নির্ভীক এক বিচারকের দৃষ্টান্ত
ইসলামের ইতিহাসে এক বিরল প্রতিভার অধিকারী বিচারপতি কাজী শুরায়হ রাদিয়াল্লাহু আনহু। তাঁর বিচারিক কার্যক্রম ইসলামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যার নির্ভীক বিচারিক রায় হজরত উমর ও হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমার বিরুদ্ধে চলে যায়। হরজত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুই তাঁকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেন এবং হাজ্জাজ ইবন ইউসুফের শাসনকাল পর্যন্ত তিনি এ পদে আসীন ছিলেন। তুলে ধরা হলো কাজী শুরায়হ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিচারের রায়-
ক. হজরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে কাজী শুরায়হের আদালতে স্বয়ং খলিফার বিরুদ্ধে সাওয়ারীর ক্ষতি সম্পর্কে এক ব্যক্তি বিচার প্রার্থনা করে।
বিচারটি ছিল- খলিফা সাওয়ারিটি নিয়ে তা অপরকে আরোহণ করতে দিয়েছিলেন। এতে সওয়ারিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
কাজী শুরায়হ উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে রায় দিলেন। রায় হজরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে চলে যায়। অর্ধ জাহানের খলিফার বিরুদ্ধে রায়! যার নাম শুনলে সিংহহৃদয় পুরুষদের অন্তরও কেঁপে উঠতো। কিন্তু ইনসাফ ও ন্যায়ের মূর্ত প্রতীক হজরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ বিচারের রায় মেনে নিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেননি। বরং অম্লান বদনে রায় মেনে বাদির দাবি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন।
নির্ভীক বিচারের রায়ের ফলশ্রুতিতে হজরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে অবিচল অটল মানসিকতার সাহস দেখে কাজী শুরায়হকে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। ৬১ মতান্তরে ৭৫ বছর (হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের সময়কাল) পর্যন্ত তিনি কুফার বিচারপতির আসন অলঙ্কৃত করেছিলেন। যা ছিল সৎ সাহসিকতার নগদ প্রাপ্তি।
খ. হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং এক ইয়াহুদির মধ্যকার বিচার কার্যটিও সৎ ও সাহসী বিচারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। একটি লৌহবর্ম নিয়ে এক ইয়াহুদির সঙ্গে হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিবাদ ছিল। হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং ইয়াহুদির মধ্যকার বিচারের ফয়সালায় বিচারক কাজী শুয়ারহ বলেন, হে আমিরুল মুমিনিন! আপনি ঐ ইয়াহুদির চেয়ে মর্যাদাবান এবং বিশ্বস্ত। কিন্তু ন্যায় বিচারের দৃষ্টিতে উভয়েই সমান।
আপনি আপনার দাবির পক্ষে সাক্ষী হাজির করুন। হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর দাবির পক্ষে ছেলে হজরত হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তার ক্রীতদাসকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করেন। কাজী শুরায়হ তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ‘পিতার পক্ষে পুত্রের সাক্ষ্য এবং মনিবের পক্ষে দাসের সাক্ষ্য গৃহীত হয় না। ফলে আপনার দাবি অগ্রাহ্য হলো।’ বিচারের ফয়সালা ইয়াহুদিরে পক্ষে চলে যায়। ইয়াহুদি কাজী শয়ারহের বিচারিক কার্যক্রম দেখে ইসলাম গ্রহণ করেন।
পরিশেষে...
আল্লাহর ভয় যাদের অন্তরে রয়েছে তারা জাগতিক কোনো মহাক্ষমতাধর ব্যক্তিকে ভয় করে না। হোক সে অর্ধ জাহানের মহান শাসক হজরত উমর বা হোক কোনো রাষ্ট্র নায়ক। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার সকল বিচারকেরদের পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহকে ন্যায় নীতির উপর অটল ও অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এবিএস