একাদশে ভর্তি

স্মার্ট পদ্ধতিতে দফায় দফায় জটিলতা, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:০৫ পিএম, ২৮ মে ২০২৪

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণার সঙ্গে মিল রেখে এবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি আবেদনে ‘স্মার্ট পদ্ধতি’ চালু করা হয়েছে। তবে ‘স্মার্ট’ এই পদ্ধতিতে আবেদন করতে একের পর এক জটিলতায় পড়ছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কখনও সার্ভার ডাউন, কখনও লিঙ্গ নির্ধারণ জটিলতায় বন্ধ হয়ে পড়ছে আবেদন। সর্বশেষ পেমেন্ট গেটওয়েতে কারিগরি জটিলতায় আবেদন করতে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার (২৬ মে) সকাল ৮টা থেকে একাদশে ভর্তির আবেদন শুরুর কথা ছিল। প্রথম দিকে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তাতে জটিলতা দেখা দেয়। সার্ভার ডাউন হওয়ায় ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারছিলেন না শিক্ষার্থীরা। পরে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের লিঙ্গ (ছেলে নাকি মেয়ে) নির্ধারণ অপশন ঠিকমতো কাজ করছিল না।

ওইদিন সকাল ১০টার দিকে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠে বুয়েটের কারিগরি দল। এরপরও সার্ভার জটিলতায় বন্ধ থাকে ভর্তি আবেদন। ঢাকা বোর্ডের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, সন্ধ্যা ৬টায় কারিগরি সমস্যা কাটিয়ে শুরু হবে ভর্তি আবেদন। তবে ঘোষিত সেই সময়েও ত্রুটি ঠিক করা সম্ভব হয়নি। এরপর রাত ৮টা থেকে আবেদন শুরু করা যাবে বলে জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত রোববার রাত পৌনে ১১টার দিকে সার্ভার জটিলতা কাটে। তবে আবেদন করতে তখনও পদে পদে ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত একাদশে ভর্তি আবেদন করতে পারছিলেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ফের নতুন জটিলতা দেখা দেয়। এবার ত্রুটি দেখা দিয়েছে পেমেন্ট গেটওয়েতে। আবেদন ফরম পূরণ করেও ফি পরিশোধ করতে পারছেন না অনেক শিক্ষার্থী।

ভোগান্তিতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা

রাজবাড়ী পাংশার একজন অভিভাবক কয়েক দফা চেষ্টা করেও তার ছেলেকে একাদশে ভর্তির আবেদন করতে পারেননি। ফেসবুকে একটি গ্রুপে পোস্ট দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। খাইরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘নামে স্মার্ট, কাজে আনস্মার্ট। ছেলেকে কলেজে ভর্তি করাতে তিনদিন ধরে চেষ্টা করেও আবেদন করতে পারলাম না। নিজে বাসায় চেষ্টা করেছি হয়নি। এরপর স্থানীয় বাজারে কম্পিউটার দোকানে গিয়েও শুনি সার্ভারে সমস্যা। ছেলেটা ভালো রেজাল্ট করেছে। অথচ এখনো আবেদন করতেও পারলাম না। এ দায় কার?’

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করা উৎস বিশ্বাস জানান, একবার চেষ্টা করে সার্ভার ডাউন থাকায় সেই ওয়েবসাইটেই প্রবেশ করতে পারেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে চেষ্টা করে আবেদন ফরম পূরণ করলেও পেমেন্ট করতে পারছে না।

আরও পড়ুন

উৎস বিশ্বাসের মা সুমিতা রানী বলেন, ‘অনলাইনে কাজ হচ্ছে না। সরাসরি আবেদন করার সুযোগও তো নেই। ছেলেটা নিয়ে আজ দুইদিন ঘুরছি বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে। আবেদনই করা গেলো না।

বিজ্ঞপ্তিতে যা জানালো কারিগরি দল

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একাদশে ভর্তির নির্ধারিত ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি দেখা গেছে। তাতে বলা হয়েছে, গেটওয়ে পেমেন্ট সফল দেখানো সত্ত্বেও যদি আবেদনের পোর্টালে আবেদন করা সম্ভব না হয়, তাহলে দয়া করে অপেক্ষা করুন। গেইটয়েতে কারিগরি সমস্যার কারণে পেমেন্টের তথ্য আবেদনের পোর্টালে আসতে বিলম্বিত হচ্ছে।’

সেখানে আরও বলা হয়েছে, ‘আবেদনের পোর্টালে আবেদনকারীর লিঙ্গ ভুল দেখানো সংক্রান্ত একটি ত্রুটি ২৮ মে সকাল ১০টার সময় সমাধান করা হয়েছে। দয়া করে আবার দেখে নিন।’

স্মার্ট ভর্তি পদ্ধতিতে জটিলতা নিয়ে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। তারা বলছেন, ‘এ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলবে মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বোর্ড। তাদের এ নিয়ে কথা বলার এখতিয়ার নেই।’

পরে নাম-পরিচয় প্রকাশ না করে তাদের মধ্যে একজন শিক্ষক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা এবার পর্যাপ্ত সময় পাইনি। ফলে কিছু সমস্যায় পড়তে হয়েছে। প্রস্তুতির অভাব বলতে পারেন।’

তিনি বলেন, ‘সব ঠিক ছিল। আবেদন শুরুর সময়ে লিঙ্গ নির্ধারণ অপশনে গিয়ে শিক্ষার্থীরা আটকে যাচ্ছিল। ওটার সমাধান করতে গিয়ে একের পর এক জটিলতায় পড়তে হয়েছে। আজ রাতের মধ্যেই সব জটিলতার অবসান ঘটবে বলে আশা করছি।’

যা বলছেন বোর্ডের কর্মকর্তারা

একাদশে স্মার্ট ভর্তির কাজ করছে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। তারা এর আগেও ভর্তির কাজ সফলভাবে করেছে। এবার কিছুটা কারিগরি সমস্যায় পড়েছেন। তারা শিগগির ত্রুটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা।

ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা নিঃসন্দেহে স্মার্ট পদ্ধতি অনুসরণ করছি। সার্ভারে কারিগরি ত্রুটির যে বিষয়টি, তা ঘটতে পারে। এটা এক ধরনের দুর্ঘটনা বলা চলে। এক্ষেত্রে কারিগরি দল কাজ করছে। শিক্ষার্থীরা যে একেবারেই আবেদন করতে পারেনি, তা তো নয়। অনেকে আবেদন করেছে। তারপরও প্রয়োজনে আমরা এক-দুইটা দিন আবেদনের সময়সীমা বাড়িয়ে দেবো।’

বুয়েটকে আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে দেরিতে কাজ দেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভালো জানে। আমি তো দেরির বিষয়ে কিছু জানি না। তারা (বুয়েটের টিম) এ কাজ কয়েক বছর ধরে করেছেন, তারাই এবারও করছেন। কাজ দেওয়ার বিষয়টি বলতে পারবো না।’

তবে এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব, দুজন অতিরিক্ত সচিব ও কয়েকজন উপ-সচিবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউই কল রিসিভ করেননি।

৩ ধাপে আবেদন ও ফল প্রকাশের সূচি

প্রথম ধাপ: এ ধাপে আবেদন শুরু হবে ২৬ মে সকাল ৮টায়, চলবে ১১ জুন রাত ৮টা পর্যন্ত। ১২-১৩ জুন আবেদন যাচাই-বাছাই ও আপত্তি নিষ্পত্তি এবং পছন্দক্রম পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হবে। একই সময়ে (১২-১৩ জুন) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষণে ফলাফল পরিবর্তিত হওয়া শিক্ষার্থীদের আবেদন গ্রহণ করা হবে। ১৪-১৮ জুন ঈদুল আজহা উপলক্ষে অনলাইন সার্ভিস ও কল সেন্টার বন্ধ থাকবে।

আগামী ২৩ জুন রাত ৮টায় প্রথম ধাপে আবেদনকারীদের ফল প্রকাশ করা হবে। ২৩ জুন ফল প্রকাশের পর থেকে ২৯ জুন রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীর নির্বাচন নিশ্চায়ন করতে হবে। ৪ জুলাই পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রথম মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ করা হবে।

দ্বিতীয় ধাপ: ৩০ জুন শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের আবেদন। এ ধাপে আবেদন চলবে ২ জুলাই রাত ৮টা পর্যন্ত। ৪ জুলাই রাত ৮টায় দ্বিতীয় ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে। ৫ থেকে ৮ জুলাই রাত ৮টা পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের নিশ্চায়ন প্রক্রিয়া চলবে। ১২ জুলাই দ্বিতীয় মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ করা হবে।

তৃতীয় ধাপ: ৯-১০ জুলাই তৃতীয় ধাপে আবেদন শুরু হবে। ১২ জুলাই তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ এবং ১৩-১৪ জুলাই তৃতীয় ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের নিশ্চায়ন করতে হবে।

ভর্তি: ১৫ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত তিন ধাপে নির্বাচিত এবং সফলভাবে নিশ্চায়ন করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে। এরপর ৩০ জুলাই অনুষ্ঠানিকভাবে সারাদেশে একযোগে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে।

এএএইচ/এমআরএম/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।