জাতীয়

ভিড় নেই হাতিরঝিলে, স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে পারছেন আগতরা

ভিড় নেই হাতিরঝিলে, স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে পারছেন আগতরা

গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীর বিনোদনপ্রেমীদের কাছে হাতিরঝিল হয়ে উঠেছে অন্যতম প্রধান বিনোদনকেন্দ্র। ঈদসহ যে কোনো উৎসবের দিনে হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে হাতিরঝিল। তবে এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। ঈদের দিনে রাজধানীর জনপ্রিয় এই বিনোদনকেন্দ্রটিতে দর্শনার্থীর উপস্থিতি তুলনামূলক কম।

Advertisement

শনিবার (৭ জুন) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে হাতিরঝিলে গিয়ে দেখা যায়, হাতে গোনা অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ ঘোরাফেরা করছেন। এদের বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী। কয়েকটি শিশুকেও দেখা গেলো বাবা-মায়ের সঙ্গে হাতিরঝিলে ঘুরতে এসেছে।

হাতিরঝিলের মূল প্রবেশপথ, লেকপাড়, সেতু এবং নৌকা ভ্রমণের ঘাটগুলো ছিল অনেকটাই ফাঁকা। যেখানে অন্যবছর এই সময়ে প্রচণ্ড ভিড়ে হাঁটাও দায় হয়ে পড়ে, সেখানে এবার ছিল বেশ প্রশান্তিময় পরিবেশ।

কয়েকজন দোকানি এবং দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দর্শনার্থীর সংখ্যা রোজার ঈদের তুলনায় খুবই কম। রোজার ঈদে দুপুরের পরপরই হাতিরঝিলে দর্শনার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল।

Advertisement

কোরবানির ঈদ হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ মাংস কাটাকাটি এবং আনুষঙ্গিক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। এ কারণে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থী খুবই কম। তবে সন্ধ্যার পর দর্শনার্থী কিছুটা বাড়তে পারে। আগামীকাল হাতিরঝিল দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ থাকবে বলে আশা করছেন দোকানিরা।

মানুষের উপস্থিতি কম থাকলেও হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা কিছু দর্শনার্থী এই সুযোগকেই দেখছেন স্বস্তির নিঃশ্বাস হিসেবে। তেজগাঁও থেকে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে আসা ফেরদৌস হাসান বলেন, যে কোনো ছুটির দিনেই হাতিরঝিলে মানুষের বেশ ভিড় দেখা যায়। মাঝেমধ্যে এত ভিড় হয় যে হাঁটা যায় না। তবে আজ মানুষের উপস্থিতি খুব কম। এতে বেশ আরাম করে লেকপাড়ে ঘোরাঘুরি করা যাচ্ছে।

আরও পড়ুনভিড় নেই চিড়িয়াখানায়‘৮০০ টাকা হলেও কোরবানির গরুর গোস্ত তো কিনলাম’

রামপুরা থেকে ঘুরতে আসা আফসানা মিম বলেন, মেয়ে দুটি ঘুরতে আসার জন্য খুব বায়না ধরেছিল। ওর আব্বু কোরবানির মাংস নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। মেয়েরা কান্নাকাটি করছিল, তাই ওদের আব্বু আমাকেই ঘুরতে নিয়ে আসতে বলেছেন। ওদের আবদার পূরণ করতে হাতিরঝিলে এসেছি।

তিনি বলেন, যে কোনো উৎসবের দিনে হাতিরঝিলে মানুষের প্রচণ্ড ভিড় থাকে। এমনকি শুক্রবারও মানুষের অনেক ভিড় থাকে এখানে। কিন্তু আজ ভিড় অনেক কম। ভিড় তো দূরের কথা, মানুষ নেই বললেই চলে। এর মূল কারণ আজ সবাই কোরবানি নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের ধারণা আগামীকাল হাতিরঝিলে ভিড় বাড়বে।

Advertisement

ধানমন্ডি থেকে ঘুরতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাবিদ আল সাদ বলেন, আজ ঈদের দিন তাই বন্ধুরা মিলে ঘুরতে এসেছি। হাতিরঝিলে ঈদের দিন সাধারণত মানুষের যেমন উপস্থিতি থাকে আজ সে তুলনায় খুবই কম। মানুষ কম থাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাঘুরি করা যাচ্ছে। তবে এত কম মানুষ দেখে ভালো লাগছে না।

হাতিরঝিলের পার্কের পাশেই ফুচকা বিক্রি করেন মো. ইসরাফিল। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আজ কোরবানির ঈদ। বেশিরভাগ মানুষ মাংস নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। এ জন্য হাতিরঝিলে দর্শনার্থীর সংখ্যা কম। আমি ৫ বছর ধরে এখানে ফুচকা বিক্রি করছি। ঈদের দিন মানুষের এত কম উপস্থিতি আগে দেখিনি। আমাদের ধারণা সন্ধ্যার পরে দর্শনার্থীর উপস্থিতি বাড়বে।

ইসরাফিল আরও বলেন, আজ উপস্থিতি কম থাকলেও আগামীকাল হাতিরঝিলে অনেক ভিড় হবে বলে ধারণা করছি। গত বছরও দেখেছি কোরবানির ঈদের পরদিন হাতিরঝিলে ভিড় বেশি হয়েছে।

ঝালমুড়ি বিক্রেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, কোরবানির ঈদ হওয়ার কারণে আজ মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। তাছাড়া এখনো রোদ রয়েছে, এ কারণেও মানুষ কম এসেছে। রোদ পড়ে গেলে সন্ধ্যার দিকে মানুষের ভিড় বাড়বে বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই দেখছি শুক্রবার এবং যে কোনো উৎসবের দিন হাতিরঝিলে অনেক মানুষের ভিড় হয়। আমাদের বিক্রিও বাড়ে। তবে আজ মানুষের আনাগোনা কম। মাংস নিয়ে ব্যস্ত থাকায় হয়তো মানুষ ক্লান্ত, এ জন্য আজ ঘুরতে কম বের হয়েছে। আশা করছি আগামীকাল ভিড় বাড়বে।

এমএএস/কেএসআর/জেআইএম