অন্ধ হয়েও সংসারের হাল ধরেছেন আব্দুর রহমান


প্রকাশিত: ০৪:৫৩ এএম, ১২ মার্চ ২০১৬

আব্দুর রহমান সিকদার (৩৪)। বাড়ি শরীয়তপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের খেলসি গ্রামে। তিনি সবার কাছে একজন অন্ধ দোকানী নামে পরিচিত। অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও জীবন সংসারে টিকে আছেন তিনি।

জানা গেছে, শরীয়তপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের খেলসি গ্রামের গরীব কৃষক আব্দুল আজিজ সিকদার ও তার স্ত্রী মনি বেগমের পঞ্চম সন্তান আব্দুর রহমান। তিনি ৮ বছর বয়সে জন্ডিস ও টাইফয়েডে আক্রান্ত হন এবং এ সময় থেকেই ক্রমশ তার চোখ অন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে লেখাপড়ার কোন সুযোগ হয়নি। শুরু হয় একক সংগ্রাম। ভাই-বোন বা কোন আত্মীয় পরিজনের সহযোগিতা ছাড়াই জীবন সংগ্রামে কঠিন বাস্তবতার মধ্যে হাবু ডুবু খেতে থাকেন রহমান। তবুও হাত পাতেননি ভিক্ষার জন্য। কাজের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৯০ সালে বড় ভাই হান্নান সিকদারের মুদি দোকানে কর্মচারী হিসেবে যোগদান করেন। শিখে নেন বিভিন্ন রকমের পণ্যের আকৃতি ও ওজন পরিমাপ পদ্ধতি। সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন মূল্যমানের নোট। এ সময় থেকেই বড় ভাই যে টাকা দিতেন তা জমাতে থাকে আব্দুর রহমান। জমানো সামান্য পুঁজি নিয়ে বড় ভাইয়ের ছেড়ে দেয়া দোকানেই ১৯৯৩ সাল থেকে ব্যবসা শরু করেন তিনি। প্রতিদিন তার দোকানে প্রায় ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা বিক্রি হয়। ফলে প্রতি তার ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা লাভ হয়। এ দিয়েই কোন রকম ৪ সদস্যের সংসারের ভার বয়ে চলেছেন আব্দুর রহমান।

Shariatpur-Ondho

অন্ধ আব্দুর রহমান বলেন, আমি আপনার চাহিদা অনুযায়ী যে কোন পণ্য মেপে সঠিকভাবে আপনার হাতে তুলে দিতে পারবো এবং টাকা গুণে বুঝে নিতে পারবো। আগে টাকা হাত দিয়ে গুণে বুঝে নিতে পারতাম। তবে বর্তমান টাকা গুণে বুঝে নিতে একটু সমস্যা হয়।

তিনি বলেণ, আমি এ পর্যন্ত কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকারি সহযোগিতা বা অনুদান পাইনি। বর্তমানে আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃচিন্তায় আছি।

তিনি আরও বলেন, আমি বাইসাইকেল ফিটিংস ও মেরামত, ইলেকট্রনিক ওয়ারিং, জাল বুনন ও গুণা দিয়ে বেড়া বুনন ইত্যাদি হাতের কাজ করতে পারি। এছাড়া ধান ভানা, বাজার করা, নিজের কাপড়-চোপড় ধোয়া ইত্যাদি কাজ আমি নিজেই করি। নিজের কাজের জন্য কারো সাহায্য প্রয়োজন হয় না।

Shariatpur-Ondho

তার স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী অন্ধ। তবুও আমি আমার স্বামীকে অনেক ভালোবাসি। তাই সংসারে অভাব থাকা সত্ত্বেও আমি তার সঙ্গে আছি। আমার স্বামী নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করেন। আমার সাহায্য তার প্রয়োজন হয় না।

বাবা আব্দুল আজিজ সিকদার বলেন, আমি দরিদ্র হওয়ায় আমার ছেলেকে কোন আর্থিক সহযোগিতা করতে পারিনি। তবে ভিক্ষা না করে পরিশ্রম করছে বলে আমার ছেলে রহমানের জন্য আমি গর্বিত।

আব্দুর রহমান সিকদারের মা মনি বেগম বলেন, আমার ছেলের পরিশ্রমের জন্য আমি গর্ব করি। দোয়া করবেন যেন ও উন্নতি করতে পারে।

ছগির হোসেন/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।