কলকাতা বইমেলায় সাদাত হোসাইনকে ঘিরে উচ্ছ্বাস

ধৃমল দত্ত, কলকাতা থেকে
নিবিষ্ট মনে একের পর এক অটোগ্রাফ দিচ্ছেন আবার পাঠকের সঙ্গে তুলছেন সেলফি। আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় বুধবার বিকেলে পা রাখার পর যতটুকু সময় ছিলেন, এভাবেই কেটেছে এই প্রজন্মের জনপ্রিয় বাংলাদেশি কবি, লেখক ও ঔপন্যাসিক সাদাত হোসাইনের সময়।
বাংলাদেশই হোক আর কলকাতা, আসলে চিত্রটা একই। তাকে ঘিরে উন্মাদনা, উচ্ছ্বাসের কোনো কমতি নেই বইপ্রেমীদের মধ্যে। বুধবার দুপুর ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সাদাত হোসাইন ছিলেন কলকাতা বইমেলার পত্রভারতী প্রকাশনীর স্টলে। এ বছর ভারতের এই প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশ করেছে তার ‘মরণোত্তম’ ও ‘মেঘেদের দিন’র ভারতীয় সংস্করণ।
সাদাত হোসাইনের আগমনের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বইপ্রেমী ও পাঠকরা ছুটে আসেন তার কাছে। এরপর স্টলের বাইরে বসে অটোগ্রাফ দেন তিনি। এরপর বিকেল চারটায় আসেন বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে। পাঠকদের কথা মাথায় রেখে এবং অযথা ভিড় এড়াতে তার জন্য প্যাভিলিয়নের বাইরে চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে বসেই বইয়ের পাতায় অটোগ্রাফ দেন। টেবিলের সামনে আঁকাবাঁকা, লম্বা লাইন বেশ কিছুটা দূরে চলে যায়। সবার হাতেই একটি, দুটি বা তিনটি করে বই। পাঠকদের আবদারে কখনো কখনো উঠে দাঁড়িয়ে সেলফিও তুলতে হচ্ছে তাকে।
গত কয়েক বছর ধরেই কলকাতার বইপ্রেমীদের কাছে সাদাত যে ধীরে ধীরে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন, তা এ ছবিই বলে দেয়। গত বছর ৪৫তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় থিম কান্ট্রি ছিল বাংলাদেশ। সেবারও সাদাতকে ঘিরে ছিল একই চিত্র। সেই লম্বা লাইন, ধৈর্য সহকারে অধীর আগ্রহ ও উন্মাদনা।
আরও পড়ুন: বই মানুষের জ্ঞানের পরিধি বাড়ায়: রাষ্ট্রপতি
বইমেলায় প্রিয় লেখক এসেছেন। তা শুনেই আর আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না কলেজ শিক্ষার্থী প্রার্থনা রায়। বুধবার সাদাতের লেখা ‘কাজল চোখের মেয়ে’ বইটি হাতে নিয়ে ঘুরছেন, প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ নেবেন। প্রার্থনা বলেন, ‘প্রিয় লেখককে দিয়ে বই সই করাবো, দারুণ এক্সাইটিং ব্যাপার।’
এরই মধ্যে বাসার বইয়ের তাকে সাজানো আছে ‘শঙ্খচূড়’, ‘নির্বাসন’, ‘স্মৃতিগন্ধা’, ‘সে এসে বসুক পাশে’সহ সাদাতের লেখা একাধিক বই। তবুও যেন বইয়ের তাক ফাঁকা লাগছিল। তাই তো এদিন কলকাতা বইমেলায় এসে তার লেখা আরও তিনটি কবিতার বই কিনে নিলেন চন্দ্রভূষণ কীর্তনিয়া নামের সাদাতের এক ভক্ত। এগুলো হলো- ‘প্রণয়ে তুমি প্রার্থনা হও’, ‘তোমাকে দেখার অসুখ’, ‘কাজল চোখের মেয়ে’।
চন্দ্রভূষণ বলেন, ‘দুই বাংলার ভালো নিদর্শন হতে পারেন তিনি। কাঁটাতার হয়তো দুটো দেশকে আলাদা করতে পারে। কিন্তু স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণকে ভাগ করে দিতে পারেনি। রাজনৈতিক সীমারেখা যে একটা ভাষাকে আলাদা করতে পারে না, ওনার লেখাতে তারই প্রমাণ পাওয়া যায়।’
গত বছরও এসেছিলেন, তার বই কিনেছিলেন। এবারও এসেছেন, সংগ্রহে সেই সাদাতের বই। তার একটা অটোগ্রাফের জন্য এদিন প্রায় ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করছিলেন মধ্যবয়সী সোমা বিশ্বাস। তার অভিমত, ‘ভীষণ ভালো লাগে, আর সেই ভালো লাগা থেকেই বইমেলায় আসা।’
আরও পড়ুন: কাগজের দাম বাড়ার প্রভাব বইমেলায়, কেনাকাটায় হিসাবি পাঠক
তবে বিশাল এই ফ্যান-ফলোয়ার দেখে বিরক্ত নন বরং বিষয়টি উপভোগ করেন। নতুন করে অনুপ্রাণিত হন নতুন প্রজন্মের এই লেখক। সাদাত হোসাইন বলেন, ‘আমি অনুপ্রাণিত বোধ করি। একজন লেখক চান তার লেখা অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে যাক কিংবা একজন সৃষ্টিশীল মানুষের সৃষ্টি অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে যাক। আর সেটি যখন হয় এবং গ্রহণযোগ্যতা পায়; তখন তা সৃষ্টিশীল মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, আমাকেও করছে।’
সাদাত হোসাইন আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কলকাতা বইমেলায় অবস্থান করবেন। বাংলাদেশে ফিরে অংশ নেবেন ঢাকার অমর একুশে বইমেলায়।
এসইউ/এমএস