নওগাঁয় প্রাথমিকে ৯৫৫টি শিক্ষক পদ শূন্য


প্রকাশিত: ০৩:১৯ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

নওগাঁর ১১টি উপজেলায় ১ হাজার ৩৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১২২টির প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া এসব উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ৮৩৩টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পদগুলো শূন্য থাকায় বিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসনিক কার্যক্রম বিঘ্নের পাশাপাশি পাঠদান কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ১৮টি ও সহকারী শিক্ষকের ৬৪টি পদ খালি আছে। এছাড়া মান্দায় প্রধান শিক্ষকের ১৬টি, সহকারী শিক্ষকের ৩৯টি, রাণীনগরে প্রধান শিক্ষকের ১৫টি, সহকারী শিক্ষকের ৭৬টি, আত্রাইয়ে প্রধান শিক্ষকের ১০টি, সহকারী শিক্ষকের ৪১টি, বদলগাছীতে প্রধান শিক্ষকের ৯টি, সহকারী শিক্ষকের ৮৭টি, মহাদেবপুরে প্রধান শিক্ষকের ১৮টি, সহকারী শিক্ষকের ৯১টি, নিয়ামতপুরে প্রধান শিক্ষকের ১৩টি, সহকারী শিক্ষকের ৯০টি, পত্নীতলায় প্রধান শিক্ষকের ৭টি, সহকারী শিক্ষকের ৯৭টি, ধামইরহাটে প্রধান শিক্ষকের ৫টি, সহকারী শিক্ষকের ৭৮টি, পোরশায় প্রধান শিক্ষকের ৫টি, সহকারী শিক্ষকের ৯৭টি এবং সাপাহারে প্রধান শিক্ষকের ৬টি ও সহকারী শিক্ষকের ৭৩টি পদ খালি আছে।

বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে সব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আছেন সে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককে মাসিক সভা, প্রতিবেদন তৈরি ও দাফতরিক নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। সহকারী শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। আবার যে সব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই সে বিদ্যালয়গুলোতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষকেরা। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের পাঠদান ও দাফতরিক কাজ দুটোই এক সঙ্গে চালাতে হচ্ছে।

এছাড়াও শিক্ষকদের গুণগত শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সারা বছর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ থাকায় শ্রেণি শিক্ষক সঙ্কট দেখা দেয়। সে সব ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দাফতরিক কাজ করতে দু’একটির বেশি পাঠদান করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এতে বিদ্যালয়ে দুইজন সহকারী শিক্ষক সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা সব ক্লাশ নিয়ে থাকেন। এ কারণে পাঠদান ও দাফতরিক কাজ ব্যহৃত হয়। জেলার অনেক বিদ্যালয় আছে শিক্ষার্থীদের তুলনায় যেখানে শিক্ষক বেশি আছেন। আবার অনেক স্কুল আছে শিক্ষার্থীদের সংখ্যায় মাত্র ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকসহ মাত্র তিনজন শিক্ষক আছেন।
 
আরো জানা গেছে, বিদ্যালয়ে পাঠ দান সকাল থেকে ১২টায় প্রথম শিফট শেষে হয়ে ১৫ মিনিট সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ১২টা ১৬ মিনিট থেকে আবারও পাঠ দান শুরু হয়। অথচ সরকারি নিয়ম আছে কোন শ্রেণিতে পাঠ শুরু করার আগে পাঠ প্রস্তুতি গ্রহণ করে শ্রেণিকক্ষে যাওয়া। কিন্তু শিক্ষক কম থাকায় এক সাথে একজন শিক্ষককে এক সাথে দুটি শ্রেণিতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা পাঠদান দিতে হয়।

রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের পাঁচপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র মন্ডল বলেন, তার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০০ জন। গত বছরের এপ্রিলে প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর তিনজন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ের দাফতরিক ও পাঠদান কার্যক্রম চলছে। কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে একজন শিক্ষক প্রশিক্ষণে থাকায় দুজন শিক্ষককে দিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। মাঝে মধ্যে তাকে দাফতরিক কাজে উপজেলা বা জেলা শিক্ষা কার্যালয়ে যেতে হয়। তখন একজন শিক্ষক দিয়ে চলে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।

মহাদেবপুর উপজেলার খসালপুর সিদ্দিকী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জান্নাতুন ফেরদৌস বলেন, পাঁচজনের জায়গায় আমরা তিনজন শিক্ষক আছি। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাফতরিক কাজে ব্যস্ত থাকায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

নিয়ামতপুর উপজেলার রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা বলেন, তার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই শতাধিক। প্রধান শিক্ষক না থাকার ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর বিদ্যালয়ে পাঠদানের পাশাপাশি তাঁকে দাফতরিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।

সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল আলম জানান, সদর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে শিক্ষক সঙ্কট বেশি। এসব এলাকায় শিক্ষকেরা থাকতে চান না। তাই শিক্ষক সঙ্কট দেখা দিচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, জ্যেষ্ঠতা নিয়ে আদালতে শিক্ষকদের মামলা থাকায় দীর্ঘদিন ধরে অনেক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া প্রধান শিক্ষককে দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদায় উন্নীত করার পর তাদের নিয়োগের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে হয়েছে। প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকা চূড়ান্ত হলেই এই সঙ্কট কমে যাবে।

এছাড়াও সরকার সারাদেশে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হলেও সঙ্কট কমে যাবে বলে জানান তিনি।

আব্বাস আলী/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।