‘করোনা ভ্যাকসিন নিলে পুরুষ নারীকণ্ঠে কথা বলবে, নারীদের দাড়ি উঠবে’
অডিও শুনুন
করোনাভাইরাস মহামারিকে হেলাফেলা করা বিশ্বনেতাদের মধ্যে অন্যতম ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারো। শুরু থেকেই তিনি প্রাণঘাতী ভাইরাসটিকে ‘সামান্য ফ্লু’ বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। পরে নিজেই আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপরও মত বদলায়নি। বরং ভাইরাসকে অবহেলা করার পাশাপাশি এখন ভ্যাকসিন নিয়েও উল্টাপাল্টা বকতে শুরু করেছেন এই ব্যক্তি।
সম্প্রতি ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, করোনা ভ্যাকসিন মানুষকে কুমির বানিয়ে দিতে পারে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ছেলেরা মেয়েকণ্ঠে কথা বলবে আর মেয়েদের দাড়ি উঠবে। একারণে নিজে কখনও এই ভ্যাকসিন নিবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ব্রাজিলে মার্কিন ফার্মা জায়ান্ট ফাইজার ও জার্মান সংস্থা বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হয়েছে কয়েক মাস ধরে। ইতোমধ্যেই ভ্যাকসিনটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে। ব্রাজিলেও শুরুর হয়েছে টিকাদান কর্মসূচি।
এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার বোলসোনারো বলেছেন, ফাইজারের চুক্তিতে একটা বিষয় পরিষ্কার: আমরা কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী নই।
তিনি বলেন, আপনি যদি কুমিরে রূপান্তরিত হন, সেটা আপনার সমস্যা। যদি অতিমানবে (সুপারহিউম্যান) পরিণত হন, যদি কোনও নারীর দাড়ি উঠতে শুরু করে অথবা কোনও পুরুষ নারীকণ্ঠে কথা বলতে শুরু করেন, তাদের কিছু করার থাকবে না।
গত বুধবার টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেই ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন, এটা বিনামূল্যে হলেও বাধ্যতামূলক নয়।
তবে বৃহস্পতিবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট রুল জারি করেছেন, করোনা ভ্যাকসিন নেয়া বাধ্যতামূলক, কিন্তু কারও ওপর বলপ্রয়োগ করা যাবে না। অর্থাৎ, কর্তৃপক্ষ চাইলে ভ্যাকসিন না নেয়ায় মানুষজনকে জরিমানা অথবা নির্দিষ্ট জায়গায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারবে। তবে জোর করে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে না।
অথচ সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশকে অনেকটা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জেইর বোলসোনারো বলেছেন, তিনি কখনোই করোনা ভ্যাকসিন নেবেন না।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলেন, অনেকেই বলবে, আমি বাজে উদাহরণ সৃষ্টি করছি। কিন্তু যারা এসব কথা বলে, সেই নির্বোধদের বলছি, আমি ইতোমধ্যেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছি, আমার অ্যান্টিবডি রয়েছে। তাহলে আমি কেন ভ্যাকসিন নেব?
অবশ্য করোনায় একবার আক্রান্ত হলে আর হবে না- ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্টের এই দাবির পক্ষে এখনও তেমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মেলেনি। বরং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকজন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পর আবারও আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাছাড়া, একবার আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীর শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তার প্রতিরোধী ক্ষমতা কতদিন থাকে, সেটাও এখনও নিশ্চিত নয়।
গত জুলাইয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন বোলসোনারো। টানা তিন সপ্তাহ ভোগার পর সুস্থ হন তিনি।
ইতোমধ্যেই বিশ্বে সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমিতে দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে এপর্যন্ত অন্তত ৭১ লাখ আক্রান্ত এবং ১ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ মারা গেছেন। সম্প্রতি সেখানে শুরু হয়েছে মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ। গত জুন-আগস্টে ব্যাপক সংক্রমণের পর আক্রান্তের হার কিছুটা কমেছিল। তবে নভেম্বর থেকে সেই পরিস্থিতি আবার বদলে যায়।
গত বৃহস্পতিবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এক হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন, যা সেপ্টেম্বরের পর থেকে একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানির রেকর্ড।
সূত্র: এনডিটিভি, এএফপি
কেএএ/এমএস