জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনতে চায় সরকার
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকাদান নিশ্চিত ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে দেশব্যাপী আরও অধিকতর ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ পরিচালনা করবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে যে কোনো দেশের ৭০ শতাংশ জনগণকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হলে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়। সে হিসেবে দেশের ১১ কোটি ৭০ লাখ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে হবে। এ লক্ষ্য পূরণে সরকার নানা পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচিকে আরও জোরদার করতে চাইছে।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে ১২ বছর বয়সী থেকে শুরু করে বৃদ্ধদের মধ্যে কেউ টিকা গ্রহণ থেকে বাদ পড়েছে কি না সে সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও তাদের প্রত্যেককে টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি দেশের ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সরকার বিনামূল্যে টিকাদান করছে। বয়সের সীমা কমানো হয়েছে। স্কুল শিক্ষার্থীদের সহজ উপায়ে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ, যেমন দোকান কর্মচারী, রেস্তোরাঁর কর্মী, ভবঘুরে, বস্তিবাসী, গার্মেন্টসকর্মী ও গৃহপরিচারিকারা টিকা গ্রহণ থেকে বাদ পড়েছে। তাদের সহজ উপায়ে টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি জানান, সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতি ওয়ার্ডে ৬টি থেকে ৮টি কেন্দ্র করা হবে। মাইকিং করে এ শ্রেণির জনগণকে টিকা নিতে আসতে আহ্বান জানানো হবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই তারা এসে টিকা নিতে পারবেন, প্রয়োজনে পরে রেজিস্ট্রেশন করে নেবেন। এছাড়া ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেলের শিক্ষার্থী, যারা দেশীয় কোনো স্কুলে নেই (এ কারণে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হলেও তারা নিতে পারেনি) ও টিকা নিতে পারেনি এবং যাদের বয়স ১২ বছরের বেশি তারা টিকার জন্য নিবন্ধন করে নিবন্ধন কার্ড নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার নির্দিষ্ট টিকাদান কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে পারবে। যারা স্কুল থেকে ড্রপআউট হয়েছে তারাও টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবে।
দেশে গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাাতলে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। শুরুর দিকে শুধুমাত্র ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হতো। পরবর্তীতে মর্ডানা, ফাইজার, সিনোফার্ম এবং সিনোভ্যাকের টিকা দেওয়া শুরু হয়। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে ১৬ কোটি ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৯৪ ডোজ টিকা দেওয়া হয়।
সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলমগীর বলেন, জানুয়ারির প্রথমে বলেছিলাম তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে করোনার সংক্রমণ বাড়বে। বাস্তবেও তাই দেখা গেছে। এখন যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে সেটি আগামী ৭ থেকে ১০ দিন বাড়বে। বিশ্বে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, এরপর থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করবে।
তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকায় করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ৮০ শতাংশ করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে গেছেন। অবশিষ্টরা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রয়েছেন। এখন সারাদেশে যেটা ছড়াচ্ছে তাতে ডেল্টা রিপ্লেসড হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রন মৃদু এ কথা বলার কারণে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে ঢিলেমি পড়েছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে যদি ৫ জনে ১ জন হাসপাতালে যায় তাহলে ওমিক্রনে ২৫ জনে ১ জন যাবে। যেভাবে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে (গত এক সপ্তাহে ১ লাখ রোগী শনাক্ত) তাদের মধ্যে ১/২ শতাংশ হাসপাতালে গেলেও হাসপাতালে রোগীকে জায়গা দেওয়া যাবে না। তাছাড়া বর্তমানে হাসপাতালের আউটডোরে রোগীর চাপ বেড়েছে। সার্বিকভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চাপ তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারিভাবে বিপুল সংখ্যক টিকা দেওয়া হচ্ছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে ১০ কোটি মানুষকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হবে। এখনো যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে তাদের অধিকাংশই (৯০ শতাংশ) টিকা গ্রহণ করেনি বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। মানুষকে টিকাদানে উৎসাহিত করতে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা প্রয়োজন।
এমইউ/এমএইচআর/জেআইএম