আয়কর দেওয়ার আগে যেসব প্রস্তুতি নেবেন

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৪৭ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০২২

যাদের বছরে করযোগ্য আয় রয়েছে তাদের অবশ্যই কর দিতে হবে। সময়মতো কর না দিলে জরিমানা সহ নানা ঝামেলায় পড়তে পারেন। জমি রেজিস্ট্রি থেকে শুরু করে ইউটিলিটি সংযোগ, ক্রেডিট কার্ডসহ ৩৮টি পরিষেবা পেতে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যাদের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা টিআইএন রয়েছে তাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। তবে রিটার্ন দাখিল করলেই যে আয়কর দিতে হবে তা নয়। কারো আয় যদি করযোগ্য না হয় তাহলে কর দেওয়ার প্রয়োজন নেই, শুধু রিটার্ন জমা দিলেই হবে।

প্রতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই পাঁচ মাস জরিমানা ছাড়া বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যায়। ৩০ নভেম্বর দেশে আয়কর দিবস হিসেবে পালিত হয়। এদিনই ব্যক্তি করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমার শেষ তারিখ।

তবে আয়কর দেওয়ার আগে বিশেষ কিছু প্রস্তুতি নিন। কারণে এসব কোনো ভুল করা চলবে না। যে কোনো ভুল করলে তা আপনাকে বয়ে বেড়াতে হবে প্রতিবছর। চলুন আয়কর দেওয়ার আগে কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে জেনে নেওয়া যাক-

>> প্রথমেই জেনে নিন আপনার করের হার। আপনি যদি ব্যক্তিশ্রেণির করদাতা হয়ে থাকেন এবং আপনার বাৎসরিক আয় ৩ লাখের বেশি হয় তাহলে আপনাকে অবশ্যই কর দিতে হবে। নির্ধারিত করসীমা পর্যন্ত শূন্য হার, পরবর্তী ১ লাখের জন্য ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ১৫ শতাংশ পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ২০ শতাংশ এবং অবশিষ্ট আয়ের উপর ২৫ শতাংশ হারে কর প্রদান করতে হবে।

>> আগেই আপনার বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব করে নিন। করসীমা, কর রেয়াত, বিনিয়োগ, জীবনযাত্রার ব্যয় বিবরণী, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিলও রিটার্নে দাখিল করতে হবে। ফলে রিটার্নে আয়-ব্যয়ের অসঙ্গতি থাকবে না।

>> কর দেওয়ার সময় যেসব কাগজপত্র ও নথি প্রয়োজন তা আগেই গুছিয়ে রাখুন। যদি চাকরিজীবী হন তাহলে ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট, সঞ্চয়পত্রের সুদের হিসাব ও সনদ, শেয়ার বিপরীতে ডিভিডেন্ট ওয়ারেন্ট সঙ্গে রাখুন।

>> যদি বাড়ির মালিক হন তাহলে ভাড়ার চুক্তিপত্র ও ভাড়া উত্তোলনের রশিদ, ব্যবসায়ী হলে আয় ব্যয়ের প্রামাণিক নথি ছাড়াও পৌর করের রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র ইত্যাদি জমা দিতে হবে।

>> কৃষি খাতে আয় থাকলে যথাযথ আয় ব্যয় এর হিসাব প্রস্তুত করে নিন।

>> সঞ্চয়পত্র/ বন্ড ইত্যাদি ক্রয় এবং প্রাপ্ত মুনাফার প্রত্যায়ন পত্র সংগ্রহ করে রাখুন ।

>> আয়কর রিটার্নের স্লিপ সংরক্ষণ করুন। কর অঞ্চলে জমার পর জমা রিসিপ্ট পাবেন। স্লিপটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ এ স্লিপটিই আপনার রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র।

>> করদাতার কিছু আয় থাকে যেগুলো করের আওতা মুক্ত। সেগুলোতে আপনাকে কর দিতে হবে না। আবার কিছু ক্ষেত্রে রেয়াত বা করছাড় পাওয়া যায়। আবার যেসব ক্ষেত্রে উৎসে কর কেটে রাখা হয়, করদাতাকে সেই উৎসে কর কাটার প্রত্যয়ন নিয়ে রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হয়। এতে উৎসে পরিশোধ করা কর সমন্বয় করে থাকেন করদাতা।

>> কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রেয়াত চাইলে তার পিতা-মাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের জন্য করমুক্ত সীমা ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে। তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা ও মাতা উভয়েই করদাতা হলে যে কোনো একজন এ সুবিধা পাবেন।

>> যদি বিনিয়োগ, শেয়ার, কৃষিসহ অন্যান্য অনুমোদিত খাতে কর রেয়াত চান সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র দাখিল করতে হবে। অন্যথায় কর রেয়াত পাওয়া যাবে না।

>> পুরোনো করদাতারা বিগত বছরের ট্যাক্স ফাইল সঙ্গে রাখুন। এ বছরের আয়-ব্যয়ের সঙ্গে বিগত বছরের কাগজপত্র মিলিয়ে নিন। আগের বছরের রিটার্নের সঙ্গে মিলিয়ে একটি খসড়া রিটার্ন তৈরি করে তারপর মূল রিটার্ন পূরণ করুন।

>> নতুন করদাতারা সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে ও যাচাই-বাছাই করে তা একটি ফাইলে যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করবেন। যাতে যে কোনো সময় যে কোনো উদ্ভূত জটিলতায় তা উপস্থাপন করতে পারেন।

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।