জাতীয়

সন্ধ্যার পর নিজ ঘরেই অনিরাপদ বোধ করেন সাড়ে ৭ শতাংশ নাগরিক

সন্ধ্যার পর নিজ ঘরেই অনিরাপদ বোধ করেন সাড়ে ৭ শতাংশ নাগরিক

দেশে সন্ধ্যার পর নিজ বাড়িতে নাগরিকদের নিরাপত্তাবোধের হার ৯২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অর্থাৎ, সন্ধ্যার পর নিজের ঘরেই অনিরাপদ বোধ করেন দেশের সাড়ে ৭ শতাংশ নাগরিক। ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকার আশপাশে একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। তবে, পুরুষদের ৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশের তুলনায় নারীরা (৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ) এক্ষেত্রে কম নিরাপদ বোধ করেন।

Advertisement

শহরাঞ্চলের নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ (৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ) গ্রামীণ এলাকার নাগরিকদের (৮৫ দশমিক ৩০ শতাংশ) তুলনায় কিছুটা কম। অন্যদিকে, সন্ধ্যার পর নিজ বাড়িতে নারীদের নিরাপত্তাবোধের হার ৯১ দশমিক ৮২ শতাংশ ও পুরুষের ক্ষেত্রে ৯৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

শনিবার (১৪ জুন) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস)’ রিপোর্ট প্রকাশ করে। ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সময়ে দেশব্যাপী ৬৪ জেলার ১ হাজার ৯২০টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট থেকে ৪৫ হাজার ৮৮৮টি থানার ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী মোট ৮৪ হাজার ৮০৭জন নারী-পুরুষ উত্তরদাতার সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার এবং বৈষম্য বিষয়ক এসডিজি ১৬ এর ছয়টি সূচকের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। জরিপের প্রশ্নপত্র জাতিসংঘ থেকে নির্ধারিত আন্তর্জাতিক মান ও পদ্ধতি অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে।

বিবিএস জানায়, রাজনৈতিক প্রভাবের ক্ষেত্রে ২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন যে, তারা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতে পারেন। এক্ষেত্রে শহর ২৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ ও গ্রাম ২৬ দশমিক ৯৪ শতাশের এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য না থাকলেও লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য রয়েছে। এখানে পুরুষের ক্ষেত্রে ৩১ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং নারীর ক্ষেত্রে ২৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। অনুরুপভাবে ২১ দশমিক ৯৯ শতাংশ নাগরিক মনে করেন যে, তারা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। এই হার নারীর ক্ষেত্রে ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ ও পুরুষের ক্ষেত্রে ২৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

Advertisement

সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ৪৭ দশমিক ১২ শতাংশ নাগরিক গত ১ বছরের মধ্যে অন্তত এক বার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা নিয়েছেন। সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ নাগরিকের মতে ওই স্বাস্থ্যসেবা সহজে প্রাপ্তিযোগ্য এবং স্বাস্থ্যসেবার খরচ সামর্থের মধ্যে ছিল।

শিক্ষাক্ষেত্রে দেখা যায়, ৪০ দশমিক ৯৩ শতাংশ নাগরিকের কমপক্ষে একটি শিশু সরকারি প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। এর মধ্যে ৯৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ নাগরিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহজে প্রবেশযোগ্য বলে তারা মনে করেন। যে কোনো ধরনের যানবাহনে বা পায়ে হেঁটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো যায়। ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশ নাগরিক রিপোর্ট করেন যে শিক্ষাব্যয় সামর্থের মধ্যে ছিল, যেখানে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ।

অন্যদিকে, প্রাথমিকে ৬৮ ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন শিক্ষার মান মানসম্মত ছিল।

অন্যান্য সরকারি সেবার (পরিচয়পত্র/নাগরিক নিবন্ধন) ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৮ দশমিক ১২ শতাংশ সেবার প্রাপ্যতা ও ৮৬ শতাংশ সেবাপ্রাপ্তি ব্যয় সামর্থের মধ্যে ছিল মনে করেন। কার্যকর সেবাদান প্রক্রিয়া, সম-আচরণ, সময়মতো সেবাদানে সন্তুষ্টির হার ৬২ দশমিক ৬০ শতাংশ।

Advertisement

গত দুই বছরে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বিবাদ বা বিরোধের মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৬০ শতাংশ নাগরিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আনুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪১ দশমিক ৩৪ শতাংশ আনুষ্ঠানিক (আদালত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইত্যাদি) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন। ৬৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক (কমিউনিটি নেতা, আইনজীবী ইত্যাদি) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন।

এমওএস/এএমএ/জেআইএম