গান বিকৃতি, আইনি পদক্ষেপের চিন্তা কাজী নজরুল পরিবারের

পশ্চিমবঙ্গ প্রতিনিধি পশ্চিমবঙ্গ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৭:৫৩ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

বলিউড ছবি ‌পিপ্পাতে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটিকে বিকৃত করার অভিযোগে কবির নাতি কাজী অনির্বাণের (নজরুলের চতুর্থ সন্তান কাজী অনিরুদ্ধর প্রথম পুত্র) বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে চলেছেন তারই নিজের ভাই কাজী অরিন্দমসহ নজরুলের পরিবারের অন্য সদস্যরা।

অনির্বাণের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি করার পাশাপাশি পিপ্পা টিমের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এই ঘোষণা দেন নজরুলের নাতি ও কাজী অনিরুদ্ধার দ্বিতীয় ছেলে গিটার বাদক কাজী অরিন্দম।

আরও পড়ুন>নজরুলের গান বিকৃতি: প্রতিবাদে কুমিল্লায় মিছিল-সমাবেশ

তিনি বলেন, কাজী অনির্বাণের বিরুদ্ধে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেবো। সেই সঙ্গে পিপ্পা টিমকেও চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেননা এই কাজটা করার আগে দু'বার ভাবা উচিত ছিল। এমন একটি বিখ্যাত গানের কেস হিস্ট্রি স্টাডি করা উচিত ছিল। তাছাড়া এটি কেবল গান নয়। এটি একটি আন্দোলন, সংগ্রামের নাম। এর সঙ্গে বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর ইতিহাসও জড়িয়ে রয়েছে। আমি চাইবো এই গানটির রিমেক ওই ছবি থেকে প্রত্যাহার করে, আসল গানটিকে ফিরিয়ে আনা হোক। পাশাপাশি কাজী অনির্বাণ যে গর্হিত কাজ করেছে আমরা তার শাস্তির দাবি করছি।

তিনি আরও জানান, আজ এই সংবাদ সম্মেলন থেকে রাজ্য সরকারের কাছে মৌখিক দাবি জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে লিখিত আকারে সেই দাবি জানানো হবে এবং আইনজীবীর মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

রাজা কৃষ্ণ মেনন পরিচালিত পিপ্পা ছবিটিতে কারার ঐ লৌহ কপাট গানটির রিমেক করে এরইমধ্যে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সুরকার, সংগীতশিল্পী এ. আর রহমানকে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ বা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে তৈরি হওয়া এই ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছে বিদ্রোহী কবির লেখা এই গানটি। বাঙালির আবেগ জড়িয়ে রয়েছে বিদ্রোহী কবির এই গানের সঙ্গে। সেই গানেই নতুনভাবে সুর সংযোজন করতে গিয়ে গানের সুর পুরোপুরি বদলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এ. আর রহমানের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়তেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।

এ আর রহমানের কারার ওই লৌহ কপাট গানের রিমেক শুনে বেজায় ক্ষুব্ধ কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি খিলখিল কাজী (কাজী সব্যসাচীর কন্যা)। এ আর রহমানের মত একজন প্রথিতযশা সুরকার কিভাবে এই কাজ করতে পারলেন সেটাই ভেবে উঠতে পারছেন না তিনি।

এদিনের সংবাদ সম্মেলন থেকে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে খিলখিল বলেন কারার ঐ লৌহ কপাট নিয়ে সুরকার যে কাজটি করেছেন, সেটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। তিনি মুম্বাইয়ের মতো জায়গায় গিয়ে কাজ করতে পারেন, বড় শিল্পী হতে পারেন কিন্তু কাজী নজরুল ইসলামকে ছাপিয়ে নয়। তিনি কি ভেবেছিলেন? যে এই গানে নিজের সুর দিয়ে কাজী নজরুল ইসলামকে ছাপিয়ে যাবেন? তিনি যে আদৌও সেই কাজটা করতে পারলেন না, আজকের এই প্রতিবাদই তার প্রমাণ। কাজী নজরুল ইসলামকে ছাপিয়ে কেউ উঠতে পারবেন না। তার গানে কেউ করাঘাত করতে পারবে না।

এই গর্হিত কাজের জন্য প্রয়াত সংগীতশিল্পী কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজী এবং তার বড় ছেলে কাজী অনির্বাণকেই দায়ী করেছেন খিলখিল কাজী। তিনি বলেন যারা এই গান করার অনুমতি দিয়েছিলেন- কাজী অনির্বাণ এবং কল্যাণী কাজী- তারাই মূলত দায়ী। তবে পুরো পরিবারের ওপর এর দায় বর্তায় না।

নজরুলের নাতনি খিলখিলের অভিযোগ অনির্বাণের কাছে কবির অজস্র সৃষ্টি পড়ে আছে। তিনি তা দেখাচ্ছেন না। তিনি সেগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করছেন। এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। আমি সরকারের কাছে আবেদন করব যে, কাজী অনির্বাণ’এর কাছে কবির যেসব পুরস্কার, লেখা, সৃষ্টি সংগ্রহীত আছে সেগুলো তার কাছ থেকে নিয়ে আর্কাইভ করে সেখানে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। যাতে সাধারণ মানুষ সেগুলো দেখার সুযোগ পায়।

এদিনের সংবাদ সম্মেলনে অরিন্দম কাজী, তার চাচাতো বোন খিলখিল কাজী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অরিন্দমের স্ত্রী সুপর্ণা ভৌমিক, তাদের দুই সন্তান অভিপ্সা ও অনুরাগ কাজী।

এ.আর রহমানের এই রিমেক গান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জনপ্রিয় বাঙালি গায়িকা হৈমন্তী শুক্লা, লোপামুদ্রা মিত্র, অনিন্দ্য চ্যাটার্জি, পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীরসহ গুণী শিল্পীরা।

ডিডি/এমএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।