ভারতে সংক্রমণ বাড়ছে বেশি, উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা
গোটা বিশ্বেই ভয়ানক থাবা বসিয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। তবে ইউরোপ-আমেরিকায় ভয়ানক তাণ্ডব চালানোর পর এখন এশিয়া-আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে ভয়াবহতা ছড়াচ্ছে এ ভাইরাস। যদিও চীন এবং ইটালির মতো দেশগুলো পরিস্থিতি অনেকটাই আয়ত্তে এনে ফেলেছে, সেখানে ভারত, ব্রাজিল এবং বাংলাদেশের মতো দেশে নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা। এই দেশগুলোতে প্রতিদিন যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, তাতে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মে মাসের শেষ দিক থেকে বিশ্বজুড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা। জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য মতে, গত কয়েক সপ্তাহে আক্রান্তের নিরিখে বিশ্ব তালিকায় অনেকটাই উপরে উঠে এসেছে ভারত। চীনকে ছাড়িয়ে তালিকায় উপরে উঠে এসেছে পেরু, চিলি মেক্সিকোর মতো দেশও। আক্রান্তের তালিকায় সেরা ২০ প্রবেশ করেছে বাংলাদেশও।
দেখা গেছে, যতগুলো দেশে আক্রান্তের সংখ্যা কমছে বলে জানিয়েছে, তার চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যক দেশ আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানাচ্ছে। এক দিনের হিসেবে বিশ্বে গত ৩০ মে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। ওই দিন গোটা বিশ্বে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪ জন মানুষ কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। সেই থেকে প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ করে বেড়েই চলেছে।
যে দেশগুলোতে সম্প্রতি সংক্রমণ বেড়েছে, এর মধ্যে রয়েছে পেরু, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতের মতো দেশ। এতেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জানুয়ারির শেষ দিকে ভারতে প্রথম করোনা হানা দেয়। গত ১৫ মে পর্যন্ত দেশে সবমিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮১ হাজার ৯৭০। কিন্তু শুক্রবার তা ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৭০-তে এসে ঠেকেছে। নোভেল করোনার প্রভাবে ভারতে এখনও পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে প্রতিদিন যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, তাতে উদ্বেগে নয়াদিল্লিও।
ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে পাকিস্তানে করোনা শনাক্ত হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৮ হাজার ৭৯৯। গত কয়েক দিনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ২৪৯-এ। আবার গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ১৫ মে পর্যন্ত সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৬৫০। গত কয়েক দিনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে৬০ হাজার ৩৯১ জনে।
ভারতের অনেক পরে, গত ৭ মার্চ পেরুতে প্রথম করোনা হানা দেয়। ১৫ মে পর্যন্ত সেখানে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮৪ হাজার ৪৯৫। এই মুহূর্তে তা এসে ঠেকেছে এক লাখ ৮৩ হাজার ১৯৮-তে। আবার দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া আফ্রিকার কোথাও এতদিন করোনা তেমন প্রভাব না ফেললেও, গত কয়েক দিনে কঙ্গো, নাইজেরিয়ার মতো দেশগুলোতেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে দ্রুত হারে।
অন্য দিকে, প্রতিদিন মৃত্যুর হিসেবে ইটালিকে ছাপিয়ে গিয়েছে ব্রাজিল। গত ৬ ফেব্রুয়ারি সেখানে প্রথম করোনা হানা দেয়। ১৫ মে পর্যন্ত সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২০ হাজার ২৯৫। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ১৪ হাজার ৯৪১ জনে। মৃত্যু হয়েছে ৩৪ হাজার ২১ জনের। শুক্রবারই (৫ জুন) সেখানে এক হাজার ৪৭৩ জন প্রাণ হারান।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয় মেক্সিকোয়। ১৫ মে পর্যন্ত সেখানে মোট কোভিড আক্রান্ত ছিলেন ৪৫ হাজার ৩২ জন। এখন সেই সংখ্যা এসে ঠেকেছে এক লাখ ৫ হাজার ৬৮০-তে। চিলিতেও আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। গত ৩ মার্চ সেখানে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। ১৫ মে পর্যন্ত সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ৫৪২। বর্তমানে তা এসে ঠেকেছে এক লাখ ১৮ হাজার ২৯২-তে।
শুক্রবার (৫ জুন) পর্যন্ত গোটা বিশ্বে ৬৭ লক্ষ ৩১ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কোভিড-১৯ ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৯৩ হাজারের বেশি মানুষের।
এফআর/পিআর