৩০ পেরিয়ে বাবা-মায়ের শত আদরের ‘মীনা’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০৫ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ছবির মতো সুন্দর গ্রাম। বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদিকে নিয়ে সেখানে বসবাস করে ৯ বছরের মীনা। তার আছে পোষা টিয়া পাখি, নাম মিঠু। নিজ গ্রামে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ল্যাটট্রিন বানানো, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, মেয়ে শিশুকে স্কুলে পাঠানো এবং মেয়ে ও ছেলে সন্তানের মধ্যে বৈষম্য, বাল্যবিয়ে, যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া এক চরিত্র মীনা। কাল্পনিক হলেও এ চরিত্র যেন বাস্তবের চেয়েও সত্য!

নব্বই দশকে দেশের জনপ্রিয় অ্যানিমেটেড কার্টুন সিরিজ ছিল ‘মীনা’। এ কার্টুনের সূচনা সঙ্গীত ছিল ‘আমি বাবা-মায়ের শত আদরের মেয়ে, বড় হই সকলের ভালোবাসা নিয়ে..’। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে মীনা কার্টুনের প্রথম পর্ব সম্প্রচার করা হয়। সেই হিসাবে ৩০ পেরিয়ে ৩১ বছরে পা দিচ্ছে মীনা। দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন সামাজিক পরিবর্তন সাধনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে মীনা নামক এ কার্টুন সিরিজ।

মীনা উৎসাহ-উদ্দীপনা, উচ্ছ্বল-উজ্জলতার প্রতীক। বাংলাদেশে কন্যাশিশুদের জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে ছোট্ট মীনার ভূমিকা অনেক। খুব কম সময়ের মধ্যে মীনা চরিত্রটি এ দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তাও লাভ করে। ১৩টি পর্ব দিয়ে শুরু হলেও পরে এ সিরিজটির পর্ব সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৭টি।

১৯৯১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরকে জাতিসংঘ কন্যাশিশু দশক হিসেবে ঘোষণা করেছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে শুরুতে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে সম্প্রচারিত হলেও পরে বিশ্বের ২৯টি ভাষায় অনূদিত হয় মীনা সিরিজ।

মীনা সিরিজে জনপ্রিয় আরও কয়েকটি চরিত্র ছিল। সেগুলো হলো- মীনার পিঠাপিঠি ভাই রাজু, মীনা-রাজুর ছোট বোন রানী, মীনাদের গরু লালী, ছাগল মুনমুন, মীনার দুষ্টু বন্ধু দিপু প্রমুখ।

সিরিজটির ধারাবাহিক পর্বগুলোর মধ্যে অন্যতম- মুরগিগুলো গুনে রাখো, বুদ্ধিমতি মীন, মীনা কি স্কুল ছেড়ে দেবে, মীনা ও দুষ্টু ছেলে, মীনার তিনটি ইচ্ছা, বিয়ের বয়স হয়নি, মেয়েদের যত্ন নাও, আমি স্কুল ভালোবাসি, মীনা এখন শহরে প্রভৃতি।

ইউনিসেফের তথ্যমতে, বাংলাদেশে শহরাঞ্চলের প্রায় ৯৭ শতাংশ এবং গ্রামের ৮১ শতাংশ শিশু ও কিশোর-কিশোরী মীনাকে চেনে। জনপ্রিয় এ কার্টুন সিরিজের গল্প এবং ভাষা এতটাই সাবলীল ছিল যে, মীনার সঙ্গে এ দেশের শিশু-কিশোরদের খুব দ্রুত সংযোগ স্থাপিত হয়েছিল। ছোটবেলা থেকে শিশুদের অভ্যাস গড়ে দিতে পারে এমন বিষয়গুলো সাবলীলভাবে তুলে ধরতে পারার কারণে মীনা চরিত্রটি অসাধারণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

ইন্টারনেট ব্যবহার এখন অনেক সহজলভ্য। অপেক্ষাকৃত উন্নত গ্রাফিকস সমৃদ্ধ অসংখ্য অ্যানিমেশন সিরিজ রয়েছে অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। এরপরও বর্তমান সময়েও প্রাসঙ্গিকতা ধরে রেখেছে মীনা। শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সতর্কতা, সংক্রামক জীবাণু থেকে সুরক্ষিত থাকা, সংক্রমণ এড়াতে মাস্কের ব্যবহারসহ এ সময়ের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরার চেষ্টা করছে মীনার সমসাময়িক পর্বগুলো।

দেশের বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড কিংবা দেয়াললিখনে এখনো জ্বলজ্বল করে মীনার ছবি। জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় ১৯৯৮ সালে সার্কের পক্ষ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বরকে ‘মীনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর ২৪ সেপ্টেম্বর মীনা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে।

তবে এ বছর মীনা দিবস একদিন এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) মীনা দিবস উদযাপন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এদিন সকাল ১০টায় ঢাকা পিটিআইতে দিবসের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। সভাপতিত্ব করবেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত।

এছাড়া দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে গল্প বলার আসর, প্রেরণামূলক বক্তব্য, পাপেট শো ও মাপেট শো, স্টল প্রদর্শনী, রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, যেমন খুশি তেমন সাজো ও মীনা বিষয়ক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।

এএএইচ/এমআইএইচএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।