ভারতের প্রধান বিচারপতির দিকে জুতা ছুড়ে মারলেন আইনজীবী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৫৬ পিএম, ০৬ অক্টোবর ২০২৫
সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাইয়ের দিকে জুতা ছুড়ে মারেন কিশোর রাকেশ নামের এই আইনজীবী/ ছবি: হিন্দুস্তান টাইমস

ভারতের সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাইয়ের দিকে জুতা নিক্ষেপ করেছেন এক প্রবীণ ব্যক্তি। সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে আদালতে এ ঘটনা ঘটে। তবে জুতাটি গাভাইয়ের বেঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছায়নি ও নিরাপত্তাকর্মীরা ঘটনাস্থলেই অভিযুক্তকে আটক করেছেন।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার সময় সম্পূর্ণ শান্ত ছিলেন প্রধান বিচারপতি গাভাই। তিনি বলেন, ‘আমি এমন ঘটনায় প্রভাবিত হওয়ার মানুষ নই। শুনানি চলুক। এরপর কোনো বিরতি ছাড়াই তিনি শুনানি চালিয়ে যান।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দিনের প্রথম মামলার শুনানি শুরু হতেই এক প্রবীণ ব্যক্তি হঠাৎ চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘সনাতনের অপমান ভারত সহ্য করবে না!’ এরপর তিনি জুতা ছুড়ে মারেন প্রধান বিচারপতির দিকে। দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আদালতের নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে আটক করে নিয়ে যান।

জানা গেছে, আটক ব্যক্তির কাছে সুপ্রিম কোর্টের ‘প্রক্সিমিটি কার্ড’ ছিল, যা সাধারণত আইনজীবী ও আদালতের কর্মীদের দেওয়া হয়। ওই কার্ডে নাম লেখা ছিল ‘কিশোর রাকেশ’। কেন তিনি প্রধান বিচারপতিকে লক্ষ্য করে এমন কাজ করলেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। নিরাপত্তা সংস্থা তার উদ্দেশ্য জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

ঘটনার সময় আদালতে উপস্থিত থাকা এক আইনজীবী জানান, প্রধান বিচারপতি পুরো সময়ই স্বাভাবিক ছিলেন এবং কোনো উত্তেজনা প্রকাশ করেননি।

এদিকে, আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং বলেন, ঘটনাটি গভীরভাবে তদন্ত করা উচিত। তিনি বলেন, ওই আইনজীবীর নাম প্রকাশ করতে হবে ও তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এটি ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ওপর প্রকাশ্য বর্ণবাদী আক্রমণ বলে মনে হচ্ছে। আদালতের মর্যাদা রক্ষার্থে বিচারকদের একযোগে নিন্দা জানানো উচিত।

সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি গাভাই এক মন্তব্যের কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। খাজুরাহোর ভগবান বিষ্ণুর ভগ্নমূর্তি পুনর্নির্মাণে আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে করা এক জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে তিনি মন্তব্য করেন, যান, দেবতার কাছেই বলুন তিনি যেন ব্যবস্থা নেন।

এ মন্তব্য ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই তার বিরুদ্ধে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগ তোলেন। পরে প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট করে বলেন, অনেকে আমাকে জানিয়েছেন, আমার মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। আমি সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

এ প্রসঙ্গে আদালতে উপস্থিত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, সামাজিক মাধ্যমে বিষয়গুলো প্রায়ই অতিরঞ্জিতভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আগে আমরা জানতাম নিউটনের সূত্র- প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান প্রতিক্রিয়া হয়; এখন দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিটি ক্রিয়ার সমান বা অপ্রতুল নয়, বরং অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া হয়।

এসময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, আমরা প্রতিদিনই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন এক ‘বেপরোয়া ঘোড়া’। এটিকে বাগে আনার কোনো উপায় নেই।

সূত্র: এনডিটিভি

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।