নোবেল পুরস্কারের ব্যতিক্রম ঘটনা

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:১৮ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২২

অক্টোবর শুরু মানে নোবেলের মৌসুম। এ মাসের প্রথম সোমবার থেকে ছয় দিনব্যাপী সারা বিশ্বের ছয়জন পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা শুরু হয়। নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয় নরওয়েতে। কিন্তু সাহিত্য ও অর্থনীতির মতো অন্যান্য পুরস্কার সুইডেন থেকে দেওয়া হয়।

চিকিৎসা, অর্থনীতি, শান্তি, সাহিত্য, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নসহ মোট ছয়টি বিভাগে দেওয়া হয় এই পুরস্কার। সুইডেনের বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে ও তার রেখে যাওয়া অর্থে প্রদান করা হয়। আলফ্রেড নোবেল সুইডিশ শিল্পপতি এবং ডিনামাইটের উদ্ভাবক ছিলেন। নোবেলের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়।

১৮৯৬ সালের ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেল মারা যান। সেজন্য এই তারিখেই বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। অর্থনীতি ছাড়া অন্য বিষয়গুলোতে ১৯০১ সাল থেকে পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে, কিন্তু অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রদান শুরু হয়েছে ১৯৬৯ সালে। আলফ্রেড নোবেল তার উইলে অর্থনীতির কথা উল্লেখ করেননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ১৯৪০ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত পুরস্কার প্রদান বন্ধ ছিল। প্রত্যেক বছর পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রত্যেকে একটি স্বর্ণপদক, একটি সনদ ও নোবেল ফাউন্ডেশন কর্তৃক কিছু পরিমাণ অর্থ পান। এবার প্রতিটি শাখার পুরস্কারের মূল্য ৯ লাখ মার্কিন ডলার।

তবে নোবেল পুরস্কার মৃত কাউকে দেওয়া হয় না। লরিয়েটকে অবশ্যই পুরস্কার প্রদানের সময় জীবিত থাকতে হবে। কিন্তু এর কিছু ব্যতিক্রম আছে। অতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান এর জন্য মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়া হয়। যদিও মৃত্যু পরবর্তী মনোনয়ন অনুমোদিত নয়, তথাপিও যদি প্রার্থীর মৃত্যু মনোনয়ন প্রদান ও নোবেল কমিটির পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যবর্তী সময়ে হয় তবে তা নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবে।

ইতিহাসে এই ঘটনা ঘটেছে ৪ বার ১৯৩১ সালে সাহিত্যে এরিক এক্সেল কার্লফেল্ড এবং ১৯৬১ সালে শান্তিতে জাতিসংঘের মহাসচিব ড্যাগ হেমার্শেল্ড। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত মনে করা হতো অক্টোবরে পুরস্কার ঘোষণা পর্যন্ত বিজয়ী বেঁচে থাকলে তবেই তিনি পুরস্কার পাবেন।

তবে উইলিয়াম ভিক্রী নামের একজন নোবেল বিজয়ী ১৯৯৬ সালে পুরস্কার (অর্থনীতিতে) ঘোষণার পর এবং প্রদানের আগেই মারা যান। ২০১১ সালে ৩ অক্টোবর চিকিৎসায় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। তবে এর মধ্যে কমিটি জানতেন না যে বিজয়ীদের একজন রালফ স্টেইনম্যান তিন দিন আগে মারা গেছেন। কমিটিতে রালফ স্টেইনম্যানের পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক চলছিল কারণ মরণোত্তর পুরস্কার নিয়মের পরিপন্থী। পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত অক্ষুণ্ন রাখা হয়।

নোবেল পুরস্কারের জন্য কোনো ব্যক্তিকে নিজেই আবেদন করতে হয়। মনোনয়ন গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট মনোনয়নপত্র রয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন। এর মধ্যে থাকতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, আইনপ্রণেতা, আগের নোবেল বিজয়ীও। তাছাড়া কমিটির সদস্যরাও আবেদন করতে পারেন। যদিও ৫০ বছরের আগে এসব মনোনয়নের বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা হয় না।

এর মধ্যে নির্বাচিত ৩ হাজার জনকে এই মনোনয়নপত্র দেওয়া হয় যাতে তারা তা পূরণ করে পুরস্কারের আবেদন করতে পারে। নোবেল শান্তি পুরস্কার নির্বাচনের জন্য এমন সব ব্যক্তিদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয় যারা এ বিষয়ে বিশেষ কর্তৃত্বের দাবীদার। যে বছর পুরস্কার প্রদান করা হবে তার ৩১ জানুয়ারি মনোনয়ন পত্র প্রদানের শেষ তারিখ। নোবেল কমিটি তাদের মধ্যে সম্ভাব্য ৩০০ জনকে মনোনীত করে। মনোনীতদের নাম প্রকাশ করা হয় না এমনকি তাদেরকে জানানোও হয় না যে তারা মনোনীত হয়েছেন।

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।