আশ্রয়প্রার্থীদের মামলা শুনানি ছাড়াই বাতিল করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে হাজারো আশ্রয়প্রার্থীর (অ্যাসাইলাম) মামলা বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিবাসন আদালতে চলমান অনেক আশ্রয় মামলা শুনানি ছাড়াই বাতিল করার আবেদন জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)। তাদের যুক্তি—এই আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশের বদলে অন্য কোনো দেশে পাঠানো সম্ভব।
আইসিই-এর আইনজীবীরা বিচারকদের কাছে অনুরোধ করছেন, যেন মামলাগুলো মূল বিষয়ে শুনানি না করেই খারিজ করা হয়। একই সঙ্গে তারা প্রস্তাব দিচ্ছেন, আশ্রয়প্রার্থীদের গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, ইকুয়েডর কিংবা উগান্ডার মতো দেশে পাঠানো হোক।
তবে হোয়াইট হাউজ, আইসিই কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এই উদ্যোগ এমন এক সময় নেওয়া হলো, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৬ সাল থেকে আরও কঠোর অভিবাসন নীতি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ জন্য নতুন করে বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যার আওতায় আরও বেশি কর্মস্থলে অভিযান চালানো হবে। তবে এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে সমালোচনা ও রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে।
এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বড় বড় শহরে অতিরিক্ত অভিবাসন কর্মকর্তাদের মোতায়েন করেছে। এসব অভিযানে অনেক এলাকায় বাসিন্দাদের সঙ্গে উত্তেজনাও দেখা গেছে। চলতি বছর কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হলেও, অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ খামার ও কারখানাগুলোতে তুলনামূলকভাবে অভিযান এড়িয়ে চলা হয়েছিল।
কংগ্রেসে পাস হওয়া নতুন ব্যয় প্যাকেজ অনুযায়ী, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট ও বর্ডার প্যাট্রোল ২০২৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অতিরিক্ত ১৭০ বিলিয়ন ডলার পাবে। বর্তমানে এই সংস্থাগুলোর বার্ষিক বাজেট প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলার।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন তহবিল দিয়ে হাজার হাজার নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ, নতুন আটক কেন্দ্র চালু, আরও বেশি অভিবাসী আটক এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় অবৈধ অভিবাসীদের খুঁজে বের করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে, আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে এই কঠোর নীতির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া বাড়ছে। অভিবাসী অধ্যুষিত শহর মিয়ামিতে সম্প্রতি প্রায় ৩০ বছর পর একজন ডেমোক্র্যাট মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, যা অনেকের মতে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রতিক্রিয়া।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাইক মাদ্রিদ বলেন, এখন বিষয়টি শুধু অভিবাসন নয়, এটি মানুষের অধিকার, আইনি প্রক্রিয়া এবং সাধারণ মানুষের এলাকায় অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের প্রশ্নে পরিণত হয়েছে।
জনমত জরিপেও এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। মার্চ মাসে অভিবাসন নীতিতে ট্রাম্পের সমর্থন যেখানে ছিল ৫০ শতাংশ, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তা নেমে এসেছে ৪১ শতাংশে।
সূত্র: রয়টার্স
এমএসএম