অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে কিউবায় নজিরবিহীন বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৩২ পিএম, ১২ জুলাই ২০২১

খাদ্য স্বল্পতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং কমিউনিস্ট শাসনের কারণে তিন দশকের মধ্যে কিউবাজুড়ে নজিরবিহীন বিক্ষোভ দেখা গেছে। দ্বীপ রাষ্ট্রটির পশ্চিমে সান আনোনিও ডি লস বাওস এবং পূর্বে পালামা সোরিয়ানো শহরে রোববার হাজার হাজার মানুষ সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করে। ১৯৯৪ সালের চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের পর এটাই সব থেকে বড় বিক্ষোভ।

কিউবার লাখ লাখ অধিবাসী মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার ফলে সংবাদটা দ্রুত রাজধানী হাবানায় ছড়িয়ে পড়ে। রোববার বিকেলে লাখ লাখ কিউবাবাসী হাবানায় মিছিলে এবং স্বদেশ এবং জীবন ও তাদের স্বাধীনতার জন্য স্লোগান দিতে থাকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, আমি বিক্ষোভ করছি কারণ আমি ক্ষুধার্ত, আমাদের কাছে কোনো ওষুধ নেই। এখানে সাধারণ নাগরিকের অধিকার সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি সবকিছুর অভাব দেখা দিয়েছে।

তিনি জানান, সরকার ও বহুদলীয় নির্বাচনে পরিবর্তনের সঙ্গে আমরা কমিউনিজমেরও সমাপ্তি চাই।

এ সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে অন্যদিকে পুলিশ পিপার স্প্রে করে।

পাথর হাতে ১৭ বছর বয়সী ইউসনিয়েল পেরেজ বলেন, আমরা বিক্ষোভ করছি কারণ আমরা ক্ষুধার্ত এবং গরিব। আমাদের কাছে কোনো খাবার নেই।

jagonews24

স্থানীয় সময় রোববার বিকেল ৩টায় দেশটির প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দাজ-কানেল বলেন, দেশ অস্থিতিশীল হলে বৈপ্লবিক প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হবে বিক্ষোভকারীদের। পাশাপাশি আমরা সকল বিপ্লবী এবং কমিউনিস্টদের রাস্তা দখলে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

সরকারকে সমর্থন জানাতে রাস্তায় এসে ৫২ বছর বয়সী আইলিন গেরেরো বলেন, আমরা আমাদের বিজয়কে সমর্থন জানাতে এসেছি। আমরা যদি কমিউনিস্ট নাও হই তাহলে আমরা দেশপ্রেমিক।

সরকার সমর্থকরা অভিযোগ করে বলেন, বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ট। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে আমেরিকা এখানে ২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করে।

সরকারবিরোধী তরুণরা রাজধানী হাবানার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা পুরানো সরকার সমর্থক এবং সেনাবাহিনীর দ্বারা অবরুদ্ধ হচ্ছেন। রোববার সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বাহিনী এবং সমর্থকরা রাস্তাগুলো বিক্ষোভকারীদের থেকে পুনরুদ্ধার করে।

বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা কিউবায় চলমান বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানিয়ে টুইট করেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পশ্চিম গোলার্ধ বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী ফর স্টেট জুলি চং কিউবায় করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, কিউবায় শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ চলছে যা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।

বিক্ষোভ মূলত হাবানার দরিদ্র এলাকাগুলোতে শুরু হয়েছিল যেখানে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে মানুষ বঞ্চিত ও অভাবে ভুগছে। ৩০ বছর ধরে কিউবাবাসী চূড়ান্ত অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যদিয়ে জীবন-যাপন করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন দেশটিতে দুই শত’র বেশি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এই সঙ্কট তৈরি করেছে।

করোনা মহামারির পর থেকে দেশটিতে ট্যুরিজম থেকে আয় কমেছে। প্রধান খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতে কিউবাবাসীকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। ফ্যার্মেসিতেও ওষুধ নেই।

এমএসএম/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।