কেন বুরকিনা ফাসোর নাগরিকরা প্রেসিডেন্টের প্রতি অসন্তুষ্ট?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৫১ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০২২

এবার পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোয় সেনা অভুত্থানের ঘটনা ঘটলো। স্থানীয় সময় রোববার (২৩ জানুয়ারি) ভোর ৫টার দিকে বুরকিনা ফাসোর রাজধানী ওয়াগাদুগুর সাংগুলে লামিজানা সেনানিবাসে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর জানা যায়, বুরকিনা ফাসোর প্রেসিডেন্ট রোচ মার্ক কাবোরেকে আটক করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। তবে তাকে কোথায় রাখা হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট জানা যায়নি। ২০১৫ সালেও সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হয়েছিল দেশটিতে।

সন্ত্রাসী হামলা দমনে সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ চলে বুরকিনা ফাসোয়। এর পরপরই সামরিক বাহিনীর হাতে আটক হলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট।

কেন বুরকিনা ফাসোর নাগরিকরা প্রেসিডেন্টের প্রতি অসন্তুষ্ট?

সেনা ব্যারাকে গোলাগুলি ও প্রেসিডেন্ট আটক হওয়ার পর বুরকিনা ফাসো সরকারের জারি করা কারফিউ অমান্য করে হাজার হাজার মানুষ বিদ্রোহী সৈন্যদের সমর্থনে রাজপথে নেমে আসেন। ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

বলা হচ্ছে, দেশটির প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে পুঁজি করে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী। তবে বুরকিনা ফাসোর পরিস্থিতি আসলে কোন দিকে যাচ্ছে তা এখনো ধোয়াশার সৃষ্টি করে রেখেছে।

মূলত ২০১৬ সাল থেকে বুরকিনা ফাসোয় সংকট শুরু হয়। ২০১১ সালে লিবিয়ার সরকার পতন, মালির ২০১২ সালের গৃহযুদ্ধ, এরপর মৌরিতানিয়া, নাইজার এবং চাদের মতো অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোতেও সংঘাত ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। এর আগ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই ছিল বুরকিনা ফাসোর।

কেন বুরকিনা ফাসোর নাগরিকরা প্রেসিডেন্টের প্রতি অসন্তুষ্ট?

তবে দেশটির রাজনীতির পট পরিবর্তন হয় ২০১৬ সালে রাজধানীর একটি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বন্দুকধারীদের হামলায় ৩০ জন নিহত হওয়ার পর। প্রেসিডেন্ট বারোকের ক্ষমতাগ্রহণের পর পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে প্রথম বড় আকারের সন্ত্রাসী হামলা এটি।

আল-কায়েদা ইন দ্য ইসলামিক মাগরেব (একিউআইএম) এবং জামা'আ নুসরাত উল-ইসলাম ওয়া আল-মুসলিম (জেএনআইএম) এর মতো গোষ্ঠীগুলো বুরকিনা ফাসোর সুদূর উত্তরে মালির তিনিটি-সীমান্ত অঞ্চল এবং নাইজারে সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তথ্যমতে, ২০১৯ সালে হঠাৎই হামলা ও সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যায়। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যেও। ইসলামিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর টার্গেটে পরিণত হয় সাধারণ মানুষও।

কেন বুরকিনা ফাসোর নাগরিকরা প্রেসিডেন্টের প্রতি অসন্তুষ্ট?

২০২১ সালের জুন মাসে দেশটির উত্তরাঞ্চলের সোলহান গ্রামে নির্বিচারে ১৩২ জনকে হত্যা করা হয়। সহিংসতা শুরুর পর এটিই সবচেয়ে বড় হত্যার ঘটনা দেশটিতে। রাষ্ট্রের দুর্বলতার কারণে এরকম হামলা আরও বাড়তে থাকে সম্প্রতি।

সহিংসতা যতই বাড়তে থাকে ততই দেশটির অভ্যন্তরীণ নানা সংকটও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। বেকার সমস্যা প্রকট হতে থাকে। জিহাদি গোষ্ঠীগুলোকে ঠেকাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টিও দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে তরুণদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা চলমান সংকটকে আরও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। দেশটি এরই মধ্যে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক উন্নয়ন সূচক-২০২০ সালের হিসাবে ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৮২তম স্থানে রয়েছে বুরকিনা ফাসো। এখন পর্যন্ত দ্বন্দ্ব সংঘাতের জেরে দেশটির দুই কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে দেড় লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

কাবোরে ২০১৫ সালে দেশটিতে ২৭ বছর ধরে ক্ষমতাসীন কর্তৃত্ববাদী নেতা ব্লেইস কম্পাওরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০১৮ সালে সহিংস ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় কাবোরে দেশটির ৪৫টি রাজ্যের মধ্যে ১৪টিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালানো ও আটক করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করেন। এরপর সহিংসতা আরও বেড়ে যায় কয়েকটি অঞ্চলে।

কেন বুরকিনা ফাসোর নাগরিকরা প্রেসিডেন্টের প্রতি অসন্তুষ্ট?

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, জরুরি অবস্থার মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কারণে বহু সহিংস ঘটনা ঘটে দেশটিতে। ফলে ফেডারেল সরকারের প্রতি স্থানীয় জনগণের অসন্তুষ্টি বেড়ে যায়।

২০২০ সালে পুনঃনির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর, কাবোরে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ঘটনায় জনগণের ক্ষোভ প্রশমিত করার প্রয়াসে বেশ কয়েকটি সংস্কার কাজের চেষ্টা করেছিলেন। সোলহান হত্যাকাণ্ডের পর তার নেতৃত্বের তীব্র সমালোচনা উঠায়, কাবোরে তার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রীদের বরখাস্তও করেন। তবে কোনো কিছুতেই সুরাহা আর হলো না। অবশেষে সেনাবাহিনীর হাতে আটক হলেন প্রেসিডেন্ট।

পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার একাধিক দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এর আগে মালি ও গিনির ক্ষমতা নিজেদের দখলে নিয়েছে দেশ দুটির সেনাবাহিনী। গত বছর যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ইদরিস দেবি নিহত হওয়ার পর এ অঞ্চলটির আরেক দেশ চাদ শাসন করছে সেনা সরকার।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

এসএনআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।