ওমিক্রন সংক্রমণের ঝুঁকি: রাস্তাঘাটে বেড়েছে মাস্কের ব্যবহার

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৭:৪৩ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০২২

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণের কারণে হু হু করে বাড়ছে রোগী শনাক্তের হার। এই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনসাধারণের মাঝেও উদ্বেগ বাড়ছে। ওমিক্রন সংক্রমণের ঝুঁকি রোধে রাস্তাঘাটে মাস্কের ব্যবহার বেড়েছে।

এদিকে, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের তরফ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিধিবিধান সংবলিত ১১ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু হবে। বিধিনিষেধ চলাকালে মাস্ক না পরলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা আদায় এই ১১ দফা নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বুধবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কিত ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ১ জানুয়ারি পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এরপর থেকে অব্যাহতভাবে করোনার সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ডিসেম্বরে নমুনা পরীক্ষায় পুরো মাসে ৪ হাজার ৫৮৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। কিন্তু চলতি মাসের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১২ হাজার ৮৫০ জনে দাঁড়ায়। দেশের বিভিন্ন জেলার মধ্যে ঢাকা ও রাঙ্গামাটি জেলায় করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি।

jagonews24

তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় ধরেই নেওয়া যায় হঠাৎ করে করোনার এহেন সংক্রমণ নতুন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণেই ঘটছে। এছাড়া করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক পরিধানসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করে দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধিসহ ১১ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলার অনুরোধ জানান ডা. রোবেদ।

স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রন বা ডেল্টা যে ভ্যারিয়েন্টই হোক না কেন মাস্ক পরিধানসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

এদিকে, করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির খবরে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। আজ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে আবার মাস্কের ব্যবহার বেড়েছে। রাস্তাঘাটে মাস্কের বিক্রিও বেড়েছে। সরকারি ও বেসরকারি অফিস-আদালত, শপিংমল ও বিপণি-বিতান এবং ব্যাংকে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নোটিশ ঝুলতে দেখা গেছে।

jagonews24

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় রেজওয়ান খান নামে পূবালী ব্যাংকের এক গ্রাহক জানান, বুধবার দুপুরে তিনি ব্যাংকে টাকা তুলতে যান। গাড়ি থেকে নেমে তাড়াহুড়ো করে নেমে যাওয়ায় মাস্ক পরতে ভুলে যান। ব্যাংকে প্রবেশপথে নিরাপত্তারক্ষী তাকে মাস্ক পরিধান করে ব্যাংকে প্রবেশ করার অনুরোধ করেন। পরে ড্রাইভারকে ফোন করে মাস্ক আনিয়ে পরিধান করে তিনি ব্যাংকের ভেতরে যান।

রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে, পথচারী, রিকশা, প্রাইভেটকার ও বাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের যাত্রীদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক রয়েছে। বিশেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সবার মুখেই মাস্ক দেখা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সিনথিয়া জানান, নিজের ও অন্যদের নিরাপত্তার জন্যই তিনি নিয়মিত মাস্ক পরেন। ওমিক্রনের সংক্রমণ হার খুব বেশি তাই সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

jagonews24

শহরের বিভিন্ন সিগন্যালে ট্রাফিক পুলিশকেও মাস্ক পরিধান করে ডিউটি করতে দেখা যায়। তবে গণপরিবহনের মধ্যে অধিকাংশ বাসের হেলপার ও ড্রাইভারকে মাস্ক পরিধান করতে দেখা যায়নি।

দেশব্যাপী ওমিক্রন প্রতিরোধে ১১ দফা নির্দেশনা জারি করেছে সরকার, যা ১৩ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। সোমবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসজনিত রোগের (কোভিড-১৯) নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে এ রোগের সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক কাৰ্যাবলি/চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো।

jagonews24

নির্দেশনাগুলো হলো

১. দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলক সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

২. অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।

৩. রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনার টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।

jagonews24

৪. ১২ বছরের বেশি বয়সী সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

৫. স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টগুলোতে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতেও আগত ট্রাকের সঙ্গে শুধু চালক থাকতে পারবে। কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

৬. ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্ব প্রকার যানের চালক ও সহকারীকে আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে।

jagonews24

৭. বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।

৮. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরার বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

৯. সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে তারা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা গ্রহণ করবে।

১০. উন্মুক্ত স্থানে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ-পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।

১১. কোনো এলাকায় ক্ষেত্রবিশেষ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

এমইউ/এমআরআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।