জাতীয়

রঙিন পোশাকে বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠেছে শিশুরা

রঙিন পোশাকে বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠেছে শিশুরা

ঈদুল আজহা মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। উৎসব-আনন্দে মেতে ওঠেন নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। তবে এই উৎসব সবচেয়ে বেশি প্রাণ পায় শিশুদের চোখে।

Advertisement

তারা অপেক্ষা থাকে ঈদের দিনের। ঈদের নতুন জামা, সালামি, আতর, টুপি, মিষ্টি খাবার আর খেলার আনন্দের জন্য। ঈদের আগের রাত থেকেই তাদের চোখে-মুখে ভেসে ওঠে খুশির ছটা। ঈদের দিনে সকালে নামাজ পড়ে তারা আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠে। কেউ কেউ ছুটে যায় প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি, খেলে বন্ধুদের সঙ্গে, খায় পছন্দের খাবার আর সঞ্চয় করে আনন্দময় স্মৃতি।

রাজধানীর রামপুরা এলাকার বাসিন্দা সাত বছর বয়সী জারিফ ঈদের দিন পরেছে গোলাপি রঙের পাঞ্জাবি। বাবার সঙ্গে ঈদগাহে গিয়ে নামাজ আদায় করে, এরপর বাসায় ফিরে খেয়েছে সেমাই। এরপর দেখেছে তাদের কেনা গরু কোরবানি হতে। তারপর বন্ধুদের সঙ্গে খেলায় মেতে ওঠে এই শিশু।

জারিফ বলে, আমি আজ পাঁচজনের কাছে সালামি পেয়েছি। দাদু ৫০০ টাকা দিয়েছে। আব্বু-আম্মু ১০০ টাকা করে দিয়েছে। চাচা দিয়েছেন ২০০ টাকা। এছাড়া ভাইয়া ১০০ টাকা দিয়েছে। এই টাকা দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করবো, বিভিন্ন মজার খাবার খাবো।

Advertisement

পাশে দাঁড়ানো জারিফের মা বললেন, ঈদের এই সময়টা শিশুদের জীবনে সবচেয়ে আনন্দের। আমরা চেষ্টা করি ওকে সব দিতে, যেন ওর আনন্দ পূর্ণ হয়। ঈদের আনন্দে গতকাল থেকে ঠিকমতো ঘুমায়নি। বাসা থেকে কয়েকবার নিচে নেমে গরু দেখে গেছে। ওদের আনন্দই আমাদের আনন্দ।

রামপুরা মোল্লাবড়ি এলাকায় রঙিন পোশাক পরে খুনসুটিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় কয়েকজন শিশুকে। এদের একজন হুমায়রা জানায়, আজ আমাদের অনেক আনন্দ হচ্ছে। আম্মু বাসায় সেমাই, পায়েসসহ অনেক কিছু রান্না করেছে। সেসব মজাদার খাবার খেয়ে এখন বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে এসেছি। আজ সারাদিন খেলাধুলা করবো, পড়ার কোনো চাপ নেই।

ঈদের নতুন জামা শিশুদের জন্য এক অনন্য উৎসাহের বিষয়। অভিজাত শপিংমল হোক বা ফুটপাতের দোকান প্রত্যেক বাবা-মা চেষ্টা করেন সন্তানের পছন্দ অনুযায়ী কিছু কিনে দিতে। রিকশাচালক জামাল হোসেন বলেন, আমার একটাই ছেলে। আমাদের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই। ছেলের জন্য একটা নতুন জামা ও একটা প্যান্ট কিনে দিয়েছি। ছেলে আজ ওই জামা-প্যান্ট পরে ঈদের নামাজ আদায় করেছে।

তিনি বলেন, ঈদের নামাজে শেষে ছেলেকে বাসায় রেখে আমি এখানে মাংস কাটার কাজে এসেছি। আজ আমার মতো অনেক রিকশাচালক মাংস কাটার কাজ করছে। মাংস কাটা শেষে এখান থেকে যে মাংস পাবো, তা বাসায় নিয়ে গিয়ে রান্না হবে। এই মাংস দিয়ে সবাই পেট ভরে খাবো। আমার যেটুকু সামর্থ্য আছে, তাই দিয়ে ছেলেকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করি। ওর জন্যই তো এত কষ্ট করছি।

Advertisement

ঈদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো খাবার। শিশুরা অপেক্ষা করে সেমাই, পায়েস, ফিরনি, কাবাব, বিরিয়ানি, চিকেন রোস্ট, ফালুদা ইত্যাদি খাবারের জন্য। অনেক শিশু নিজের মায়ের রান্নার পছন্দের তালিকাও বানিয়ে ফেলে আগেভাগেই।

১০ বছর বয়সী মাসকায়েত বললো, আমি মাকে বলেছি ঈদে কাচ্চি, জর্দা, রোস্ট রান্না করতে। আম্মু বলেছে আজ কাচ্চি রান্না করতে পারবে না, আগামীকাল কাচ্চি রান্না করবে। আজ মাংস ভুনা, পোলাও, জর্দা রোস্ট রান্না হবে। আম্মু রান্না শুরু করে দিয়েছে। আমার দুই বন্ধুকে দাওয়াত দিয়েছি খেলাধুলা করে আমরা একসঙ্গে যেয়ে খাবো।

ঈদের আনন্দে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ বোধহয় সালামি। আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে পেয়ে সেই টাকা দিয়ে কেউ কেনে খেলনা, কেউ চকলেট বা আইসক্রিম কিনছে। রাফি নামের এক শিশু জানাল, সে এবার এক হাজার টাকা সালামি পেয়েছে। এই টাকার একটি অংশ দিয়ে একটি রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি কিনবে। বাকি টাকা দিয়ে দোকান থেকে ইচ্ছামতো খাবার কিনে খাবে।

এমএএস/বিএ/জেআইএম