করোনার পর প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে এসএসসি, কমেছে পরীক্ষার্থী
মহামারি করোনাভাইরাসের ধাক্কায় এলোমেলো হয়ে পড়ে দেশের শিক্ষাপঞ্জি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিখন ঘাটতি নিয়েই এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। উলটপালট হয়ে পড়ে পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচিও। পরীক্ষা নেওয়া হয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। সেই রেশ কাটিয়ে এবার পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা।
বাংলা প্রথমপত্র দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। এদিন সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত সারাদেশের তিন হাজার ৭০০টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসবে প্রায় সোয়া ২০ লাখ পরীক্ষার্থী। তবে গত বছরের চেয়ে এবার এসএসসিতে প্রায় অর্ধলাখ পরীক্ষার্থী কমেছে। আর বরাবরের মতো ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রী সংখ্যা বেশি।
শিক্ষকরা বলছেন, এবার পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা হলেও শিক্ষার্থীদের খুব একটা সমস্যা হবে না। এবার যারা এসএসসিতে অংশ নিচ্ছে, তারা নবম শ্রেণিতে উঠেছিল ২০২২ সালে। ওই সময় বছরের শুরুতে কয়েক সপ্তাহ স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছিল। তারপর স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চলেছে। ফলে শিখন ঘাটতি থাকছে না।
আরও পড়ুন: এসএসসি পরীক্ষায় বসছে সোয়া ২০ লাখ শিক্ষার্থী
জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে করোনার কারণে দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওই বছর এসএসসি পরীক্ষা শেষ করা সম্ভব হলেও আটকে যায় এইচএসসি। বাধ্য হয়ে এইচএসসিতে ‘অটো পাস’ দেওয়া হয়। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে ২০২১ সালের নভেম্বরে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়। ওই বছর শুধু তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে তত্ত্বীয় পরীক্ষা নেওয়া হয়।
এরপর ২০২২ ও ২০২৩ সালেও পুনর্বিন্যাস করা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি পরীক্ষা হয়। ২০২২ সালে এসএসসিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিতের মতো আবশ্যিক বিষয়েও পরীক্ষা হয়। তবে বিভাগভেদে অন্তত তিনটি বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হয়নি। আর সর্বশেষ ২০২৩ সালে সব বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হলেও সিলেবাস ছিল সংক্ষিপ্ত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর ধানমন্ডির গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার এসএসসি পরীক্ষার্থীরা পুরোদমে ক্লাস পেয়েছে। ঘাটতি পূরণে বিভিন্ন সময়ে ছুটি কাটছাঁটও করেছে সরকার। সবমিলিয়ে কোনো ঘাটতি থাকার কথা নয়। আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ভালো।’
তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহরীন খান রূপা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার সিলেবাস নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। ক্লাস হয়েছে পর্যাপ্ত। শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই জানতো। সেজন্য ওরা সেভাবেই নিজেদের প্রস্তুত করেছে। পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা হলেও ওরা স্বাভাবিক ফল করবে বলে আশা করছি।’
গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীও শিক্ষকদের সঙ্গে একমত। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে সমস্যাটা হবে না। ওরা খাতায় লিখবে, উত্তরপত্র মূল্যায়ন হবে। ফল প্রকাশ হলে বাকিটা তো সেখানে স্পষ্ট হবে।’
আরও পড়ুন: এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের ভেতরে প্রবেশ নিষেধ
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘দেখুন, ২০২২ সালের জানুয়ারিতেও কিন্তু করোনার কারণে কয়েক সপ্তাহ স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। আবার এবার যারা পরীক্ষা দিচ্ছে, তারা নিম্নমাধ্যমিক পর্যায় অর্থাৎ ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম করোনার মধ্যেই কাটিয়েছে। ফলে ভিত নড়বড়ে থাকার যে ব্যাপারটি, তা কিন্তু থাকছেই। তবুও আমরা আশাবাদী যে এবার পরীক্ষার্থীরা পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েই পরীক্ষায় বসছে এবং ভালো ফল করবে।’
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনায় ক্ষতির মুখে শুধু বাংলাদেশের শিক্ষা নয়, বিশ্বের সব দেশই এ সমস্যায় ভুগছে। আমরা কিন্তু এরই মধ্যে উলটপালট হওয়া সূচি স্বাভাবিক সময়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এবার পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসেই পরীক্ষা নিচ্ছি। পরিকল্পনা মেনে কাজ করায় এটা সম্ভব হয়েছে।’
এবার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কোনো শিখন ঘাটতি নেই বলে দাবি করে তপন কুমার সরকার আরও বলেন, ‘এবারের পরীক্ষার্থীরা যখন ক্লাস টেনে (দশম শ্রেণি), সেসময় জানুয়ারিতে কিছুদিন স্কুল বন্ধ ছিল। এমনিতেই আমাদের শিক্ষাবর্ষের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ক্লাস কম হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে নিরবচ্ছিন্ন ক্লাস হয়েছে। রমজানেও ছুটি কমিয়ে ক্লাস নেওয়া হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস ভালোভাবেই শিক্ষার্থীরা পড়ার সুযোগ পেয়েছে। কোনো ঘাটতি দেখছি না।’
এসএসসিতে কমেছে পরীক্ষার্থী
২০২৩ সালের চেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম। গত বছর এ পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছিল ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন। সেই হিসাবে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ৪৭ হাজার ৯৭১ জন। এ বছর অর্থাৎ, ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। পরীক্ষার্থী কমায় এবার কেন্দ্র সংখ্যাও কমেছে। গত বছর তিন হাজার ৮১০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়। এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭০০টিতে।
ছাত্রের চেয়ে ছাত্রী বেশি
গত কয়েক বছরের মতো চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায়ও ছাত্রের চেয়ে ছাত্রী সংখ্যা বেশি। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি সূত্র জানায়, ১১টি বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৯ লাখ ৯২ হাজার ৮৭৮ এবং ছাত্রী ১০ লাখ ৩১ হাজার ৩১৪ জন।
আরও পড়ুন: এসএসসি পরীক্ষায় মাঠে থাকছে ট্রাফিকের কুইক রেসপন্স টিম
৯টি সাধারণ বোর্ডের ১৬ লাখ ৬ হাজর ৮৭৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যেও ছাত্রীরা সংখ্যায় বেশি। এই ৯ বোর্ডে ছাত্র ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৭২৩ জন আর ছাত্রী ৮ লাখ ৫১ হাজার ১৫৬ জন। সে হিসাবে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রী প্রায় এক লাখ বেশি।
মাদরাসা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায়ও ছাত্রী বেশি। দাখিলে ছাত্র ৯৪ হাজার ৮৪১ আর ছাত্রী সংখ্যা ৩১ হাজার ৫৩২ জন। তবে কারিগরি বোর্ডে ছাত্রীর চেয়ে ছাত্র তিনগুণ বেশি। এ বোর্ডের অধীনে মোট এক লাখ ২৬ হাজার ৩৭৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৯৪ হাজার ৮৪১ আর ছাত্রী ৩১ হাজার ৫৩২ জন।
এএএইচ/এমকেআর/এমএস