মহামারি পূর্ব দিকের রাজ্যে এগোচ্ছে : ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে করোনাভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু দ্রুত বাড়তে থাকার পরিস্থিতিতে ‘মহামারি এখন ক্রমশ পূর্ব দিকে এগোচ্ছে’ বলে সতর্ক করে দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খবর বিবিসির।
আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড ও বিহার - পূর্ব ভারতের এই পাঁচটি রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ওই রাজ্যগুলোর কর্মকর্তাদের সাথে আপদকালীন বৈঠকের পরই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এ মন্তব্য করা হয়েছে। ওই রাজ্যগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে নানা ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।
এই সতর্কবার্তা এমন এক সময়ে এসেছে যখন ভারতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা চার লাখ অতিক্রম করে গেছে, মৃত্যুও পৌঁছেছে চার হাজারের কাছাকাছি। গত বছর এই মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে একদিনে এত বেশি নতুন শনাক্ত ও মৃত্যু ভারতে কখনও হয়নি।
শনাক্ত ও মৃত্যু উভয় ক্ষেত্রেই বড় ভূমিকা রেখেছে পূর্ব ভারতের পাঁচটি রাজ্য। যদিও এতদিন সবচেয়ে উদ্বেগজনক সংখ্যাগুলো আসছিল মহারাষ্ট্র, দিল্লি, কর্নাটক, কেরালা, পাঞ্জাব বা উত্তর প্রদেশের মতো দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকেই।
দক্ষিণ, পশ্চিম বা উত্তর ভারতের তুলনায় পূর্ব ভারতের পরিস্থিতি এতদিন ছিল কিছুটা ভাল, কিন্তু তা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে ইঙ্গিত পাওয়ার পরই বুধবার বিকেলে পূর্বের পাঁচটি রাজ্যের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।
পরে বুধবার গভীর রাতে এক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, ‘যাবতীয় সাক্ষ্যপ্রমাণ এদিকেই দিকনির্দেশ করছে যে কোভিড মহামারি এখন ক্রমশ পূর্ব দিকে এগোচ্ছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দেশের (পূর্ব প্রান্তের) এই রাজ্যগুলোতে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, যেমন বাড়ছে মৃত্যু হারও।’
গতকালের বৈঠকে পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে মহামারির ধাক্কা সামলাতে জরুরি কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পদক্ষেপগুলো হল:
•ওই পাঁচটি রাজ্যকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে সেখানে যে ছাত্রছাত্রীরা ডাক্তারি শিক্ষাক্রম বা এমবিবিএস এবং নার্সিংয়ের ফাইনাল ইয়ারে পড়ছেন, কিংবা যারা ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করছেন - তাদের অবিলম্বে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় যুক্ত করা হোক।
•ওই রাজ্যের অনেকগুলো জেলাতেই ‘পজিটিভিটি রেট’ এখন ২০ শতাংশের বেশি - অর্থাৎ যারা করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন তাদের প্রতি পাঁচজনে অন্তত একজনের ফলাফল পজিটিভ আসছে। এই জেলাগুলোতে বিশেষ নজর দিয়ে সেখানে পরীক্ষা বাড়ানো, আক্রান্তদের বাড়িতে আলাদা থাকার ব্যবস্থা, যে কোনও ধরনের ভিড় বা জমায়েত এড়ানো - এগুলো নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে
•এই রাজ্যগুলোকে বলা হয়েছে প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য উপযুক্ত জায়গা চিহ্নিত করতে। কেন্দ্রীয় সরকার ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সারা দেশের প্রত্যেক জেলাতেই কম করে একটি অক্সিজেন উৎপাদন ইউনিট গড়ে তোলা হবে।
•এই রাজ্য সরকারগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সিরাম ইনস্টিটিউট বা ভারত বায়োটেকের মতো টিকা প্রস্তুতকারকদের বকেয়া অর্থ অবিলম্বে পরিশোধ করতে - যাতে সেখানে ভ্যাক্সিনের চালান অব্যাহত থাকে এবং টিকাকরণের তৃতীয় পর্ব ভালভাবে চলতে পারে।
ভারতের অনেক রাজ্যই এখন অভিযোগ করছে তারা টিকার চালান ঠিকমতো পাচ্ছে না। এ মাসের শুরু থেকে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা দেয়ার যে পরিকল্পনা ভারত সরকার ঘোষণা করেছিল তাও এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে।
এমকে/জিকেএস