দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

স্বর্ণযুগে কর্মীদের স্বাগত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২৩ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২৩
প্রতীকী ছবি

সবাই প্রায় এক বাক্যে স্বীকার করবে ২০১০ সাল ছিল কর্মীদের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময়। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের নৃবিজ্ঞানী ডেভিড গ্রেবার, উদ্দেশ্যহীন কাজকে বর্ণনা করার জন্য ‘বুলশিট চাকরি’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। ২০০৭-২০০৮ সালের চরম অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগে। ধনী দেশগুলোর শ্রম শক্তির প্রায় সাত শতাংশের সম্পূর্ণভাবে কাজের অভাব ছিল। তখন মজুরিও কম ছিল। দেখা দিয়েছিল মজুরি বৈষম্য।

কিন্তু সেই পরিস্থিতির এখন অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে, ধনী দেশগুলোতে শ্রমিকদের জন্য এখন স্বর্ণযুগ। কর্মী খুঁজে পাওয়া এখন কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কর্মী চাহিদা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বিশেষ করে ম্যানুয়ালখাতে। যেখানে প্রযুক্তি দিয়ে ঘাটতি পূরণ সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন>২০২৪ সালেও শক্তিশালী থাকবে ধনী দেশের শ্রমবাজার

অর্থনীতিতে চাঙা রাখতে সরকারগুলো এখাতে ব্যয় বাড়াচ্ছে। উচ্চ মজুরি ব্যবস্থাকেও সমর্থন দেওয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অদক্ষ কর্মীরাও এখন বেশি উৎপাদন করতে পারে। এতে তাদের মজুরিও বাড়ছে। তাছাড়া এমন ব্যবস্থায় অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছেন, বিশেষ করে যেখানে কর্মীর ঘাটতি রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে মজুরি আরও বাড়তে পারে। এতে পুরো শ্রমবাজারে একটি বড় পরিবর্তন আসবে।

বর্তমানে চীনের কর্মক্ষম জনসংখ্যার সংখ্যা কমছে উল্লেখযোগ্যহারে। অন্যান্য দরিদ্র দেশগুলো শিল্প সক্ষমতা তৈরি করতে লড়াই করছে ও ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আউটসোর্সিংকে কম আকর্ষণীয় করে তুলছে। ধনী বিশ্বও শ্রমিকের অভাবের সম্মুখীন। ২০ থেকে ৫৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা এরই মধ্যে কমে গেছে।

সাম্প্রতিক ৪১টি দেশে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৭ শতাংশ কোম্পানি তাদের সম্পূর্ণ পদ পূর্ণ করতে পারছে না, যা ২০১৫ সালের চেয়ে দ্বিগুণ। পোলিশ শিল্প সংস্থাগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ জানিয়েছে, শ্রমিকের ঘাটতি উৎপাদন বন্ধ রাখার অন্যতম প্রধান কারণ। বাস ও ট্রাক ড্রাইভারের অভাবে জার্মানিতে গণপরিবহন সার্ভিসের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী ঘাটতি দূর করতে বয়স্করা পদে থেকে যাচ্ছেন। দেশটিতে ৫৫ থেকে ৭৯ বছর বয়সী কর্মীর সংখ্যাও এক দশক আগের চেয়ে বেড়েছে।

কর্মীরা এতটাই মূল্যবান হয়ে উঠছে যে কোম্পানিগুলো তাদের ছাড়তে চাইছে না। আমেরিকার ক্ষুদ্র কোম্পানিগুলোতে চালানো জরিপে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশের বেশি চাইছে যতটা সম্ভব কর্মীদের ধরে রাখতে। গত বছর থেকেই জার্মানির অর্থনীতি বেশি ভালো যাচ্ছে না। কোম্পানিগুলো সাত লাখের বেশি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রেখেছে, যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

দেশটিতে বেকারত্বের হার মাত্র ৩ শতাংশ। কর্মী ঘাটতি মেটাতে ধনী দেশগুলো ব্যাপকভাবে অভিবাসী গ্রহণ করছে। দেশগুলোতে বিদেশি নাগরিকদের জনসংখ্যা বাড়ছে ব্যাপকভাবে। তবে তাও এখন চাহিদার তুলনায় কম।

আরও পড়ুন>২০২৪ সালে তাপপ্রবাহ আরও বাড়তে পারে

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য একটি ভালো সময় বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সসহ ওইসিডিভুক্ত দেশগুলো সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতির কথা মাথায় রেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে এমনকি তারা বেতনও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাছাড়া ধনীদেশগুলো চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে ও গ্রিন ট্র্যানজিশনখাতে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। এতে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।

সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রের ফলাফলে দেখা গেছে, মার্কিন কঠোর শ্রমবাজার নীতি দ্রুত মজুরি বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করছে। কর্মীরা ভালো বেতনের জন্য চাকরি পরিবর্তন করছে।এতে দরিদ্র কর্মচারীরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছে।

যেসবখাতে কর্মী সংকট দেখা যাচ্ছে তার একটি তালিকা তৈরি করেছে জার্মানির সরকারি কর্মসংস্থান সংস্থা। ১৫২খাতের এই তালিকায় এবছর যুক্ত হয়েছে ৪৮টি। সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা যাচ্ছে টেকনিক্যালখাতে। বিশেষ করে নির্মাণ ও স্বাস্থ্যে। জাপান দক্ষকর্মীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে ভিসা দিচ্ছে। বাড়াচ্ছে মজুরিও।

ধনী বিশ্বে বেকারত্বের হার ৫ শতাংশেরও কম, যা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় কম। ধনী দেশগুলোর মধ্যে ইতালি ও পর্তুগালের মতো দেশে বেকারত্বের হার সবসময়ই বেশি থাকে। তবে এ দেশেও এখন বেকারত্বের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে।

শ্রমবাজারের এমন শক্তিশালী সূচকে অবাক অনেক অর্থনীতিবিদ। কোম্পানিগুলোতে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যেখানে লাখ লাখ চাকরি নাই হয়ে যাওয়ার কথা সেখানে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। জাপানের উৎপাদনখাতের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি রোবটের বিপরীতে কাজ করছে এক হাজার কর্মী।

এমএসএম

 

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।