ত্রিপুরা

মোবাইল আসক্তিতে বাড়ছে অপরাধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:৫৩ পিএম, ১২ মার্চ ২০২৩
ছবি সংগৃহীত

ত্রিপুরা প্রতিনিধি

তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েও যখন বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই কিশোরের তখন অবাক হওয়ারই কথা। পুলিশও তাই হয়েছে। মাত্র মাস তিনেক আগের ঘটনা এটি। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে উত্তেজিত অবস্থায় বছর পনেরোর এক ছেলে তার মাসহ অন্য আরও তিনজনকে হত্যা করে।

বর্তমানে সন্তানরা মা-বাবা কিংবা অভিভাবকদের কথা শুনতে চায় না। এ বিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মানসিক বিকৃতিরই লক্ষণ। তা না হলে কি আর বছর পনেরোর কোনো ছেলে তার মাকে খুন করতে যায়।

আরও পড়ুন>ইন্টারনেট আসক্তির বেশি প্রভাব শিশুদের ওপর

দিন পনেরো আগেও রাজ্যটির (ত্রিপুরা) ধলাই জেলায় নিজ সন্তানের হাতে নিগৃহীত হন এক মা। এমনকি ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ডান হাতটিকে পর্যন্ত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় সে।

এ ধরনের প্রতিটি ঘটনার জন্যই মোবাইল আসক্তিকে দায়ী করছেন ত্রিপুরা রাজ্যের মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, শৈশবকালে যেমন এটি হতে পারে কিংবা শৈশবকাল ছাড়িয়ে গেলেও এর প্রভাব থাকে। অনেক ক্ষেত্রে আবার নেশাগ্রস্ততার কারণেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।

ধলাই জেলার ঘটনাটির ক্ষেত্রে সম্প্রতি খুনি নিজেই অবশ্য পুলিশের কাছে গিয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু মাস তিনেক আগে কমলপুরের দুরাই শিববাড়ি পঞ্চায়েতের কাছে ২ নং ওয়ার্ড এলাকায় যে ঘটনাটি ঘটে তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ ছিল না ১৫ বছর বয়সী ছেলেটির। পরে সন্দেহজনকভাবে পুলিশ হালাহালি বাজার এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়।

এলাকাবাসীর মনেও প্রশ্ন জাগে কি করে এতো কমবয়সী ছেলের পক্ষে এটা সম্ভব হলো? এলাকাবাসীদের অভিমত ছিল, মোবাইলে আসক্তির পাশাপাশি প্রায় সময়ই নেশা করতো সে। অভিযোগ রয়েছে, একাধিকবার নেশাগ্রস্থ হয়ে বাড়িতে এসে পাবজি খেলার জন্য বায়না ধরতো সে।

অভিযোগ রয়েছে, অনলাইনে এ ধরনের গেম খেলতে গিয়ে অনেক সময় আবার অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকাও চায় ছেলেমেয়েরা। না দিলে তাতেই যতো বিপত্তি ঘটে।

বিশিষ্ট মনোবিদদের অনেকের কাছেই এ ধরনের বিষয়ে জানতে চাইলে এমন বহু উদাহরণ তুলে ধরেন। তারা এও বলেন, বয়স্কদের মধ্যেও অনেকেই মোবাইলের আসক্তি থেকে অনেক সময় উল্টোপাল্টা অনেক কিছুই করে থাকেন।

ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. অঞ্জনা ভট্টাচার্য বলেন, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে এ ধরনের বিষয়গুলো কোনো অস্বাভাবিক কিছু নয়। মোবাইলে আসক্তি বেড়ে গেলে এটা হতেই পারে। এক্ষেত্রে আমাদের সবার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একটু বেশি করে সময় কাটানো জরুরি।

তিনি বলেন, আসক্তির প্রভাব দু-ভাবেই দেখা যেতে পারে। হয় নিজে থেকেই হতাশার বসে আত্মহত্যা, না হয় আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে অন্যের ওপর তার আক্রোশ মেটাতে পারে। যেমনটা এ রাজ্যেও ঘটছে কয়েক মাস পর পর। তাছাড়া অনলাইন গেমগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আক্রমনাত্তক ভঙ্গিতেই হয়ে থাকে। কম বয়সী ছেলেমেয়েরা যাকে স্বাভাবিক বলে মনে করে।

এই অধ্যাপক আরও বলেন, শুধু কমবয়সী কেন! মোবাইলে আসক্তির বিষয়টা প্রভাব ফেলছে একেবারে দুই বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের থেকে শুরু করে সব বয়সীদের ক্ষেত্রেই। ছোটদের ক্ষেত্রে হয় মিথ্যা কথা বলতে শুরু করে, না হয় খিটখিটে মেজাজের একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

রাজ্যের বিশিষ্ট নিউরো সাইকোলজিস্ট অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডিকশন স্পেশালিস্ট ডা. কৌশিক নন্দী অবশ্য এ ধরনের বিষয়গুলোকে অনলাইন গেমের দিকে ছেড়ে দিতে চাইছেন না। তিনি মনে করেন, আনুষঙ্গিক নেশাগ্রস্ততার কারণেই সংগঠিত হতে পারে এ ধরনের ঘটনা। তবে তিনি এটাও মেনে নেন যে এক্ষেত্রে কমবয়সীদের বেলায় একটা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যেতে পারে।

বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জয়ন্ত পোদ্দার বললেন, মোবাইলে প্রায় সময়ই মারমুখী গেম দেখানো হয়। যা দেখে ছেলেমেয়েরাও মারমুখী হয়ে ওঠে। আর এরই প্রতিফলন ঘটে সামাজিক জীবনে। তার স্পষ্ট বক্তব্য, আজকাল ছেলেমেয়েদের কথা বলতে দেরি করা, কিছু বললে উত্তর না দেওয়া, এসব এরই প্রতিফলন। অভিভাবকরাও তাদের কাজের সুবিধার্থে অনেক সময় তা বুঝে উঠতে চান না।

তিনি আরও বললেন, সমস্যা দেখা দিলে তবেই না ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বারগুলোতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় হয়ে থাকতে দেখা যায় অভিভাবকদের। আসলে শিশুদের মানসিক বিকাশে এ ধরনের সবগুলো ঘটনাই একপ্রকার অস্বাভাবিকতা এনে দেয়। যে কারণে আমরা বলি, ছোট বড় সবার ক্ষেত্রেই স্ক্রিনটাইম আসলে এক ঘন্টার বেশি হওয়া উচিত নয়।

এমএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।