কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ফ্রিতে ডায়ালাইসিস পাচ্ছেন হতদরিদ্ররা

আবদুল্লাহ আল মিরাজ
আবদুল্লাহ আল মিরাজ আবদুল্লাহ আল মিরাজ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৪০ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫
হাসপাতালে সেবা নিচ্ছেন দুই রোগী, ছবি: জাগো নিউজ

সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা জাহানারা বেগম ডলি। প্রায় নয় বছর ধরে কিডনি জটিলতায় ভোগা এই নারী ২০২৪ সালে সন্তানও জন্ম দিয়েছেন। যেটি সাধারণত হয় না। হতদরিদ্র এই নারী চিকিৎসা নিচ্ছেন সিলেটের কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে। ৪০ বছর বয়সী ডলির প্রতিমাসে দুটি ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। এর একটি পান ফ্রি, অন্যটি পান ভর্তুকি মূল্যে।

তিনি বলেন, আমার এই ডায়ালাইসিস চলাকালেই গর্ভধারণ করি। সুস্থভাবে সন্তান জন্মদান করি। এসময়ে আমাকে একেবারেই কোনো টাকা খরচ করতে হয়নি। ডায়ালাইসিসও ফ্রি দিয়েছে তারা। আমার বাচ্চাও সুস্থ আছে।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৫০)। এক বছর ধরে কিডনি সমস্যায় ভোগা এই ব্যক্তিরও মাসে দুইবার ডায়ালাইসিস করাতে হয়। শনিবার ছোট ভাই আলী হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে আসেন তিনি। আলী হোসেন বলেন, মাসে ভাইয়ের দুবার ডায়ালাইসিস করাতে হয়। চিকিৎসার জন্য সহায়-সম্বল যা ছিল বিক্রি করতে হয়েছে। খোঁজ পাওয়ার পর এই হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাচ্ছি। এখানে প্রতি ডায়ালাইসিসে ১ হাজার ৬০০ টাকা লাগে। অন্য জায়গায় ৩ হাজার টাকার মতো লাগতো।

সিলেটের কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালে ছয়টি ডায়ালাইসিস মেশিন নিয়ে হাসপাতালটির যাত্রা শুরু হয়। রোগীদের গত সাত বছরে ৭০ হাজার ২৪১ বার ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালটি গতবছর ১৮ হাজার ৩২৪টি ডায়ালাইসিস সেশন সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়। কিডনি ফাউন্ডেশনের হাসপাতালে আসা ৫৫ ভাগ ডায়ালাইসিস সেশন ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ৩২টি ডায়ালাইসিস মেশিনে তিন শিফটে প্রতিদিন শতাধিক রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালটির নির্বাহী পরিচালক ডা. মুশফিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এখানে গরিব ও অসহায় রোগীরা ভর্তুকির মাধ্যমে ধাপে ধাপে ৫০০, ১০০০ ও ১৫০০ টাকা জমাদানের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস করাতে পারেন। গরিব রোগীদের ৫৬ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে ডায়ালাইসিস দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১২ শতাংশ রোগীকে বিনামূল্যে ডায়লাইসিস সেবা দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের সার্বক্ষণিক সেবাদানে একজন শিশু কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞসহ ৯ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ আশপাশের জেলার মানুষ সেবা নিতে আসেন। তবে চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করতে পারছি।

সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফ মো. রেজা জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৮ সালে চালু হওয়া উপ-শহরের কেন্দ্রটি গত সপ্তাহে এখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। নতুন এই হাসপাতালে বর্তমানে ১৮০ জন কিডনি রোগী নিয়মিত ডায়ালাইসিস সেবা নিচ্ছেন।

হাসপাতালটিকে সমাজের বিত্তশালীদের জন্য এগিয়ে এসে সমাজের উপকার করার একটি বড় উদাহরণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, এ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ফান্ডের বেশিরভাগই সিলেটের বিত্তশালীরা দিয়েছেন।

এদিকে শনিবার এক ভিডিওবার্তায় কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এ উদ্যোগে সবচেয়ে বেশি সুবিধাবঞ্চিতরা উপকৃত হচ্ছে।

এএএম/এমএইচআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।