বিসিএস জয় করতে নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে: এমদাদুল হক

আনিসুল ইসলাম নাঈম
আনিসুল ইসলাম নাঈম আনিসুল ইসলাম নাঈম , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৪:৪৮ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
ফাইল ছবি

মো. এমদাদুল হক সরকার কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার সন্তান। গ্রামেই তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা। তিনি মহিচাইল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেন। এরপর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখানে ইংরেজি বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

সম্প্রতি তিনি ৪৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গল্প, পড়াশোনা এবং নতুনদের পরামর্শ নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম

জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বলুন—
মো. এমদাদুল হক সরকার: আমার গ্রামের বাড়ি বামুটিয়া। এটি কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলায়। এসএসসি পরীক্ষা গ্রাম থেকেই সম্পন্ন করেছি। পরিবারে ছোট হওয়ায় সবার আদরের কমতি ছিল না। বাবা ছোটবেলা থেকেই আমাকে ও বড় ভাই-বোনদের পড়াশোনা ও শিক্ষামূলক কাজে অনুপ্রেরণা দিতেন। স্বপ্ন দেখাতেন বড় হতে হবে, মানুষের মঙ্গলে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে।

জাগো নিউজ: আপনার পড়াশোনা সম্পর্কে বলুন—
মো. এমদাদুল হক সরকার: বাবার হাত ধরে ৬ বছর বয়সে বামুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা চলে। পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাই। এরপর মহিচাইল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এখানে অষ্টম শ্রেণিতে সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত হই। একই স্কুলে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত হই। এরপর চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হই। এই কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইএসসি পাস করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সেখান থেকে ইংরেজি বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করি।

জাগো নিউজ: বিসিএস দেবেন এমন ভাবনা মাথায় এলো কিভাবে?
মো. এমদাদুল হক সরকার: আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই; তখন বড় ভাই মাত্র চাকরির প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তার কাছ থেকেই প্রথম বিসিএস সম্পর্কে জানতে পারি। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই-আপুদের ক্যাডার হওয়ার গল্প শুনতাম। তাদের দেখে মনে মনে ভাবতাম, আমিও একদিন বিসিএস ক্যাডার হবো এবং দেশের জন্য অবদান রাখবো।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কিভাবে নিয়েছেন?
মো. এমদাদুল হক সরকার: অনার্সের পর বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করি। করোনার পুরো সময়টা কাজে লাগাই। প্রথমে সিলেবাস বোঝার চেষ্টা করি। প্রশ্ন ব্যাংক থেকে প্রশ্ন সম্পর্কে আইডিয়া নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করি। প্রিলিমিনারির জন্য প্রতি বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিয়েছি। সিলেবাসের গুরুত্বপূর্ণ টপিকসমূহ ভালোভাবে আয়ত্ত করার চেষ্টা করেছি। এসএসসি ও এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে হওয়ায় বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে প্রস্তুতি সহজ হয়েছে। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার ও চার ভাই-বোন একসাথে পড়াশোনা করায় বাবার পক্ষে খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হতো। তাই এসএসসির পর থেকে পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য নিয়মিত টিউশনি করতাম। ফলে বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি, গণিত এবং বিজ্ঞান বিষয়ে চর্চা হতো। তাছাড়া নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ও পত্রিকায় লেখালেখি করা লিখিত পরীক্ষায় কাজে দিয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় টার্গেট থাকতো সব প্রশ্নের উত্তর করে আসা। পরীক্ষার আগে মডেল টেস্ট দিয়েছি। টাইম ম্যানেজমেন্টে গুরুত্ব দিয়েছি। ভাইভার আগে কয়েকজন মিলে গ্রুপ করে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতাম। ভাইভার প্রশ্নগুলো সলভ করতাম। ৪৩তম বিসিএস ছিল আমার জীবনের প্রথম বিসিএস। তখন অ্যাপেয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হই। মনে মনে পণ করি, যেভাবেই হোক আমাকে প্রিলিমিনারি পাস করতে হবে। তখন থেকে পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করি। পরপর তিনটি বিসিএস প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হই। ৪৪তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছি। ফাইনালি ৪৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। সম্প্রতি ৪৬তম বিসিএসেও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।

আরও পড়ুন
চাকরি ও ক্যারিয়ারের মধ্যে পার্থক্য কী? 
বিদেশে উচ্চশিক্ষায় কভার লেটারের গুরুত্ব 

জাগো নিউজ: ৪৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেয়ে অনুভূতি কেমন ছিল?
মো. এমদাদুল হক সরকার: রেজাল্টের রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ এক বন্ধুর ফোনে ঘুম ভাঙে। ঘুমঘুম চোখে রেজাল্ট শীটে প্রশাসন ক্যাডারে নিজের রোল দেখতে পেয়ে বিশ্বাস হচ্ছিল না। স্বপ্ন দেখছি না তো! এরপর কয়েকবার চেক করে শিওর হলাম। পরিবারকে বিষয়টি জানানোর পর তারা আপ্লুত হয়ে পড়েন। আসলে এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়! নিজের, বাবা-মা ও বড় ভাইয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে ধন্য মনে হচ্ছে। পরিবার সর্বদা পাশে ছিল। তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ। এ জার্নিতে প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত অনেক শিক্ষক অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হুসাইন স্যার ছোটবেলা থেকে দিকনির্দেশনা দিতেন। আমার সব শিক্ষাগুরুকে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশেষভাবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগকে।

জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
মো. এমদাদুল হক সরকার: পড়াশোনা থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বড় ভাই ও বাবা সর্বদা পাশে ছিলেন। বড় ভাই সর্বদা অনুপ্রেরণা দিতেন, পড়াশোনায় সাহায্য করতেন এবং দিকনির্দেশনা দিতেন। সাফল্যের পেছনে পরিবার, সহপাঠী ও শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের অবদান আছে। তাদের প্রতি আজীবন শ্রদ্ধা থাকবে।

জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
মো. এমদাদুল হক সরকার: প্রথম কাজ সিলেবাস ভালো করে বুঝতে হবে। প্রশ্ন ব্যাংক থেকে বিগত প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করে প্রশ্ন সম্পর্কে আইডিয়া নিতে হবে। প্রতিটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে অঙ্ক এবং ইংরেজিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়া জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি রাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য, ইতিহাস বিষয়ক বই পড়া যেতে পারে। সর্বোপরি নিজের লক্ষ্যে অটুট থাকতে হবে।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মো. এমদাদুল হক সরকার: ভবিষ্যতে দেশের সেবায় নিজেকে উজাড় করে দিতে চাই। পাশাপাশি মানবিক প্রশাসক হয়ে কাজ করবো। এজন্য সবার কাছে দোয়াপ্রার্থী।

এসইউ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।