমারি করোনায় দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে ক্ষতির পাশাপাশি অনেক সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, করোনায় পুরো বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদেরও ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষাখাতে এর চরম প্রভাব পড়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। একটি বা দুটি শিক্ষাবর্ষে তা পূরণ হবে তেমন নয়। তবে করোনাকালে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে আমরা ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থীকে পড়ালেখায় যুক্ত করতে পেরেছি। অতিমারির কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা নিজেরা চেষ্টা করে শেখার যোগ্যতা অর্জন করেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার শিখেছে। ফলে করোনায় শিক্ষার ক্ষতির পাশাপাশি অনেক সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: কেরানি নয়, দক্ষ ও স্মার্ট নাগরিক তৈরি করবে নতুন শিক্ষাক্রম
মঙ্গলবার (১৬ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘লার্নিং লস’ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। এতে ১৮ হাজার ৮৩৮ জন প্রাথমিক শিক্ষার্থীর ওপর অভীক্ষা চালানো হয়। গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর মতামত দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ মিলিয়ে বাজেট শতকরা তিন ভাগের কাছাকাছি। এটি বাড়াতে হবে। টাকার অংকে হলে ২০০৭ সালে বিএনপি-জামায়াত আমলের শেষ বছরে আমাদের মোট বাজেট ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। এখন আমাদের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নেই বাজেট প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। সে অর্থে বিনিয়োগ অনেক বেশি। বিনিয়োগ টাকার অংকে কত হচ্ছে তার চেয়েও বড় বিষয় শুধু শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগই নয়। খাদ্য, পুষ্টি, বিদ্যুৎ, আইসিটি ও যোগাযোগে যে বিনিয়োগ হচ্ছে, এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানা প্রভাব শিক্ষার ওপর আছে।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণার প্রতি জোর দেওয়ার আহ্বান
তিনি বলেন, শুধু বাজেট বরাদ্দ নয়, টাকা নয়, আমার অনেক টাকা আছে কিন্তু কারিকুলাম ভালো না, আউটকাম কি ভালো হবে? অনেক টাকা আছে, শিক্ষক ভালো না, তাহলেও আউটকাম পাবো না। টাকা আছে টেকনোলজি ব্যবহার করতে পারছি না, আবার টাকাও আছে সবকিছু আছে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছি না, তাহলেও হবে না।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বাজেটে টাকা বাড়বে, আরও অনেক বাড়বে। এখন ভালো একটি শিক্ষাক্রম হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। আমরা এখন যেসব কাজ করছি সেগুলো শেষ হলে বাজেট বাড়বে। আমি তো বলছি- শিক্ষায় একটি মেগা প্রজেক্ট হবে।
তিনি বলেন, আমরা এখন চাইছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অনেক বেশি ক্লাব গঠন করতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্লাব বেইজ হবে। দাবা ক্লাব হবে না কেন, বিজ্ঞান ক্লাব হবে না কেন, ডিবেটিং ক্লাব হবে না কেন, অন্যান্য আরও ক্লাব হবে না কেন? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এখন রোবোটিক ক্লাব হচ্ছে, নানা কিছু হচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো করছে, তাদের আরেকটু এগিয়ে দিতে হবে। শিক্ষা রিক্রুটম্যান্ট প্রক্রিয়াকে আরও ভালো করার চেষ্টা করছি। শিক্ষকদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা যত ভালো করতে পারবো, আমরা তত এগোতে পারবো।
আরও পড়ুন: এখন কোনো স্কুলে ভাঙা বেড়া-টিনের চাল নেই: শিক্ষামন্ত্রী
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমদ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (প্রাথমিক) ড. এ কে এম রেজাউল হাসান।
এমএইচএম/এমকেআর/এমএস