চিকিৎসকদের হন্যে হয়ে খুঁজছে মিয়ানমার জান্তা
দুই সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারে হু হু করে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। এতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, অক্সিজেন আর চিকিৎসক সংকটে ভেঙে পড়তে বসেছে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এখন বিপদে পড়ে গ্রেফতার আর নির্যাতন আতঙ্কে আত্মগোপনে যাওয়া চিকিৎসকদের হন্যে হয়ে খুঁজছে মিয়ানমার জান্তা সরকার। সিএনএন-এর খবরে জানা গেছে এ তথ্য।
দেশটির রাজধানীর ইয়াঙ্গুনে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর সামনে রোগীদের নিয়ে অক্সিজেনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে স্বজনদের। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন করোনায় মৃতদের সৎকারে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনকারীদের টানা কয়েক মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দেশটিতে নয়শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। সড়কের আন্দোলনকারী থেকে প্রান্তিক গ্রাম পর্যন্ত সর্বত্র চলেছে ব্যাপক ধরপাকড়। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী আটকের পর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চিকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। আর এই ঘটনার প্রতিবাদে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে প্রথম রাস্তায় নামেন চিকিৎসক-নার্সরা। এরপর একে একে যুক্ত হন সব শ্রেণিপেশার মানুষ। আন্দোলন দমনে শুরু হয় দেশটির সেনাবাহিনীর হামলা, ধরপাকড় ও নির্যাতন। জান্তার ধরপাকড় আর নির্যাতনের ভয়ে অনেক চিকিৎসক আত্মগোপনে চলে যান।
সম্প্রতি করোনা মহামারি চরম আকার ধারণ করায় চিকিৎসক আর স্বেচ্ছাসেবীরা এখনো জান্তা সরকার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
অভিযোগ উঠেছে, দেশটির সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত হাসপাতালগুলোতে প্রবেশে বাঁধা দেয়া হচ্ছে সাধারণ রোগীদের। অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে কারাগারেও, যেখানে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনকারীদের আটকে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে প্রধান কারাগার ইনসেইনে।
চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপতালগুলোতে চিকিৎসা না পাওয়ায় অনেকে বাড়িতেই থাকছেন। কারণ হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের পাশাপাশি রয়েছে শয্যা শঙ্কট, নেই পর্যাপ্ত নার্স ও চিকিৎসক।
গত বুধবার মিয়ানমারের সেনা নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৯৩ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬৩ জন। এদিন মারা গেছেন আরও ২৪৭ জন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৯৫ হাজার ৮১৪ জন। কিন্তু চিকিৎসক আর স্বেচ্ছাসেবীরা বলছেন, এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
জান্তা সরকারের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দূরত্ব, পর্যাপ্ত করোনা পরীক্ষা ব্যবস্থা ও ভ্যাকসিন কার্যক্রম না থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এক চিকিৎসক বলেছেন, এটি কেবল শুরু। প্রতিদিনই শত শত মৃত্যু দেখতে হচ্ছে করোনায়।
মিয়ানমারে কর্মরত রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তা জয় সিংহাল বলেন, মিয়ানমারে করোনা মহামারি এখন আতঙ্কের বিষয়। বলা চলে দেশটির এক-তৃতীয়াংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত। আমাদের এখন বেশি পরিমাণে পরীক্ষা, শনাক্ত এবং টিকাদান দরকার।
অবশ্য দেশটিতে সেনাবাহিনীর সর্বত্র নজরদারি থাকায় অনেক চিকিৎসক আর স্বেচ্ছাসেবী নিভৃতে থেকেও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষকে।
এসএনআর/কেএএ/এমএস