৫০ বছরের কর্মস্থল হাসপাতালেও মেলেনি ভেন্টিলেটর, মৃত্যু চিকিৎসকের
অক্সিজেনের হাহাকার আর মৃত্যুর শোকে ভারতের বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। টানা কয়েকদিনের সর্বোচ্চ সংক্রমণ আর মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে প্রতিবেশী দেশ। হঠাৎ যেন বিশ্বরেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলায় মেতে উঠেছে দেশটি। গত সপ্তাহে বিশ্বে প্রথমবারের মতো একদিনে তিন লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছিল সেখানে। এবার সাড়ে তিন লাখ রোগী শনাক্তের মহারেকর্ডও নিজেদের করে নিল তারা।
ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এসময় মারা গেছেন অন্তত ২ হাজার ৮১২ জন। এদিকে, রোববার রাতে অন্ধ্র প্রদেশের ভিজিয়ানগরম মহারাজা হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে পাঁচজন রোগী মারা গেছেন।
আর এর মধ্যেই প্রকাশ্যে এলো আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনার খবর। চারদিকে যখন অক্সিজেন, বেড, মেডিকেল সরঞ্জামের অভাব ঠিক তখনই নিজের কর্মরত হাসপাতালেই সামান্য একটি ভেন্টিলেটরের অভাবে স্ত্রীর সামনেই ছটফট করতে করতে মারা গেলেন চিকিৎসক স্বামী।
মৃত ওই চিকিৎসকের নাম জে.কে মিশ্র (৮৫)। তিনি উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের স্বরুপ রানী নেহেরু হাসপাতালে দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মরত ছিলেন। সোমবার ওই হাসপাতালেই ভেন্টিলেটর বেডের অভাবে মারা যান তিনি। যে হাসপাতালে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে এলেন সেই হাসপাতালেই এমন মর্মান্তিক পরিণতির খবরে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে।
জানা গেছে, স্বনামধন্য ওই প্রবীণ চিকিৎসক গত ১৩ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হন। এর তিনদিন পর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন তিনি। কিন্তু দ্রুত ওই চিকিৎসকের অবস্থার অবনতি হলে তাকে ভেন্টিলেটর দেওয়ার কথা জানান ওই হাসপাতালের অন্য চিকিৎসকরা। কিন্তু তার জন্য ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা যায়নি।
এ বিষয়ে এসআরএন হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার সূর্যভবন কুশওয়াহার জানিয়েছেন, ড. মিশ্রের চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু জে.কে মিশ্র সেখানে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই হাসপাতালের মোট ১০০টি ভেন্টিলেটর মেশিনই অন্যান্য করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে অন্য কোনও রোগীর থেকে ওই মেশিন খুলে ব্যবহার করাও প্রায় অসম্ভব ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। ফলে ওই চিকিৎসককে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দিশেহারা উত্তরপ্রদেশ। সেখানে বর্তমানে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৯৭ হাজার। এই অবস্থায় রাজ্যজুড়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন, ওষুধ সরবরাহ বজায় রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যোগী সরকার।
টিটিএন/জিকেএস